ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশে যাত্রা উসব শিল্পকলায়- সংস্কৃতি সংবাদ

 এদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যাত্রাশিল্প। এক সময় বাংলার গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে নগর পর্যন্ত বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল এটি।
ক্রমবর্ধমান নগরসভ্যতা ও নানা প্রযুক্তিগত বিনোদনের কারণে ক্রমেই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে বিনোদনের এই প্রাচীন মাধ্যমটি। তবে যাত্রাশিল্পের দিন আবার বদলাতে শুরু করেছে। প্রাচীন এই শিল্প মাধ্যমটির দিকে নজর দিয়েছে বর্তমান সরকার। প্রণীত হয়েছে যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা। শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালককে চেয়ারম্যান করে গঠিত হয়েছে ১৫ সদস্যের যাত্রা উন্নয়ন কমিটি। আবার স্বপ্ন জেগেছে যাত্রাশিল্পীদের মাঝে। আর সেই স্বপ্নের পরিধিটাকে যেন বাড়িয়ে দিতে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজন করেছে চার দিনব্যাপী যাত্রা উৎসব। দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় উৎসব আয়োজন করেছে একাডেমীর নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে শুরু হওয়া উৎসবে অংশ নিচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১২টি দল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিনা দর্শনীতে চলছে এই যাত্রাপালা প্রদর্শনী। আর প্রতিটি পালাই নিবিড় মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন বিচারকম-লী। অভিনয়, নৃত্য, যন্ত্রসঙ্গীতসহ প্রতিটি দলের সার্বিক পরিবেশনা বিবেচনায় নিয়ে দলগুলোকে নিবন্ধনের প্রতিবেদন দেবেন এই বিচারকরা। আর নিবন্ধিত যাত্রাদলগুলো পাবে নানা সহায়তা ও প্রণোদনা।
রবিবার ছিল যাত্রা উৎসবের দ্বিতীয় দিন। সন্ধ্যা নামতেই এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ভিড় জমে যাত্রাপ্রেমীদের। সবাই যেন মনের টানে ছুটে এসেছিলেন শেকড়সম্পৃক্ত এই বিনোদনের নির্যাসটুকু নিতে। যাত্রা শুরু হতেই মিলনায়তনে নেমে এল পিনপতন নীরবতা। বাদ্যের তালের সঙ্গে মঞ্চে ছড়িয়ে পড়ল রঙিন আলো। উঠে এল সবুজ-শ্যামল গ্রাম-বাংলার দৃশ্যপট। আবির্ভূত হলো মাটির গন্ধমাখা এক জোড়া সহজ-সরল তরুণ-তরুণী। ঘটনাক্রমে তাদের মধ্যে গড়ে উঠল হৃদয়ের সম্পর্ক। তবে বাধা হয়ে দাঁড়াল গ্রামের সমাজপতিরা। এই প্রেমকে ঘিরে দেখা মিলল গ্রাম্য রাজনীতি, দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের। একপর্যায়ে পারিবারিকভাবে তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হলো অন্য এক ছেলের। এদিকে প্রেমের শোক ও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করল প্রেমিক তরুণ। এটি ছিল সিরাজগঞ্জের শতরূপা শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত পালা প্রেমের সমাধি তীরের ঘটনা। পালাটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেনÑ এমএ রশিদ, নীপা, জ্যোসনা, মীরা ও সালেহা। পালাকার নির্মল কুমার মুখোপাধ্যায়ের রচনা থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন এমএ রশীদ। এর আগে বেলায় ২টায় স্বপ্ন অপেরা পরিবেশন করে নিহত গোলাপ পালা। বিকেলে কেয়া যাত্রা ইউনিট পরিবেশন করে পালা সাগর ভাসা।
উৎসবে আজ সকাল থেকেই শুরু হবে যাত্রাপালা প্রদর্শনী। সকালে থাকবে লোকনাট্য গোষ্ঠীর পালা গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা। বেলা ২টায় পরিবেশিত হবে দেশ অপেরার পালা বর্গী এল দেশে। বিকেলে কৃষ্ণ অপেরা উপস্থাপন করবে জেল থেকে বলছি। সন্ধ্যায় নিউ শিল্পী নাট্যসংস্থা পরিবেশন করবে আলোমতি প্রেম কুমার। মঙ্গলবার উৎসবের শেষ দিন। এদিন দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে তিনটি যাত্রাপালা। সবার জন্য উন্মুক্ত এ উৎসবে আগত দর্শককে গুনতে হবে কোন দর্শনী।
শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ৫৬টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী
ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন সেøাগানে চলছে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল রবিবার। এদিন রাজধানীর চারচি মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় ৫৬টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এসব ছবি দেখতে খুদে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ভিড় জমিয়েছিল গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও গ্যাটে ইনস্টিটিউটে। এ ছাড়া দিনের আয়োজনের শুরুতেই ছিল পরিচয় পর্ব। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে বিদেশী অতিথিদের সঙ্গে সারাদেশ থেকে আগত শিশু প্রতিনিধিদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ইউনিসেফের সহযোগিতায় এবার সারাদেশ থেকে ১২৫ জন শিশুপ্রতিনিধি এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০জন শিশু শারীরিক প্রতিবন্ধী ও পথশিশু।
আজ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি শিশু প্রতিনিধিদের জন্য থাকবে দিনব্যাপী কর্মশালা। চলচ্চিত্রে গল্প বলা বিষয়ের ওপর কর্মশালাটি পরিচালনা করবেন কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা ন্যান্সি ট্রিটস বটকিন।

No comments

Powered by Blogger.