রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য ভবন- সংস্কারের নামে পুরাকীর্তি নষ্ট by মাসুদ আলম

(খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি। সংস্কারের পর (বাঁয়ে) ও আগে l ছবি: প্রথম আলো) খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনীর স্মৃতিবিজড়িত ভবন। এটি বর্তমানে রবীন্দ্র কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ উঠেছে, সংস্কারের নামে কালের সাক্ষী এই ভবনটির মৌলিকত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার একজন কর্মকর্তা জানান, ২০০৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন ভবনটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে। ২০১০ সালের ২৭ জুলাই ৪০ শতক জমিও বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ২০১০-২০১১ এবং ২০১১-২০১২ অর্থবছরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির সংস্কার-সংরক্ষণ করে। ভবনটির খুব কাছেই কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের গ্রামের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘সবকিছু অবিকৃত রেখেই সংস্কার করতে হবে। মৌল পরিবর্তন করা যাবে না। আগে যেভাবে ভবনটিকে দেখেছি, এখন সেভাবে নেই। আগের রং পরিবর্তন করা হয়েছে। সংস্কারে ভবনটির প্রত্নতাত্ত্বিক মৌলিকত্বের ক্ষতি হয়েছে।’
খুলনার বিএল কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শফিউল্লাহ সরদার বলেন, ভবনটির প্রত্নতাত্ত্বিক নান্দনিকতা নষ্ট হয়েছে। সাংবাদিক বিধান দাশগুপ্ত বলেন, ‘দেয়ালের কারুকাজ ঠিকমতো করা হয়নি। আগের লাল রং পরিবর্তন করে সাদা রং করা হয়েছে। সিমেন্টের ব্যবহার বেশি করা হয়েছে। এতে ভবনটির কিছুটা বিকৃতি ঘটেছে।’
তবেপ্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক মো. আমিরুজ্জামান বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যবিধি পুরোপুরি অনুসরণ করে ভবনটি সংস্কার-সংরক্ষণ করা হয়েছে।ভবনটি আগে সাদা রঙের ছিল। সেই রং উঠে লাল রং ধারণ করে। তাই আগের সাদা রঙের নমুনা ধরেই ভবনটিতে রং করা হয়েছে। এ ছাড়া খনন করে একটি সীমানাপ্রাচীর পাওয়া গেছে। সেটি ধরেই তাঁরা একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন।
রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্ত কুমার পালের রবীন্দ্রজীবনীর বিবরণ অনুযায়ী, ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মৃণালিনী দেবীর বিয়ে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বেণীমাধব রায়চৌধুরী দেশভাগেরবহু আগে থেকে কলকাতায় বসবাস করতেন। তাঁর একমাত্র ছেলে নগেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী ওরফে ফেলুবাবু জমিদারি দেখার জন্য মাঝেমধ্যে দক্ষিণডিহিতে আসতেন। ফেলুবাবুর ছেলেরা তখন কেউ দক্ষিণডিহি আবার কেউ কলকাতায় বসবাস করতেন। ১৯৪০ সালে এ পরিবারের সবাই দেশত্যাগ করেন।এর আগে ফেলুবাবু ও তাঁর স্ত্রী বাড়িসহ আশপাশের ৭ দশমিক ৮ একর জমি বাদে সমুদয় সম্পত্তি দক্ষিণডিহির আরেক জমিদার বিজনকৃষ্ণ দাসকে বন্দোবস্ত দেন। বাড়ি ও সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় নায়েব নবকুমার মুস্তাফিকে। ১৯৬৫ সালে বিজনকৃষ্ণ দাস দেশত্যাগ করেন। পরে নায়েব নবকুমার মুস্তাফীর আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বেদখল হয়ে যায় বাড়িটি। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৫ সালে বাড়িটি উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় রবীন্দ্র কমপ্লেক্সের।

No comments

Powered by Blogger.