ঢাকায় ২০ দিনে ১৪৯ মামলা গ্রেপ্তার ৭৮৯

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে রাজধানীতে গত ২০ দিনে বিএনপি-জামায়াতের ৭৮৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১৪৯টি মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে গত শনিবার রাত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। প্রথম দিনে যাত্রাবাড়ী, কদমতলী ও ডেমরা থানার কিছু অংশে অভিযান চালানো হয়। রোববার রাতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, অভিযান চলছে। নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে কোন ছাড় নেই। প্রত্যেক নাশকতাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ২৯ জন দগ্ধ হওয়ার পর ঢাকায় যৌথ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। যৌথ অভিযানের তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ইব্রাহীম ফাতেমী। যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রথম দিনের অভিযানেই ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ২২ জনকে। এর আগে গত ৫ই জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা অবরোধে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে ১০৬ জনকে নাশকতাকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মী ৬৭ জন আর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ৩৯ জন। এর বাইরে গত ২০ দিনে মোট ২৮ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মী ২৬ জন ও জাময়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ২ জন। পুলিশ সূত্র জানায়, নাশকতার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি নাশকতা নিবারণের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ৪৭৮ জন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, বাকি ১৫৫ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। পুলিশ সূত্র জানায়, বিএনপির ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ আক্রান্তের ঘটনায় ১৪৯টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার যাত্রাবাড়ী থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়, যার এজাহারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ১৮ জন নেতা ও স্থানীয় ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ডিএমপির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রলবোমা হামালায় ৩১ জন দগ্ধ হওয়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যৌথ অভিযানের বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করা হচ্ছে। কবে কোন এলাকায় অভিযান চালানো হবে তা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের ক্রাইম জোনের একাধিক তালিকা হাতে নিয়ে অভিযানে নামা হচ্ছে। অভিযানের সঙ্গে থাকা ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যৌথ অভিযানের সময় নির্দিষ্ট এলাকা প্রথমে ঘেরাও করে রাখা হয়। পরে তালিকা ও ঠিকানা অনুযায় বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে মেস বাড়ি ও আবাসিক হোটেলগুলোয় বিশেষ নজরদারি করে অভিযান চালানো হচ্ছে। রোববার রাতে ২২ জন গ্রেপ্তার: পুলিশ সূত্র জানায়, গত রোববার সকাল ৬টা থেকে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর লালবাগ, বংশাল, পল্টন, ডেমরা, তেজগাঁও, রূপনগর, ভাষানটেক, বনানী, বাড্ডা, ভাটারা ও উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে লালবাগের হুমায়ুন কবির, বংশালের জাহাঙ্গীর হোসেন, মতিঝিল থেকে জাকির হোসেন, আবদুল মহিদ, সালাউদ্দিন ওরফে নাদিম, পল্টন থেকে লুৎফর রহমান, ডেমরা থেকে মোকাদ্দেছ আলম ও মফিজুর, শ্যামপুর থেকে ফরিদুল ইসলাম বিপ্লব ও আলীম আল বারী ওরফে জুয়েল, তেজগাঁও থেকে আবদুর রব ওরফে মুন, রূপনগর থেকে আবুল হাসনাত ও জাহাঙ্গীর কবীর, পল্লবী থেকে বেলাল হোসেন, ভাষানটেক থেকে ফয়জুর ইসলাম, কবির, আয়জুর রহমান, বনানী থেকে জাহাঙ্গীর আলম, বাড্ডা থেকে মনির ও রকিব, ভাটারা থেকে আকবর হোসেন, উত্তরা পূর্ব এলাকা থেকে আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আয়জুর রহমান কাফরুল থানা জামায়াতের রোকন, বেলাল হোসেন মোটর শ্রমিক দলের সভাপতি, আলীম আল বারী ওরফে জুয়েল ১৪৭ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি, আবদুুর  রউফ ওরফে মুন ৩৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি।

No comments

Powered by Blogger.