আলোচনাই সমাধানের একমাত্র পথ- সেবা খাতে ধর্মঘট নয়

গতকাল সকালে দেখা গেল পেট্রলপাম্পগুলো বন্ধ। এর আগের সন্ধ্যা থেকেই অনেক পেট্রলপাম্প বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, ধর্মঘটের আশঙ্কায় সারা দিন সবাই গাড়িতে পেট্রল ভরে নিয়েছেন। কিন্তু অনেকের ধারণা ছিল, শেষ মুহূর্তে হয়তো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। এর আগেও কয়েকবার এ রকম হয়েছে।
এবার যে পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সত্যি সত্যিই ধর্মঘট করে যান চলাচল বন্ধ ও জনভোগান্তি সৃষ্টির এমন ধ্বংসাত্মক পথ গ্রহণ করতে পারে, তা ছিল অকল্পনীয়। এই ধর্মঘট অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ। এ ধরনের প্রবণতা সমর্থন করা যায় না।
অন্যদিকে সরকারও চরম উদাসীনতা দেখিয়ে এবং ‘যা পারো করো’ ধরনের মনোভাব নিয়ে নিশ্চল জড় পদার্থের মতো বসে থেকে জনজীবনে দুর্ভোগ ডেকে আনার পথ প্রশস্ত করেছে। না হলে কেন তারা আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে আসতে পারল না? গত বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়েছে, রোববার আরও আলোচনা হবে এই আশায় সরকার পায়ের ওপর পা তুলে বসে ছিল! মাঝখানে শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটি বলে কি আলোচনা বন্ধ রাখতে হবে? কেন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া হলো না?
একটা সমাধান হয়ে যাবেই, সবাই নিশ্চিত। তাহলে কেন মানুষকে কষ্ট দেওয়া হলো? সরকার যদি মালিকদের দাবি মানতে না চায়, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থায় পেট্রল সরবরাহ অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিল না কেন? আনসার, পুলিশ ও প্রয়োজনে সেনাসদস্যদের সাহায্য নিয়ে পেট্রলপাম্পগুলো খোলা রাখার ব্যবস্থা করলেও তো বোঝা যেত যে সরকারের মাথাব্যথা আছে। পাম্প মালিক সমিতি ধর্মঘট করে, বাস মালিক সমিতি ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায় আর সরকার বসে বসে মজা দেখে। এটাই কি সরকারের দায়িত্ব?
অবশ্য সরকার নিজেও ইচ্ছামতো জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়ায়। আর বিভিন্ন মালিক সমিতি ধর্মঘট করার আশকারা পায়। এই পুরো বিষয়টা এক চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। এখান থেকে বের হতে না পারলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে নৈরাজ্যের করালগ্রাস সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেবে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক সন্দেহ নেই।
পাম্পমালিকেরা মাত্র ছয় দিনের নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে চলে গেলেন, এটা বিশ্বের কোনো ট্রেড ইউনিয়নের নিয়মে পড়ে না। এত বড় বিপর্যয় সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ গ্রহণের আগে অন্তত এক মাসের নোটিশ দরকার। জনসাধারণের কাছে তাদের আবেদন জানানো দরকার ছিল যে পেট্রল থাকবে না, সবাই যেন বিকল্প ব্যবস্থার পরিকল্পনা করে। সরকারও জনসাধারণকে আগে থেকে সতর্ক না করে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
চিকিৎসা, হাসপাতাল, পানি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ প্রভৃতি জরুরি সেবা খাত ধর্মঘটের আওতামুক্ত রাখা উচিত। এসব খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দাবি যতই ন্যায্য হোক না কেন, সমস্যা সমাধানের পথ একটাই: আলোচনা, আলোচনা এবং আলোচনা। অবিলম্বে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ফিলিং স্টেশনগুলো ফের সচল হোক, জনজীবনের ভোগান্তির অবসান ঘটুক—এটাই সবার দাবি।প্রথ

No comments

Powered by Blogger.