পাঠকের মন্তব্য- এই অন্ধকার রাজনীতি আর কতকাল?

অনলাইনে প্রথম আলো (prothom-alo.com) পড়া হয় ১৯০টি দেশ থেকে। পাঠকেরা প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত দেন। তাঁদের এ মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।

ছাত্রলীগের গুলিবিনিময়ে প্রাণ গেল শিশুর
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দুই পক্ষের মারামারিতে প্রাণ হারিয়েছে স্থানীয় এক শিশু। এ ঘটনা অনলাইনে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। নাহিদ আরজুমান বানু লিখেছেন: এ আর নতুন কী? মা-বাবা সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। আর তাঁরা করেন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি ও গোলাগুলি। আহত হলে হাসপাতালে দৌড়ান। এসব ঘটনায় কেউ আহত হলে তাঁকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে জেলে পাঠানো উচিত। হাসপাতাল সর্বসাধারণের জন্য, কোনো অপদার্থের জন্য নয়। ছাত্রলীগ বলে পুলিশ ও প্রশাসনকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে ডোবানোর জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট।
রাহাত শিকদার: ভাষা হারিয়ে ফেলেও লিখতে হলো ওই ছোট্ট অবুঝ শিশুটির জন্য। ইচ্ছা হলো একটা চরম প্রতিবাদ জানানোর। আমার এই প্রতিবাদ রাব্বিকে আর ফিরিয়ে আনবে না জানি, তবু লিখি, তবু চোখ সোজা করে বুকের ভেতর আর্তনাদ করি। এখন আর রাজনৈতিক পিতা-মাতা বা রাষ্ট্রযন্ত্রের অধিকর্তা দিয়ে দেশের মানবিক সভ্যতা আর জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা সম্ভব নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রদের সামাজিকভাবে বর্জন ও তাঁদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। তাঁদের মা-বাবাকে ধিক্কার জানানোর সময় এসেছে। তাঁদের মা-বাবার যে সামাজিক দায়িত্ব, তা তাঁদের কঠোর হাতে পালন করতে হবে। প্রত্যেক মা-বাবাকে সন্তানদের খোঁজ জানতেই হবে। নইলে ওই সব মা-বাবা, যাঁরা জেনেও না জানার ভান করে ছেলের উন্মাদনা দেখতে ভালোবাসেন, তাঁদেরও সামাজিক অবক্ষয়ের দায়ভার নিতে হবে। অর্থাৎ ওই সব ছাত্র নামের অছাত্রদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের গুরুজনদেরও সামাজিক জবাবদিহি করতে হবে বৈকি। এ ছাড়া রাজনীতি যে প্রজানীতির যোগফল, তা মনে হয় আমাদের দেশের বিজ্ঞ রাজনীতিকেরা ভুলে আছেন। অবশ্য না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান করলে কে জাগাবে আপনাদের?
এম আসলাম: রাব্বি হত্যার বিচার চাই...! আর কত! এর পর কী বলবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? কোথায় আপনার পেপার স্প্রে? কোথায় আপনার সূক্ষ্ম বিষয়াদি? আপনাদের কোন্দলে কেন প্রাণ হারাবে সাধারণ মানুষ? আপনাদের রোষানলে শিশুরাও আজ নিরাপদ নয়। আপনারা যা করার করুন, দয়া করে শিশুদের রেহায় দিন!

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪ মাস হাসপাতালে
তায়েবী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর ছেলে ইয়াসিনের। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর ১৪ মাস ধরে তিনি কারাগারে না থেকে হাসপাতালে ছিলেন। প্রথম আলোয় এ খবর প্রকাশের পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ সম্পর্কে সুমন লিখেছেন: টাকা থাকলে সাজা হওয়া সত্ত্বেও জেলে যেতে হয় না। রাজনীতি করলে খুন করেও মাফ পাওয়া যায়। আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে খুব বেশি। আইনের শাসন হারিয়ে যাবে মনে হয়!
খাইরুল ইসলাম: টাকায় কী না হয়? খুনের আসামিকে ডিভিশন দেওয়া হয়। জেলখানায় কয়েদিদের জন্য হাসপাতাল, চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও টাকার জোরে মেডিকেলের কেবিনে রাখা হয়। ল্যাপটপ, মুঠোফোন...বন্ধু...আড্ডা—সবই! এ যেন হত্যার নিরাপদ পুরস্কার!

