প্রথা ভাঙার চমক

প্রজাতন্ত্র দিবসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর নানা কারণে আলোচনা দুনিয়া জুড়ে। একদিকে ওবামা। অন্যদিকে মোদি। দু’জনই প্রথা ভাঙায় চমক দেখাচ্ছেন। দরুণ পালাম বিমানবন্দরের কথা-ই। তাবৎ নিরাপত্তা কর্তারা যখন তটস্থ। ঠিক তখন অকস্মাৎ হাজির মোদি। প্রটোকল সরিয়ে ওবামা দম্পতিকে চমকে দিয়ে শুধু স্বাগতই জানালেন না। করমর্দনেই না থেমে করলেন উষ্ণ আলিঙ্গন। হায়দরাবাদ হাউসের বাগানে হেঁটে এসে আড্ডার ফাঁকে ওবামাকে চা বানিয়ে খাওয়ালেন নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সরাসরি ‘বারাক’ বলে সম্বোধন করে মোদি। যৌথ বিবৃতিতেও তার রেশ থেকেছে। লেখা হলো হিন্দিতে ‘চলিয়ে সাথ সাথ।’ দু’নেতার বক্তৃতাতেও রয়েছে সম্পর্কের গাঢ় উষ্ণতার ছাপ। মোদির উদ্দেশে ওবামা বললেন, ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে দেখলাম আপনার জনপ্রিয়তা বলিউড তারকার মতো। মোদিকে লক্ষ্য করে বলে ওঠেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন কাল তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছেন। শুনে খারাপ লাগলো। আমিতো দিব্যি ঘন্টা পাঁচেক ঘুমিয়েছি। মোদি কুর্তা একটা পরার ইচ্ছা ছিল আমার। মোদিও কম যাননি। বাচন পটিয়সি মোদি বললেন, বারাক আর আমার রসায়নই ভারত আর আমেরিকাকে কাছে এনেছে। আমি বারাককে ফোন করে গপ্পো করি। ক্যামেরা না থাকলে আড্ডা দারুণ জমে! দু’জনের মধ্যে কি কথা হলো তা পর্দে মে রহেনে দো!
চুইংগাম চিবিয়ে আলোচনায় ওবামা
প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথির আসনে উপবিষ্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। উপভোগ করছেন চৌকস কুচকাওয়াজ। আর মনের আনন্দে চিবিয়ে চলেছেন চুইংগাম। সে দৃশ্য ধরা পড়লো ক্যামেরায়। মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ওবামার চুইংগাম চিবানোর ছবি। এ নিয়ে নানা আলোচনা। এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওবামাকে কিছু একটা বোঝাতে চেষ্টা করছেন আর ওবামা মুখ থেকে চুইংগামটা সরিয়ে ফেলছেন। গুরুত্বপূর্ণ কোন অনুষ্ঠান চলাকালে চুইংগাম চিবুতে ওবামাকে এবারই প্রথম দেখা গেছে তা নয়। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত অ্যাপেক সম্মেলনে চুইংগাম চিবুতে গিয়ে রীতিমতো বিপত্তিতেই পড়েছিলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে কঠোর সমালোচনা করতেও ছাড়েননি। ফ্রান্সে ২য় বিশ্বযুদ্ধ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও চুইংগাম চিবুতে গিয়ে ক্যামেরায় ধরা পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ডাক পাবার আশায় যশোদাবেন
এখনও তিনি অপেক্ষায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার সঙ্গে যখন তিনি ভোজনে ব্যস্ত তখন তার একটি ফোনকলের অপেক্ষায় তিনি। আর তিনি হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্ত্রী যশোদাবেন ছিমানলাল মোদি। গতরাতে যখন ওবামা-মিশেলের সঙ্গে মোদি নৈশভোজে মিলিত হন তখন তার পাশে ছিলেন না যশোদাবেন। তিনি কুমারী বধূর মতোই দূর থেকে টেলিভিশনে দেখেছেন সে দৃশ্য। নরেন্দ্র মোদি কিশোর বয়সে বিয়ে করেছিলেন তাকে। এখন মোদির বয়স ৬৪ বছর। গত লোকসভা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি সেই বিয়ের কথা গোপন রেখেছিলেন। ততদিনে গঙ্গার পানি গড়িয়েছে বহুদূর। সে পানি সাগরে পৌঁছে হয়তো মেঘ হয়েছে। তা থেকে বৃষ্টি ঝরে আবার গঙ্গায় মিশেছে। কিন্তু যশোদাবেন-মোদির আর মিলন হয় নি। নির্বাচনের আগে বিয়ের কথা স্বীকার করলেও তিনি এখনও কাছে ডেকে নেন নি যশোদাবেনকে। এরই মধ্যে তিনি যশোদাবেন স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গিয়েছেন। এখনও আশা করেন, একদিন মোদি তাকে ফোন করবেন। কাছে ডেকে নেবেন। যশোদাবেন বলেন, যদি তিনি আমাকে কাছে ডাকেন, আমি যাবো। আমি টেলিভিশনে তার সব বক্তব্য শুনি। তাকে কথা বলতে শুনে আমার কাছে খুব ভাল লাগে। তিনি যেন জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণাঙ্গভাবে রাখতে পারেন আমি তা-ই চাই। ঈশ্বরের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রদর্শনীতে স্থান পায়নি পশ্চিমবঙ্গ
গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে সেরা প্রদর্শনীর পুরস্কার পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। আর এবার তাদের প্রদর্শনী স্থান পায়নি ‘রাজপথে’। শেষ মুহূর্তে বাদ দেয়া হয় ‘কন্যা শ্রি’ থিমে প্রস্তুত করা পশ্চিমবঙ্গের প্রদর্শনী। আর এতে বেজায় চটেছেন মমতা ব্যানার্জির সরকার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূলক কংগ্রেসের এক সংসদ সদস্য ডেরেক ও ব্রাইয়েন তার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন এক টুইট বার্তায়। তিনি লিখেছেন, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও প্রজাতন্ত্র দিবসে কন্যা শ্রি  উদ্যোগ তুলে ধরে তৈরি বাংলার প্রদর্শনী প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া হয়নি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত আর হতাশ। পশ্চিমবঙ্গের কর্মকর্তাদের দাবি তাদের প্রদর্শনী একেবারে শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। জনকল্যাণ কর্মসূচির  ওপর ‘কন্যা শ্রি’ শীর্ষক তাদের প্রদর্শনীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদর্শনীর সাদৃশ্য ছিল বলে তা বাতিল করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পাড়াও’ (আপনার মেয়েকে বাঁচান, আপনার মেয়েকে পড়ান) শীর্ষক একটি স্কিম চালু করেন। তার ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রদর্শনী তৈরি করেছে। বার্ষিক এ কুচকাওয়াজের আয়োজক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গকে জানিয়েছে, কোন রাজ্যের প্রদর্শনীতে ওই রাজ্যের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরতে হবে; শুধুমাত্র একটি স্কিমকে নয়। বিজেপি শাসিত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর যেসব রাজ্য প্রদর্শনী থেকে বাদ পড়েছে সেগুলো হলো, বিহার, তামিলনাডু, উড়িষ্যা, কেরালা, পাঞ্জাব, দিল্লি ও নাগাল্যান্ড।
নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইসলামাবাদ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইসলামাবাদ। নয়াদিল্লি যখন ওবামাকে রাজকীয় আতিথেয়তায় বরণ করে নিয়েছে, তখন পাকিস্তান আশা প্রকাশ করেছে, তার এ সফর দক্ষিণ এশিয়ার উত্তেজনা প্রশমিত করতে সহায়ক হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আঞ্চলিক প্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশিত লক্ষ্য পাকিস্তান-ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক ছাড়া অর্জিত হবে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
নয়াদিল্লিতে নজিরবিহীন অভ্যর্থনায় বরণ করা হয়েছে বারাক ওবামাকে। ভারতের দু’বার সফর করা প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট তিনি। তিন দিনের এ সফরে ওবামার কর্মসূচি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের কর্মকর্তারা আশা করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) কোন প্রকার উস্কানি ছাড়াই ভারতীয় বাহিনীর গুলি ছোড়ার ইস্যুটি উত্থাপন করবেন। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যাশা, প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে থমকে যাওয়া শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উৎসাহিত করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে নয়াদিল্লিকে দায়ী করে আসছে ইসলামাবাদ। গত বছরের শুরুতে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যোগ দেয়ার পর সম্ভাবনাময় এক সূচনা হয়েছিল। কিন্তু, একে অপরকে দায়ী করার অব্যাহত রীতি আর আস্থার ঘাটতি, পারমাণবিক ক্ষমতাধর এ দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে। সারতাজ আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সাম্প্রতিক ইসলামাবাদ সফরে তিনি পাকিস্তানের উদ্বেগের বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হন। এর মধ্যে একটি হলো নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের আগ্রাসন।

No comments

Powered by Blogger.