হত্যার ঘটনায় মামলা- ছাত্রলীগের সংঘর্ষের নেপথ্যে ‘নিয়োগ বাণিজ্যে’ ভাগাভাগি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শনিবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের প্রধান কারণ ছিল ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের’ ভাগাভাগি। এ ছাড়া সম্প্রতি শেষ হওয়া সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে বিভিন্ন খাত থেকে পাওয়া অনুদানের মোটা অঙ্কের টাকার অবশিষ্ট অংশের ভাগবাটোয়ারা এবং ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটিতে প্রাধান্য বিস্তার নিয়েও দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ প্রায় ১০০ পদে নিয়োগের জন্য শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে। ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামন ওরফে ইমন ওই সব নিয়োগে নিজেদের প্রার্থীদের সমানসংখ্যক পদ দাবি করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ উপাচার্যের পক্ষ নিয়ে সাধারণ সম্পাদককে কম পদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পক্ষ তা মেনে নেয়নি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও অ্যালামনাই উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধন ফি ও অন্যান্য খাত থেকে প্রাপ্ত অনুদানের অর্থের একটি মোটা অঙ্ক অবশিষ্ট রয়েছে। এই অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়েও ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মেয়াদ আগামী এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ার কথা। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে নিজেদের পক্ষের সদস্য বাড়ানোর জন্য মরিয়া ছিল ছাত্রলীগের দুই পক্ষই। এসব বিষয় নিয়ে দুই পক্ষই গত বুধবার থেকে টানা তিন দিন ক্যাম্পসে মহড়া দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল রণজিৎ মার্কেটের সামনে দুই পক্ষের প্রথম পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ বাধে। পরদিন সংঘর্ষ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। ওই দিন উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি। এর ধারাবাহিকতায় শনিবার ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ হারায় একটি নিরীহ শিশু।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামানের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রফিকুল হক গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখানে ছাত্রলীগের কোনো ভূমিকা নেই।’
প্রাণহীন ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্ররা এবং গতকাল সকাল আটটার মধ্যে আবাসিক ছাত্রীরা হল ছেড়ে গেছেন। গতকাল ক্যাম্পাসে কোথাও কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি।
মামলা: রাব্বি নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রাব্বির বাবা দুলাল মিয়া। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল করিম জানান, ছাত্রলীগের ২৫ জন কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
রাব্বির দাফন: গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং সেন্টার মাঠে রাব্বির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রফিকুল হক, ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাংসদ মতিউর রহমান, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া, পুলিশ সুপার গোলাম কিবরিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ প্রায় দেড় হাজার মানুষ অংশ নেন। পরে রাব্বির মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তদন্ত কমিটি: শনিবারের ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সামগ্রিক ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফিজুর রহমান। কমিটির সদস্যসচিব কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়াউল হক।
এ ছাড়া হলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম জিয়া উদ্দিন, সদস্যসচিব অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শাহীন ইসলাম খান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নজিবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, প্রথম তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবস ও অন্য কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.