আদিবাসী গ্রামে হামলা- ‘দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে’

(দিনাজপুরে সাঁওতাল আদিবাসীদের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন l ছবি: প্রথম আলো) দিনাজপুরের পার্বতীপুরে সাঁওতাল আদিবাসী গ্রামে হামলার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রাজধানীতে মানববন্ধন এবং দিনাজপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন। মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা, ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৭ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। সমতলের আদিবাসী লোকজনের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের কথা সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সমতল থেকে পাহাড়ে সংখ্যালঘু জাতিদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। দিনাজপুরে সংবাদ সম্মেলন: গত শনিবার পার্বতীপুরে আদিবাসীদের সঙ্গে ভূমিদস্যুদের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর ভূমিদস্যুরা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে আদিবাসীদের গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালিয়েছেন। আদিবাসীদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন ওই অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, পার্বতীপুর উপজেলার বড়দল সরকারপাড়ায় বিরোধপূর্ণ জমির আসল মালিক আদিবাসীরা। জহুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় ভূমিদস্যু অসৎ কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে ওই জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি বলেন, চিড়াকুটা গ্রামের একটি পরিবারের সঙ্গে অপর একটি পরিবারের বিেরাধ ছিল। যে যুবক নিহত হয়েছেন, তাঁকেও নিশ্চয়ই গ্রামের সব আদিবাসী মিলে মারেনি। তাহলে কেন পুরো একটি আদিবাসী গ্রামে এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো? সংবাদ সম্মেলনে চিড়াকুটা গ্রামে নিরীহ আদিবাসীদের ওপরে হামলার তীব্র নিন্দা এবং জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো আদিবাসী গ্রামে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তিবিধান, ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, আদিবাসী গ্রামটির নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন। পার্বতীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ দুদিন ধরে বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে গত শনিবার আদিবাসীদের বাড়িঘর থেকে লুট হয়ে যাওয়া বেশ কিছু গরু, ছাগল ও মালামাল পুলিশ উদ্ধার করে আদিবাসী মালিকদের হাতে তুলে দিয়েছে। আদিবাসীদের গ্রামে হামলা ও লুটপাটকারীদের তালিকা পুলিশ তৈরি করছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ২৪ জানুয়ারি পার্বতীপুর উপজেলার বড়দল সরকারপাড়া গ্রামে সাঁওতাল ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আদিবাসীদের ছোড়া তিরের আঘাতে শাফিউল ইসলাম (২০) নামের এক তরুণ নিহত হন। এ ঘটনার পর হাজারো নারী-পুরুষ আদিবাসীদের বাড়িঘরে ব্যাপকভাবে অগ্নিসংযোগ করে ও লুটপাট চালায়।

No comments

Powered by Blogger.