ওলটপালট হয়ে গেল ওদের জীবন

শেষ হয়েছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। গঠন করা হয়েছে মন্ত্রিসভাও। তবে যাদের নষ্ট চোখ, ভাঙা হাতের ওপর দিয়ে এ সরকার গঠন করা হলো, তাদের সামনে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামে ককটেলের বিস্ফোরণে চোখ হারিয়েছে শিশু অনিক। আবার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওই দিন সাতকানিয়ায় জামায়াত-শিবিরের বর্বরতার শিকার অধ্যাপক জামাল উদ্দিন এখনও কাতরাচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। আর ঢাকায় স্থানান্তর করেও ফেরানো যায়নি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নাজিমুলের বাঁ চোখের আলো। নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন ওলটপালট হয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশনের অর্থ-সাহায্য পাননি তাদের কেউই। এক চোখ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে অনিক :আট দিন ধরে হাসপাতালে ছিল এক চোখ হারানো শিশু অনিক। তাকে দেখতে আসেননি চট্টগ্রামের কোনো আওয়ামী লীগ নেতা। এমনকি অনিকের বাবা যে এলাকার ভোটার, সে আসনের নির্বাচিত আওয়ামী লীগদলীয় এমপি দিদারুল আলমও তাকে দেখতে যাননি। অথচ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতেই সেদিন ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন বাবা স্বপন দাশ। অনিকের মা শিল্পী দাশ নৌকায় ভোট দিয়েই ছেলেকে দেখতে হাসপাতালে এসেছেন বলে জানান। এ প্রসঙ্গে অনিকের বড় চাচা শঙ্কর দাশ জানান, তাদের পরিবারের সবাই নৌকার সমর্থক। তবে অনিককে হাসপাতালে দেখতে আসেননি আওয়ামী লীগের বড় কোনো নেতা। পেশায় দিনমজুর স্বপন দাশ বলেন, 'অনিকের চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে এ টাকা জোগাড় করেছি। এ কয়দিন কাজেও যেতে পারিনি। সামনের দিনগুলোতে কী করব, জানি না।'
সাতকানিয়ায় ফিরতে চান না জামাল উদ্দিন :নির্বাচনী সহিংসতায় আহত প্রিসাইডিং অফিসার অধ্যাপক জামাল উদ্দিন সাতকানিয়ায় ফিরে যেতে চান না। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় সহিংসতার শিকার হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি আজও তাকে তাড়া করে ফিরছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি বলেন, 'আমি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি, আমাকে যেন আর সাতকানিয়া কলেজে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যেতে না হয়। আর তিনি আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে জানিয়েছেন, বদলির চেষ্টা করবেন।' চমেক হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. অজয় দাশ বলেন, 'জামাল উদ্দিনের অবস্থা স্থিতিশীল। তার দুই হাতেই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না।' বাঁ চোখে দেখছেন না নাজিমুল ইসলাম :সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম জামাল উদ্দিনের সঙ্গে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় গুরুতর আহত হন। এ সময় দু'চোখেই আঘাত পান তিনি। তার স্ত্রী নাজমীন আক্তার সমকালকে বলেন, 'নাজিমুল এখন ঢাকা চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে বাঁ চোখে দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।'
ইসিঘোষিত সাহায্য পাননি কেউ :নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত কর্মকর্তাদের সাহায্যের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়নি তাদের। এ বিষয়ে নাজিমুল ইসলামের স্ত্রী নাজমীন আক্তার বলেন, 'নাজিমুলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলেও কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ এখন পর্যন্ত আমাদের দেওয়া হয়নি।' একইভাবে অর্থ না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রিসাইডিং অফিসার জামাল উদ্দিনের ভগি্নপতি লুৎফুর আনোয়ার।

No comments

Powered by Blogger.