জলদস্যুদের উৎপাত: কুতুবদিয়ায় শুঁটকি উৎপাদনে ধস by মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন @পেকুয়া

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় চলতি বছর শুঁটকি উৎপাদনে মারাত্মক ধস নেমেছে। শীতের শুঁটকির উৎপাদনের ভরা মওসুমে সাগরে মাছ মিলছেনা আর জলদস্যুদের উৎপাতের কারণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

কুতুবদিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি শুঁটকি মহাল সরেজমিন গেলে উৎপাদনে বিপর্যায়ের কথা জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়িরা। তারা জানান, আলী আকবর ডেইল,তাবালের চর, স্টীমার ঘাট,বড়ঘোপ সমুদ্র চর,রোমাই পাড়া,কাজির পাড়া,ঘিলাছড়ি,বিন্দা পাড়া,দক্ষিন ধুরুং বাতিঘর পাড়া,উত্তর ধুরুং চুলার পাড়াসহ  সৈকত এলাকায় ছোট-বড় অন্তত: ২০০ অস্থায়ী শুঁটকি মহাল গড়ে উঠেছে। এ সব শুঁটকি মহালে মৎস্য শ্রমিক ছাড়াও প্রায় এক হাজার মৎস্য ব্যবসায়ি জড়িত। কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনে ভরা মওসুম থাকে। মহাল গুলোতে  ছুরি, লইট্টা,ফাইস্যা,চিংড়ি,উলা,পোহা প্রভৃতি মাছ ছাড়াও কাঁকড়া,বাসওয়া জাতের অখাদ্য শুকানো হয় পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবে। তবে এবার সাগরে মাছ না মেলায় শুঁটকি উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে ব্যবসায়িরা জানান।

দ্বীপের বড়ঘোপ সমুদ্র সৈকতের শুঁটকি ব্যবসায়ি মাহমুদুল করিম বলেন,গত বছর শুঁটকি মওসুমে  তিনি ৪৭ লক্ষ টাকার শুঁটকি উৎপাদন করেছিলেন। এবছর তার অর্ধেকেও হবেনা । সাগরে মাছ কম। ব্যবসায়ি কোরবান আলী,শফি আলম, সোনা মিয়া প্রমূখ ব্যবসায়িরা এবার মহালের কিলা ভাড়াও প্রদান করতে পারবেনা বলে তিনি জানান। চান মিয়া পাড়ার শুঁটকি ব্যবসায়ি বদি আলম,নুরুল ইসলাম বলেন,সাগরে বড় বড় ট্রলি জাল,বেহেঞ্জি জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ নিধন করা ও বড় মাছগুলো গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ায় উপকূল মাছ ক্রমশ: কমে যাচ্ছে বলে তারা জানান।যে কারণে অনেকেই শুঁটকি উৎপাদন ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। শুঁটকি মহালে নিয়মিত মাছ না থাকায়  কর্মরত শ্রমিকদের বেশির ভাগ বসে দিন কাটছে।

অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলে জানান,সাগরের জাহাজখাড়ী,গুলিদ্দা,মোছখাড়ী প্রভৃতি স্থানে প্রতিনিয়ত জলদস্যুদের উৎপাত বেড়েই চলেছে। গত দু‘সপ্তাহ আগে ৭টি ফিশিং বোট জলদস্যুরা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। প্রতিটি বোট থেকে ২০ হাজার টাকা করে মুক্তিপন নিয়ে ছেড়ে দেয়। এর ১৫ দিন আগেও দু‘টি বোট নিয়ে গিয়ে ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ফলে অনেক মৎস্য ব্যবসায়ি সাগরে মাছ শিকার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে বলে তিনি জানান। প্রতিবছর  বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জিত হয় শুঁটকি উৎপাদন থেকে। সাগরে যদি মাছের আকাল অব্যাহত থাকে এবং জলদস্যুদের দস্যুতা রোধ করা না গেলে শুঁটকি উৎপাদনে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসবে বলে বিশিষ্ট বহদ্দারদের অভিমত।

কুতুবদিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দ্বীপ থেকে জলদস্যুদের নির্মূলে পুলিশ কাজ করছে।

No comments

Powered by Blogger.