'ঘাতক' ছাত্রলীগ!-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

বিশ্বজিতের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। এবার এক নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ কেড়ে নিল ছাত্রলীগের বুলেট। নিজেদের স্বার্থ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি শিশু রাব্বি।
'অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা'- এ জাতীয় কথা এখনকার ছাত্ররাজনীতির ধ্বজাধারীদের কাছে বোধ হয় নিতান্তই সেকেলে। ছাত্ররাজনীতির সোনালি অতীত এখন অনেকের কাছে স্মৃতি রোমন্থনের অনুষঙ্গ। যে ছাত্ররাজনীতি এককালে দেশের জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে শ্রদ্ধা আদায় করেছিল, সেই ছাত্ররাজনীতিকে এখন কী চোখে দেখা হয়, সেটা আজকের দিনের ছাত্রনেতারা ভালো বলতে পারবেন। শ্রদ্ধার আসন থেকে ভীতিকর মাস্তানের সারিতে নেমে আসা ছাত্রনেতারা তাতে খুব একটা যে ভাবিত, তা মনে হয় না। চিন্তিত নয় মূল দলও। নীতিহীন ছাত্ররাজনীতি আজ অনেকের জন্যই বিনা মূলধনের বেসাতি। রাজনৈতিক পরিচিতিই যেখানে উপার্জনের মূল উপাদান- এই বাণিজ্যিক পণ্যটিকে ছেড়ে থাকা অনেকের কাছেই বোকামি বলে মনে হতে পারে। ফলে শুধু পরস্পরবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেই নয়, একই সংগঠনভুক্ত নেতা-কর্মীদের মধ্যেই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে শক্তিমত্তা প্রদর্শনের প্রবণতায় বাড়ছে অস্ত্রের ব্যবহার ।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে প্রশাসনেরই নিরাপত্তা নেই, সেখানে অন্যদের নিরাপত্তা কেমন করে নিশ্চিত করা যাবে- উপাচার্যের এমন কথা শুধুই কি তাঁর অসহায়ত্বকেই প্রকট করে তোলে?
ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী এপ্রিলে। নতুন কমিটি গঠন নিয়ে কথাবার্তা চলছে সেখানে। এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতৃত্বের। আধিপত্য ধরে রাখার পাশাপাশি নেতৃত্ব যেখানে উপার্জনের মাধ্যম, সেখানে নেতৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা থাকাটাই স্বাভাবিক। টেন্ডার-চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্যের পাশাপাশি নিয়োগবাণিজ্যের বাটোয়ারা যেখানে নিশ্চিত, সেখানে নেতৃত্ব পেতে আগ্রহীর সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি নেতৃত্বের লোভনীয় পদ ধরে রাখতে পুরনোদের আগ্রহী হতে দেখা যাবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নেপথ্য কারণটি বাণিজ্যিক।
প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ১৫টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্ররাজনীতির শেষ বলি হতে হয়েছে এক নিষ্পাপ শিশুকে। ক্ষমাহীন এই অপরাধ। নেতৃত্বের কোন্দল যখন একটি ছাত্রসংগঠনকে ঘাতকের ভূমিকায় নিয়ে আসে, তখন সেই সংগঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। তাতেই কি সব কূল রক্ষা করা সম্ভব? দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি আমরা। এ জাতীয় ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ছাত্ররাজনীতি কিছুটা হলেও সন্ত্রাসমুক্ত হবে বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.