স্মৃতিভ্রষ্ট গুল মিনা

গুল মিনা। তার মুখের সব সেলাই ও ক্ষত দৃশ্যত সেরে গেছে। কিন্তু তার মুখে ক্ষতের দাগ রয়ে গেছে। তার চোয়ালে, কানের কাছে সেই দাগ স্পষ্ট। এসব দাগ প্রমাণ দিচ্ছে তিন মাস আগে কি নৃশংসতা থেকে সে রেহাই পেয়েছে।
গুল মিনা আফগানিস্তানের কাবুলের মেয়ে। মুখের এ ক্ষত ঢাকার জন্য তাকে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে হয়। নিঃশ্বাস নিতে ব্যথা করে। গুল মিনা মাঝে মাঝেই ব্যথায় ককিয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের পুলিশ ও প্রতিবেশীদের দেয়া তথ্যমতে, তার এই পরিণতির জন্য দায়ী তার ভাই। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি- এমন এক পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে তাদের পরিবারের সম্মান নষ্ট করছে এমন বিশ্বাসে গুল মিনার ভাই তার ওপর হামলা করেছে। কুড়াল হাতে নিয়ে গুল মিনার মুখে ও কাঁধে উপর্যুপরি কুপিয়েছে। তারপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কড়া প্রহরায় তার চিকিৎসা চলে। এখন কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার কষ্ট হয়। সে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তর্জনি দিয়ে মুখের ক্ষত দেখিয়ে বলে, কি হয়েছিল তার মনে নেই। তার চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন কুঠারের আঘাতে গুল মিনার মাথার খুলি থেকে মগজ সরে গেছে। ফলে সে হয়তো আর হাঁটতে পারবে না। নিজে কোন কিছু ধুয়ে নিতে পারবে না। খেতে পারবে না। পারবে না কথা বলতেও। তাকে প্রথম যে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে তার ব্রেন বা মগজ তার আসল অবস্থানে আর আসতে পারবে। তাই যদি না পারে তাহলে গুল মিনার স্মরণ শক্তিসহ সবকিছু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এখন সে মনে করতে পারে তার পরিবার কোথাকার। সব সময় পরিবারের সবার কথা বলে। সে বলে তার চার ভাই ও দুই বোন আছে। তারা বেড়ে উঠেছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী একটি এলাকায়। সেখানে আফগানিস্তানের দিকে যে অংশ তা কুনার প্রদেশের নারায়ে জেলা। পাকিস্তান অংশের নাম চিত্রল। গুল মিনা এসব মনে করতে পারলেও মনে করতে পারে না কি কারণে, কেন তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। তার স্বামী নয়, এমন এক পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে যায় তার কথা সে স্মরণ করতে পারে না। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ওমেন ফর আফগান ওমেন-এর নির্বাহী পরিচালক মনিজা নাদেরি বলেন, গুল মিনা একেক সময় একেক রকম কথা বলে। শুরুতে সে বলেছিল তার বিয়ে হয়েছে। তার চারটি সন্তান আছে। কিন্তু এখন বলছে তার বিয়েই হয় নি। মারাত্মক মানসিক যন্ত্রণায় ভুগলে মানুষ এভাবে তার স্মৃতি বিভ্রাটে পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। ফারাহ প্রদেশের নারী সিনেটর বিলকিস রোশান বলেন, কেউ তার স্মৃতিশক্তি হারিয়েছে এমন ঘটনা আমি মনে করতে পারছি না। আমি বিশ্বাস করি গুল মিনাকে চিকিৎসা দিলে সে তার স্মৃতিশক্তি ফেরত পাবে। এখন কি করতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে গুল মিনার উত্তর- আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। আপনারা যত তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে যাবেন আমি তত তাড়াতাড়ি সেখানে ফিরে যাব। কিন্তু আফগানিস্তানে কোন নারী যখন তার সব আশ্রয় হারিয়ে ফেলেন তখন তার আর যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। অনলাইন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.