ক্ষোভ ঝাড়ুন ব্যালট বাক্সে

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়তে ব্যালট বাক্স বেছে নিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নির্বাচন। আগামী ২ ফেব্র“য়ারি’র নির্বাচন পেছানোর জন্য দেশটির নির্বাচন কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে সে বিষয়ে বুধবার আলোচনা করা হবে। থাই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ না করে বলেছেন, এই প্রস্তাব অসাংবিধানিক।
থাই বিক্ষোভকারীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ‘পিপলস কাউন্সিলের’ কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই কাউন্সিল নিরপেক্ষভাবে সংবিধান সংশোধন করে গণভোট দেয়ার পর পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব দাবিতে গত দু’মাস ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা বিরোধীদের দাবির মুখে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলেও বিরোধীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। তারা থাই সরকারে সিনাওয়াত্রা পরিবারের আধিপত্যের অবসান চান। ব্যাংককে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি : থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বুধবার বিরোধী দলের র‌্যালিতে গুলিবর্ষণে দু’জন আহত হয়েছে। এদিকে বিক্ষুব্ধ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাতের লক্ষ্যে কাছের শহরগুলোতে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ এ কথা জানান। এএফপির খবরে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা অনির্বাচিত ‘পিপলস কাউন্সিল’ গঠনের সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার পদত্যাগ চায়। এই পরিষদ থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে ইংলাকের পরিবারের প্রভাব কমাতে এবং রাজনীতিতে অর্থের ব্যাপক ব্যবহারের সংস্কৃতি মোকাবেলায় নির্বাচনী সংস্কার কাজ দেখভাল করবে। নগরীর ইরাওয়ান জরুরি কেন্দ্র জানায়,
ব্যাংককের বাণিজ্যিক কেন্দ্রে ‘ব্যাংকক অচল’ কর্মসূচির প্রধান ঘাঁটিতে মধ্যরাতের পর বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে আহত এক পুরুষ ও এক নারীকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে রাতেই তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, তাদের একজন টোকাই ও একজন বিক্ষোভকারী ছিল। টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, দুই মাসের বেশি সময় আগে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে অজ্ঞাতনামা ঘাতকদের হামলায় এ পর্যন্ত এক পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। এদিকে গভীর রাতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে থাইল্যান্ডের বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ এক নেতার বাড়ি। বুধবার পুলিশ জানায়, ডেমোক্রেট পার্টির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিজিত ভেজ্জাজিভার বাড়িতে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে বিস্ফোরণে কেউ আহত হয়নি। কাছের থং লর পুলিশ স্টেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘ওই সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। বিস্ফোরণে বাড়ির ছাদের কিছু অংশ ধসে গেছে।
তবে ওটা বোমা ছিল না। খুব সম্ভবত ওটা বড় ধরনের আতশবাজি ছিল।’ সম্প্রতি থাইল্যান্ড সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারীরা রাজধানী ব্যাংকককে প্রায় অবরুদ্ধ করে ফেলেছে এবং আপাতদৃষ্টিতে এই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিজিত ও অন্য ডেমোক্রেট নেতারা ইংলাকের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ইংলাকের ঘোষণা দেয়া ২ ফেব্র“য়ারির আগাম নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ওদিকে মঙ্গলবার কিছু কট্টরপন্থী আন্দোলনকারী হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, বুধবারের মধ্যে যদি প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা পদত্যাগ না করেন তবে তারা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন ও একটি এয়ার ট্রাফিক যোগাযোগের সুবিধা অবরুদ্ধ করবে। যদিও বুধবার সকাল পর্যন্ত তাদের মধ্যে এই হুমকি কার্যকর করার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। এর আগে ইংলাক অন্দোলনকারীদের নেতা ও বিরোধী দলের নেতাদের বুধবার এক বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই বৈঠকে তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। যদিও মনে হচ্ছে তার মিত্ররাই শুধুমাত্র তার এই আহ্বানে সাড়া দেবে। বিবিসি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.