দূরপাল্লার বাস ভাড়া-কিলোমিটারে বাড়ল ১০ পয়সা

পরিবহন মালিকদের চাপে পড়ে সরকার দূরপাল্লার বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ভাড়া বাড়ানো হয়নি।
গতকাল রবিবার বিকেলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এক সভায় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজের কাঁধে 'দায়' নিয়ে ভাড়ার নতুন হার ঘোষণা করেন। এ নিয়ে এক বছরের ব্যবধানে দূরপাল্লার বাস ভাড়া দ্বিতীয় দফা বাড়ানো হলো। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। বর্তমানে আন্তজেলা বাস ভাড়া নেওয়া হয় প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৩৫ পয়সা। আগামীকাল থেকে তা নেওয়া হবে এক টাকা ৪৫ পয়সা করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক মো. সাইফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে দূরপাল্লার ১৩৭টি রুট রয়েছে। এসব রুটে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১০ পয়সা হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে মঙ্গলবার থেকে। এ সময়ের মধ্যেই ভাড়ার নতুন তালিকা তৈরি করা হবে। এসব তালিকা বিভিন্ন পরিবহন মালিক সমিতি ও টার্মিনালে পাঠানো হবে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দূরপাল্লার বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৩৫ পয়সা। ভাড়ার নতুন হার হবে এক টাকা ৪৫ পয়সা। এর আগে গত মঙ্গলবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বর্ধিত ভাড়ার খসড়া প্রস্তাব আরো যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী। কিন্তু ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটি ওই সভায় উপস্থাপন করা কিলোমিটারপ্রতি বাস ভাড়া এক টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাবটি গতকালও সভায় উপস্থাপন করে। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবিত হার থেকে ১৩ পয়সা কমিয়ে দূরপাল্লার বাস ভাড়া এক টাকা ৪৫ পয়সা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গতকাল। জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বাস ভাড়া প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়ানো হবে না।
যাত্রীস্বার্থ নিয়ে কাজ করে থাকে এমন সংগঠনগুলোর মতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত গণবিরোধী। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নতুন গাড়ির ব্যয় বিশ্লেষণ করে পুরনো গাড়ির বেশি ভাড়া আদায়ের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। কোটি টাকার গাড়ির ব্যয় দেখিয়ে ১০-২০ লাখ টাকার গাড়িতে যাত্রী পরিবহন করে এ বাড়তি ভাড়া নেওয়া হবে। এ ভাড়া বাড়ানোর কারণে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়বে। আমরা এ সিদ্ধান্ত অনতি বিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।'
গতকাল বিকেলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির পূর্বনির্ধারিত সভায় যোগাযোগমন্ত্রী ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, 'ভাড়া বাড়ানোর দায় আমি এড়াতে পারব না। সাধারণ মানুষের তোপের মুখে ও সমালোচনার মুখে আমাকে পড়তে হবে। তবে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার জন্য আমি যাত্রীসহ সকলের প্রতি অনুরোধ করব।' পরিবহন মালিকদের লক্ষ করে তিনি বলেন, 'অনেকে গলাকাটা ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রীদের গলাটা যেন বেশি কাটা না যায়।' বাস্তবে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হলে পরিবহন মালিকরা অপরাধী হবেন কি না এ প্রশ্নও রাখেন যোগাযোগমন্ত্রী।
ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটি গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো কিলোমিটারপ্রতি দূরপাল্লার বাস ভাড়া এক টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করে। 'প্রস্তাবিত হার থেকে ১৩ পয়সা কমানো হোক' বলে মন্ত্রী নতুন ভাড়ার হার ঘোষণা করেন সভায়।
জানা গেছে, এর আগে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি দূরপাল্লার (আন্তজেলা) বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা করে বাড়িয়ে এক টাকা ৩৫ পয়সা করা হয়। ওই সময় বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৪৩ পয়সা করার প্রস্তাব করেছিল ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটি। পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভায় তা ৮ পয়সা কমানো হয়। এবার ভাড়া কমিটির সুপারিশ থেকে ১৩ পয়সা কমানো হলো।
গত ৩ জানুয়ারি সরকার পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা করে এবং ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে সাত টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। নতুন দর অনুযায়ী, প্রতি লিটার ডিজেল ৬৮ টাকা, কেরোসিন ৬৮ টাকা, অকটেন ৯৯ টাকা এবং পেট্রল ৯৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবহন মালিকরা সরকারকে বারবার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন।
এদিকে গণপরিবহনের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা না হলেও তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকেই রাজধানীতে বাসযাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন মালিকরা ভাড়া না বাড়ালে পরিবহন খাতে অস্থিরতা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলে সরকার আবারও দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল।
গতকাল সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব কে এনায়েত উল্লাহ বাস-মিনিবাসে দুই মাসের সময় বেঁধে দিয়ে মোটরযান কর জরিমানা মওকুফের দাবি জানিয়ে বলেন, 'পরিবহন একটি শিল্প। শিল্প হিসেবে আমরা এ খাতে কোনো সুবিধা পাচ্ছি না।' তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ২০০৮ সালে জারি করা সিএনজিচালিত গাড়ি চালানোর আদেশ বাতিলের দাবিও জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.