কয়েকজনে মিলে ধর্ষণ করে শিশু রিতুকে, আরও ৩ ধর্ষক আটক by গাফফার খান চৌধুরী

রিতুকে ফুঁসলিয়ে ট্রপিকানা টাওয়ারের নিরিবিলি জায়গায় নেয়। এরপর তার ওপর চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে ধর্ষকরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। লাশ বাথরুমে লুকিয়ে রেখে তালা দেয়।
রিতু হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে আরও ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ৬ জন আটক হলো। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানাজা শেষে রিতুর লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। রিতুর খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে রবিবারও পল্টন, বায়তুল মোকাররমসহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। বিক্ষোভকারীরা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা পুরানা পল্টন মোড়ের ৪৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১৫তলা বাণিজ্যিক ভবনটিই ট্রপিকানা টাওয়ার। শনিবার সকাল থেকেই ভবনের ৪ তলার ফ্লোরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ফ্লোরের পূর্বদিকের একটি বাথরুম থেকে প্রায় গলিত অবস্থায় রিতুর (১০) লাশ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে রিতুর মা বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় শনিবার আটককৃত ৩ জনকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে। রিতু হত্যাকা-ে ভবনের মালিকের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে।
রিতুর মরদেহ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। রবিবার দুপুর ৩টার দিকে রিতুর মরদেহ গ্রহণ করেন তাঁর মা। পরে রিতুর মরদেহ সেগুনবাগিচা নূর মসজিদের পাশে সেগুনবাগিচা হাইস্কুল মাঠে রাখা হয়। সেখানে জানাজা শেষে রিতুর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। রিতুর মরদেহ সেগুনবাগিচা পৌঁছলে স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা সেগুনবাগিচা, তোপখানা রোড, বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীরা ধর্ষক খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।
রিতুর বড়বোন মিতু আক্তার (১৬) জনকণ্ঠকে জানায়, তার পিতার নাম আমিন উদ্দিন (মৃত)। মা নুরজাহান বেগম (৩৫)। বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানাধীন দুপুরিয়া গ্রামে। তারা ৩ বোন দুই ভাই। তারা সেগুনবাগিচা এলাকায় প্রায় ২০ বছর ধরে বসবাস করছে। ২৬/এ নম্বর টিনশেড বাড়িতে প্রায় ৫ বছর ধরে মাসিক ৭ হাজার টাকা ভাড়ায় বসবাস করছে তারা। ভাইবোনদের মধ্যে রিতু তৃতীয় ছিল। মূলত অভাব থেকে রেহাই পেতে কোনমতে বেঁচে থাকতেই ভাত বিক্রি শুরু করে তারা। ট্রপিকানা ভবনে প্রায় আড়াই বছর ধরে ভাত বিক্রি করছে তারা। রিতু মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন ফ্লোরে ফ্লোরে ভাতের বাটি দিত। আবার খালি বাটি ফিরিয়ে আনত। গত ১৪ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে রিতু বাটি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। মিতুর দাবি, তার বোনের মতো কারও জীবনে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। তিনি খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।
মামলাটির তদন্তকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শাহবাগ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজির উদ্দিনকে।
শনিবার রিতুর লাশ উদ্ধারের পর পরই হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে ভবনের চারতলার ফ্লোর থেকে আল নাসের এ্যাভিয়েশন সার্ভিস নামক হজ এজেন্সির কর্মকর্তা ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল থানার আব্দুল লতিফের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০), হোয়াই রোজ হজ ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানাধীন পাতরাইল গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে গোলাম মোস্তফা (২৫) ও এয়ারপিস হজ ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানাধীন লাহারীনা গ্রামের রবিউল বিশ্বাসের ছেলে সেলিম বিশ্বাসকে (২৩) আটক করে পুলিশ।
শাহবাগ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, রবিবার সকালে রিতু হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে ভবন থেকে আরও ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছেন ভবনের অফিস ডিউটি পালনকারী কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানাধীন নারান্দি গ্রামের মৃত ডা. হোসাইনের ছেলে শাহাবুদ্দিন (৪০), ভবনের কেয়ারটেকার মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানাধীন বড়চরের করাতিয়া গ্রামের সাহেব আলী ফকিরের ছেলে ইস্কান্দার আলী (৫০) ও ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী মাগুরা জেলা সদরের লক্ষীপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম (৬৫)।
তদন্তকারী সংস্থা, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ, ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত পরীক্ষা নিরীক্ষা, ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সিআইডি টিম এবং রিতুর সুরতহালের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রিতুকে ফুঁসলিয়ে বা সুযোগ বুঝে আটকিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের আলামত স্পষ্ট। মূলত ধর্ষণের বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায় এজন্য রিতুকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ বাথরুমে রেখে তালা দিয়ে রাখে। যে বাথরুমটি থেকে রিতুর লাশ উদ্ধার হয়েছে সেটির চাবি ভবনের কেয়ারটেকারের কাছে থাকে। সাধারণ বিভিন্ন অফিসের কর্তা ব্যক্তিরা বাথরুমটি ব্যবহার করেন।
ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি সিপিবির ॥ রিতুকে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও ফাঁসির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান দলটির নেতারা।
সিপিবির ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব লাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য লক্ষী চক্রবর্তী, জলি তালুকদার, সেকান্দার হায়াত, মাকুসদ আক্তার লাইলী, লাকী আক্তার প্রমুখ।
দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ বলেন, সরকার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচী প- করতে পুলিশ বাহিনী দিয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রিত ‘পিপার স্প্রে’ ব্যবহার করছে। অথচ খোদ রাজধানীর ব্যস্ততম পুরানা পল্টন এলাকায় ১০ বছরের নিষ্পাপ শিশু রিতুর ধর্ষক ও খুনীদের গ্রেফতার করতে পারছে না। প্রকাশ্য দিবালোকে আরেক ব্যস্থতম এলাকা চানখারপুলে কাজী অফিসের ভেতর ইডেন কলেজের ছাত্রীকে দুই সন্ত্রাসী এ্যাসিড নিক্ষেপ করল। তাদেরও ধরতে পারছে না পুলিশ। এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসব ঘটনা সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

No comments

Powered by Blogger.