বিরোধিতার মুখে ময়মনসিংহ বিভাগের কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ

ময়মনসিংহকে দেশের অষ্টম বিভাগ করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ফরিদপুর এবং বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী মিলিয়ে আরও দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ দুই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনা দেয়ার পরপরই শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু মন্ত্রিসভাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কিশোরগঞ্জ দেশের একটি বৃহৎ জেলা। ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করা হলে আমরা ওই বিভাগের সঙ্গে যেতে চাই না। ঢাকা বিভাগের সঙ্গেই থাকতে চাই। কারণ কিশোরগঞ্জের মূল পয়েন্ট থেকে ঢাকার দূরত্ব কম। ময়মনসিংহের দূরত্ব অনেক বেশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশা করছি আপনি বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী কোন জবাব দেননি। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সায় ছিল সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর। কিন্তু তিনি মন্ত্রিসভা বৈঠকে কিছু বলেননি। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিভাগের ময়মনসিংহকে প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়। এখন ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। শুরুতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে কমিটি গঠন করবে। সেই কমিটি সুপারিশসহ প্রস্তাবনা তৈরি করে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, নতুন বিভাগে কোন কোন জেলা, কোন কোন দপ্তর স্থাপন হবে, কত জনসংখ্যা থাকবে- সেসব নিয়ে নিকারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। যদিও এখন আগের মতো নতুন বিভাগ, জেলা, উপজেলা গঠনের প্রয়োজন প্রকট নয়। ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য জেলা-বিভাগ-উপজেলার দূরত্বও কমে গেছে। কিন্তু সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের ক্ষমতায়ন বিশ্বাস করে এবং নাগরিক সেবা জনগণের  দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ায় বিশ্বাস করে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ময়মনসিংহকে বিভাগের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঢাকা বিভাগকে ভেঙে ফরিদপুর এবং চট্টগ্রামকে ভেঙে নোয়াখালী ও কুমিল্লা নিয়ে আরেকটি বিভাগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ময়মনসিংহ ছাড়াও আরও দুটি বিভাগ গঠন করা যায় কি না- এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা এসেছে মন্ত্রিসভায়। তাই আগামী দিনে ঢাকা বিভাগকে বিভক্ত করে ফরিদপুরে এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা নিয়ে আরেকটি বিভাগ করা যায় কি না- তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। এসব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নিকারে। মন্ত্রিসভা কমিটি করে বিস্তারিত প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হবে। নিকারের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী। নতুন বিভাগের হেড কোয়ার্টার কোথায় হবে- তাও সিদ্ধান্ত নেবে নিকার। তিনি জানান, যারা প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাস করে তাদের জন্য নতুন বিভাগের উদ্যোগ ভাল খবর। এদিকে গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে ঢাকাকে ভেঙে তিনটি বিভাগ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন তিনি বলেন, মানুষকে সত্যিকারভাবে সেবা দিতে গেলে, উন্নয়ন করতে গেলে সবচেয়ে ভাল হতো যদি আমরা ঢাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে শাস্তির বিধান যুগোপযোগী করে চা আইন-২০১৫ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনটি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শাস্তির বিধান আগে বিস্তৃতভাবে বলা ছিল না, শাস্তির মাত্রাও কম ছিল। এটি যুগোপযোগী করা হয়েছে। আইন ভঙ্গে শাস্তির বিধান ন্যূনতম ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। জরিমানার বিধান আগেও ছিল, তা এবারও রাখা হচ্ছে। কি পরিমাণ জরিমানা হবে, তা ভেটিং-এর সময় চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, মূলত সামরিক শাসনামলের ‘টি অর্ডিনেন্স ১৯৭৭’ এবং এবং এরপর ‘টি অ্যামেন্ডমেন্ট অর্ডিনেন্স ১৯৮৬’ অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করার জন্যই এ উদ্যোগ। বাংলাদেশে চা আবাদের জন্য ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমি বরাদ্দ রয়েছে এবং ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। চা বাগানের বেশিরভাগ বেসরকারি মালিকানার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলোকে প্রমোট ও রেগুলেট করার জন্য সরকার চা বোর্ড করেছে, চা  বোর্ড কিভাবে কাজ করবে তা এ আইনে বলা হয়েছে। চা বোর্ডে একজন নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত হবেন, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার এর সদস্য রয়েছেন, সিলেট বিভাগের কমিশনারকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চা বিক্রির বিষয়টি আরও বিস্তারিত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগে শুধু নিলাম ছিল, নতুন আইনে চা বিক্রয় বিধান রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ
ছোট ছেলের মৃত্যুতে খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে ফিরে আসায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য লজ্জাবোধ করছেন বলেও মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসতে হলো, ঢুকতে দিল না, বেইজ্জতির ব্যাপার। সামান্য  সৌজন্যতা দেখানোর দরকার ছিল। তাও দেখাল না। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতির কথা জানা যায়। কয়েক জন মন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভায় প্রসঙ্গটি তোলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। শ্রম প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এতে সারা দেশের মানুষ আপনার প্রশংসা করেছে। প্রতিমন্ত্রীর কথার সঙ্গে মিলিয়ে মন্ত্রিসভার কয়েক সদস্য বলেন, আমরা মনে করছি সমব্যথা জানাতে ছুটে যাওয়া এবং ফিরে আসার কারণে রাজনৈতিকভাবে সরকার অনেক লাভবান হয়েছে। মুজিবুল হক চুন্নুর এমন কথা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যোগাযোগ করে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখলাম গেট বন্ধ। ছোট গেট দিয়ে ঢুকতে চেয়েছিলাম, ছোট গেটটিও তালাবদ্ধ। রাজনীতি করতে নয় একজন মা হয়ে আরেকজন মায়ের জন্য সমব্যথী হয়ে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলাম, ঢুকতে দিল না। এটা লজ্জার ব্যাপার। সামান্যতম সৌজন্যটুকু তো দেখলাম না। সেখানে বিএনপির অন্য নেতারাও তো ছিলেন, আমরা তাদের দেখিনি তা নয়। তারাও তো আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সৌজন্যতা না দেখানো ঠিক হয়নি বলে যে মন্তব্য করেছেন সেই কথার প্রসঙ্গ টেনে একাধিক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনার যাওয়া যথার্থ ছিল। আপনি অপমানিত হননি। উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আরাফাত রহমান কোকো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র। কোকোর মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই রাত সাড়ে আটটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সমবেদনা জানাতে যান। তখন খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখার কথা জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে। শেখ হাসিনা কিছুক্ষণ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যান।

No comments

Powered by Blogger.