বিডিআর হত্যাযজ্ঞের মতো ঘটনা আর যেন না ঘটে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনার আর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ আত্মঘাতী ঘটনায় কেবল প্রাণহানি ঘটেনি, জনগণের সামনে বাংলাদেশ রাইফেলসের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবগঠিত চারটি অঞ্চল ও চারটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন উপলক্ষে দরবার হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা সবাই একে অপরের ভালো-মন্দ এবং সুখ-দুঃখের সাথি। ভবিষ্যতে এ ধরনের আত্মঘাতী ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এ জন্য উপযুক্ত সময় ও পরিবেশ প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর পরই এ ধরনের ঘটনা সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের মতো কঠিন পরিস্থিতির দিকে দেশকে ঠেলে দিয়েছিল। এ পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলায় আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, তা সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে এ ধরনের ঘটনার কোনো সুযোগ নেই। এ জন্য কেবল ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন, ৫৭টি ইউনিটের ছয় হাজার ৪১ জন বিডিআর বিদ্রোহীর বিচারকাজ স্বচ্ছ ও কোনো রকম প্রভাব ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ৮৫০ জনের বিচারকাজ দেশের প্রচলিত আইনে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বিচার-প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে ইনশা আল্লাহ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই বাহিনীর (বিজিবি) একটি নতুন অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করেছি।’
অর্জিত ছুটি ৬০ দিন: প্রধানমন্ত্রী দরবারে উপস্থিত বিজিবি সদস্যদের বক্তব্য শোনেন। বিজিবি সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের অর্জিত ছুটি ৩০ দিনের স্থলে ৬০ দিন দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন। অবসর গ্রহণের পর বিজিবি সদস্যদের স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসুবিধা দেওয়ার জন্যও কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিজিবি সদস্যদের পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তাঁর সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
চারটি অঞ্চল ও চারটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন: এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবির নবগঠিত চারটি অঞ্চল ও চারটি নতুন ইউনিটের পতাকা উত্তোলন করেন। নবগঠিত চারটি আঞ্চলিক সদর দপ্তর হবে যশোর, রংপুর, সরাইল ও চট্টগ্রামে। এ ছাড়া নবগঠিত চারটি ইউনিট হচ্ছে: বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো, আইসিটি ব্যাটালিয়ন, ৪৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ও ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন।
প্রধানমন্ত্রী পরে ১০ জন সুবেদার মেজরকে সহকারী পরিচালকের ব্যাজ পরিয়ে দেন।
সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের পরিবারকে ১৯ লাখ টাকার চেক: প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিজিবির নবগঠিত অঞ্চল ও ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সাবেক বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর শহীদ নুরুল ইসলামের পরিবারকে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষে তাঁর স্ত্রী আয়েশা বেগম অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
মেজর জিয়াউদ্দিনকে দেখতে হাসপাতালে: প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার আহত মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনকে দেখতে গতকাল স্কয়ার হাসপাতালে যান। গত শুক্রবার পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে চরপুটি এলাকায় বনদস্যুদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন মেজর জিয়াউদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহ আলমকেও দেখতে যান।
ফারুকের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে নির্দেশ: প্রধানমন্ত্রী টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি তাঁর সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। খবর বাসস ও বিজ্ঞপ্তির।

No comments

Powered by Blogger.