পৃথক গণপিটুনিতে সারা দেশে ৯ ডাকাত নিহত

পৃথক গণপিটুনিতে নরসিংদীর ভাটপাড়াসহ সারা দেশে ৯ ডাকাত নিহত হয়েছে।  এছাড়া ঈশ্বরদীর রায়পুর উপজেলায় মুজিবুর রহমান (৩৫) নামে এক ডাকাত গরু চুরি করতে গিয়ে আহত হয়ে গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পাশাপাশি জিয়ানগর উপজেলার সিদ্দিকুর রহমান রাসেল নামে আরও এক ডাকাত গণপিটুনিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একইদিন মারা যায়। রোববার গভীর রাতে নরসিংদী সদর থানার পাঁচদোনা ইউনিয়নের ভাটপাড়ায় ডাকাতির চেষ্টাকালে গণপিটুনিতে ৭ ডাকাত নিহত ও এক ডাকাত আহত হওয়ায় মাধবদীর বিভিন্ন ইউনিয়নবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গণপিটুনিতে ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  একটি হত্যা ও  অপরটি ডাকাতি মামলা। সহকারী পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ জানান, নিহতদের সবাই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ১ জনের নাম দুলাল মিয়া (৪০)। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় রহিম মিয়া (২৪) নামে আরও এক ডাকাতকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নরসিংদী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাড়িও নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় বলে জানা গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পাঁচদোনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল হাই মোমিন ও মিন্নত আলী জানান, রোববার গভীর রাতে পাঁচদোনা ইউনিয়নের ভাটপাড়া (চাকশাল) গ্রামের এরশাদ মুন্সীর বাড়িতে ১৫-২০ জনের একদল ডাকাত হানা দেয়। এ সময় বাড়ির লোকজনদের ডাক-চিৎকার শুনে স্থানীয় মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দিলে আশপাশের শত শত মানুষ চারদিক থেকে বের হয়ে আসে। এ সময় ডাকাত দল কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আলেক চান (২৬) নামে চাকশাল গ্রামের ১ জন আহত হন। পরে উত্তেজিত জনতা ধাওয়া করে ধরে ডাকাতদের গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হয়। তবে এত বড় হতাহতের ঘটনা ঘটলেও রাতে কেন পুলিশকে খবর দেয়া হয়নি এ ব্যাপারে স্থানীয়দের কাছ থেকে কোন জবাব পাওয়া যায়নি। এদিকে  গত ১ মাসে মাধবদীর বিভিন্ন ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। তাদের অভিযোগ, জেলাজুড়ে অবাধে যাত্রা, জুয়া, মাদক বিক্রি, অশ্লীল নৃত্যসহ আবাসিক হোটেলগুলোতে অসামাজিক কাজ বেড়ে যাওয়ার ফলে চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে চলেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণপিটুনিতে ৭ ডাকাত নিহত হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আবুল কাশেমসহ পাঁচদোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ওসি জানান, ওই এলাকার প্রায় ২ কিলোমিটারের ফসলি জমিতে ডাকাতদের লাশগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর আশপাশের উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় করতে থাকে। পুলিশ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী  হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এদিকে ৭ জন ডাকাত নিহতের  ঘটনায় গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নরসিংদী মডেল থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি ডাকাতি মামলা ও অন্যটি হত্যা মামলা। পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা ও ভাটপাড়া গ্রামের এরশাদ মুন্সীর ছেলে আনিছুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। এদিকে ৭ মরদেহের পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নরসিংদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোশারফ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত লাশ নিয়ে আমরা অপেক্ষ করবো। যদি পরিচয় পাওয়া না যায় তা হলে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.