তাহলে কি ভিন্নমত প্রকাশ করা যাবে না?- পেপার সেপ্র ব্যবহার

পেপার স্প্রে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো মতামত লক্ষ করা গেছে। কেউ কেউ বলতে চাইছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার স্বার্থে পুলিশের হাতে পেপার স্প্রের মতো হাতিয়ার তুলে দেওয়া অপরিহার্য। কারও মতে, এটি খুবই ক্ষতিকারক গ্যাস।
এ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর পেপার সেপ্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে কেউ মতামত দিতে পারবেন না বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি সংবিধান-স্বীকৃত বাক্স্বাধীনতারও পরিপন্থী।
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পেপার স্প্রে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা এমনও নয়, সেসব দেশে এ নিয়ে বিতর্ক নেই। বিভিন্ন দেশে খোলাবাজারে পেপার স্প্রের ব্যবহার যেমন প্রচলিত, তেমনি এ বিষয়ে বাধানিষেধও রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ভিন্নমত প্রকাশের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক কনভেনশনে আছে বলেই পুলিশ যত্রতত্র এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না। এ ধরনের অস্ত্র তখনই ব্যবহার করা যায়, যখন তারা সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে পুলিশ যেসব ক্ষেত্রে পেপার সেপ্র ব্যবহার করেছে, তার কোথাও তারা আক্রান্ত হয়নি। রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের আওতায় যুদ্ধে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র পেপার স্প্রেকে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রয়োগ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। এমনকি পেপার সেপ্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালতে রিটও হয়েছে।
পেপার স্প্রে আত্মরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে অনেক দেশেই ব্যবহূত হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অনেক দেশে নারীরা আত্মরক্ষার্থে বৈধভাবেই পেপার স্প্রে ব্যবহারের অধিকার ভোগ করে থাকেন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নারীরা পেপার স্প্রে ব্যবহার করার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পটভূমিতে বাংলাদেশেও সরকার নাগরিকদের এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেবে কি না, সেই প্রশ্নও রয়েছে।
আমরা আশা করব, পেপার স্প্রে ব্যবহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবিলম্বে বিস্তারিত তথ্য জনগণের কাছে উপস্থাপন করবে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিন্নমত প্রকাশের সর্বজনীন অধিকারবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার করে নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.