বিচারের জন্য আর কত অপেক্ষা?

(মানিক সাহা হত্যাকাণ্ড) সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার বিচারকাজ এক দশকে শেষ করা যায়নি। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে হাজির করতে না পারা, বারবার আদালত পরিবর্তনসহ নানবিধ কারণে মামলাটির নিষ্পত্তি হচ্ছে না। তদুপরি হত্যাকারীদের মধ্যে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গও থাকতে পারেন। হয়তো এই নির্ভীক সাংবাদিকের কোনো অনুসন্ধানী রিপোর্ট তাকে হত্যার টার্গেটে পরিণত করেছিল। তবে পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে প্রধানত এজন্য ওই অঞ্চলের চরমপন্থিদের দায়ী করা হয়েছে। আর এটাই যদি সত্যি হয়ে থাকে তা হলে কাদের সিদ্ধান্তে, কারা তাকে হত্যা করেছিল, তাদের ঠিকুজিও পুলিশের জানা থাকার কথা। তারপরও অপরাধীরা কেন হত্যাকাণ্ডের এক দশক পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে তা রহস্যজনক। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত তার স্মরণসভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হত্যাকাণ্ডটির উপযুক্ত তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি করেছেন। কিন্তু বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করলেই যে এর বিচার দ্রুত পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা কী? আমাদের সমাজে অপরাধীরাই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এবং তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাধরদের সহায়তা পেয়ে থাকে। এ কারণেই অনেক অপরাধের বিচার এ দেশে পাওয়া যায় না। সাংবাদিকরা যেহেতু সমাজে সম্মান পেয়ে থাকলেও সেই অর্থে ক্ষমতাধর নন এবং যেহেতু ক্ষমতাধরদের অনেক ক্ষেত্রেই চক্ষুশূল হয়ে থাকেন, তাই সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজের উপরতলায় কাঁপন ধরায় না। আর সামাজিকভাবে গণতান্ত্রিকতা প্র্যাকটিস না হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ন্যায়বিচার প্রশ্নে এখানে অনুচ্চ থাকে। সে কারণে মানিক সাহার মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক হত্যা হলে তার বিচার শেষ হয় না। আমাদের দুর্ভাগ্য, এ দেশে অনেক সাংবাদিক হত্যার শিকার হলেও একমাত্র সমকালের ফরিদপুর ব্যুরোপ্রধান গৌতম দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করা গেছে। এটিও নিরন্তর চেষ্টা এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে সম্ভব হয়েছে। আমরা অবিলম্বে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডসহ সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডেরও বিচার চাই। দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনেই এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.