রাজধানীতে শিশু হত্যা-নরপশুদের রক্ষা নয়, বিচার করুন

বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশ যেন সব দেশকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একের পর এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। গতকাল রবিবারের সব পত্রিকায় বড় বড় শিরোনামে ছাপানো হয়েছে রাজধানীতে পাঁচ দিন আগে হত্যা করা এক শিশুর গলিত লাশ উদ্ধারের খবর।
তোপখানা রোডের বহুতল ভবন ট্রপিক্যাল টাওয়ারের চতুর্থ তলার বাথরুম থেকে ১০ বছরের এক মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ৫ জানুয়ারি মিরপুর এক নম্বর সেকশন থেকে ১০ বছরের ফারজানার লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ১৩ জানুয়ারি রাজবাড়ীতে মাত্র পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় এ ধরনের অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর থাকছে। একের পর এক ঘটনা ঘটে গেলেও স্থানীয়ভাবে সামান্য ক্ষোভ প্রকাশ ছাড়া জাতীয় ভিত্তিতে বড় কোনো প্রতিবাদ গড়ে ওঠেনি, যেমনটি দিল্লির ঘটনায় সারা ভারতে ঘটতে দেখা গিয়েছিল। এর পরও নিজেদের সভ্য দাবি করার কোনো অধিকার আমাদের থাকে কি?
ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, খুন-খারাবি এ রকম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মত হচ্ছে, অপরাধীদের বিচার না হওয়ার কারণেই অপরাধের ঘটনা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিচার হচ্ছে না কেন? রাষ্ট্রের এত বিশাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে? সমাজে অপরাধ যেন না বাড়ে, অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায়, সেটি দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেই রাষ্ট্র কী করছে? আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনাররা এখন আন্দোলনকারীদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটানোর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে ব্যস্ত। তাঁরা দয়া করে ওপরের প্রশ্নগুলোর কোনো সদুত্তর দেবেন কি? পিতাহীন দরিদ্র পরিবারের সন্তান রিতু বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অফিসে অফিসে দুপুরের খাবার বিতরণ করত। সেই মেয়েটির এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা পুলিশের বড় কর্তাদের মনে কোনো ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়েছে কি? নাকি আগের ঘটনাগুলোর মতোই এই ঘটনাও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে?
কেন এমন হয়েছে তার উত্তর না খুঁজে আমাদের বরং কেন এমন হবে না তার উত্তর খোঁজা উচিত। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে যা বলা হয়েছিল, তা মনে হয় নির্বাচনের দিনই হারিয়ে গেছে। ক্ষমতায় বসে গত চার বছরে তারা 'রাজনৈতিক' মামলা আখ্যা দিয়ে ফৌজদারি অপরাধে দায়ের করা হাজার হাজার মামলা তুলে নিয়েছে। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, খুনের আসামিসহ লক্ষাধিক অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অপরাধ করার পর অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছে। ধর্ষণের আসামিকে আশ্রয় দিতেও আমাদের রাজনীতিবিদদের বিবেকে বাধে না। পুলিশ ও প্রশাসন তাদের ইঙ্গিতে অপরাধীদের পক্ষেই অবস্থান নেয়। তাহলে এ দেশে অপরাধের বিচার হবে কী করে? আর বিচার না হলে অপরাধ বাড়বে না কেন?
আমাদের রাজনীতিবিদদের যদি সমাজের প্রতি কোনো দায়দায়িত্ব থেকে থাকে, তাহলে এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে তাঁরা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেবেন- এমনটাই আশা করছি আমরা।

No comments

Powered by Blogger.