বিশ্বব্যাংকের অর্থ না পেলে বিকল্প ব্যবস্থা: মুহিত
পদ্মা সেতু প্রকল্পে সর্বশেষ এই বক্তব্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তাজেরুল ইসলাম লিখেছেন:
এবার কথাটা ভালো লাগল। ঘটনার শেষ পর্যায়ে এসে এখন এটাই বোঝা যাচ্ছে, এক মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করলেও পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে। এতে বাংলাদেশের সাহসিকতা প্রকাশ পাবে। এবার পদ্মা সেতু হবেই হবে। কারণ, এবার আমরা অন্যের ওপর দায়িত্ব না দিয়ে নিজেরাই মাঠে নেমেছি।
আশেক উল্লাহ: আমাদের নেতাদের অদূরদর্শিতা, অনভিজ্ঞতা ও অপরিণামদর্শী কার্যক্রম, লাগামহীন ও অবাঞ্ছিত কথাবার্তা সার্বিক অবস্থাটাকে এমন এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সত্যি খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার! অধিকন্তু এ ধরনের অবস্থায় পরিত্রাণের জন্য যে সফল কৌশল দরকার, তা আমাদের নেই। উপরন্তু জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এগিয়ে গেলেও আংশিক সফল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর যাঁকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কুরুক্ষেত্রের সৃষ্টি, তাঁকে তো প্রধানমন্ত্রী নিজে এক নম্বর দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এত সার্টিফিকেট পেয়েও মনে হয় শেষরক্ষা হবে না। আর এ জন্য মূল্য দিতে হবে দলকে।

আবারও এক-এগারো আসতে পারে কি?
আব্দুল কাইয়ুম তাঁর নিয়মিত কলামে এই প্রশ্ন তুলেছেন। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আবদুল মজিদ কাজী লিখেছেন:
এক-এগারো সেদিনই সুনিশ্চিত হয়ে গেছে, যেদিন সরকারি দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে নিছক আদালতের বাহানায়। যে দেশে যে প্রথা দরকার, গণতন্ত্র রক্ষায় তা-ই আইন। শান্তিতে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন যে ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে সক্ষম, তা-ই বিধান।
মো. শাহ আলম: আমরা তত্ত্বাবধায়কও বুঝি না, অন্তর্বর্তীকালীনও বুঝি না—আমরা চাই নিরপেক্ষ সরকার। যে কিনা সব দলকে সমান সুযোগ দেবে আর জনগণ তাদের কাউকে নির্বাচন করবে। আর যদি এক-এগারো আসে, তবে সরকারের জন্য তা হবে চরম খারাপ। তারা ওই পরিস্থিতির জন্য দায়ী থাকবে। আর তার সুফল পাবে বিএনপি ও সাধারণ জনগণ। সরকারের উচিত হবে, স্রোতের উল্টো না হেঁটে জনগণের হূদয়ের ভাষা বোঝা।
মহিউদ্দিন মসউদ: আমাদের রাজনীতিকে এই দুই ধারা যেখানে নিয়ে এসেছে, সেখানে গণতন্ত্র নেই, আছে দুই নেত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন। সংগত কারণেই যদি এখানে জাতিসংঘের প্রধান এসেও নির্বাচনের তদারকি করেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তারপর যারা পরাজিত হবে, তারা তা মানবে না। এই বাস্তবতায় দেশের মানুষ যদি এক-এগারোর সমাধান খোঁজে, তাহলে কি অন্যায় করবে? আমরা সবকিছু জানার পরও বারবার একই আকাঙ্ক্ষায় আবর্তিত হই, আমাদের সিদ্ধান্তও একটি কোনো রকম নির্বাচন হলেই সমাধান। বিষয়গুলোকে নিয়ে এখন আমাদের আরও অনেক বেশি ভাবা উচিত। এই অন্ধকার রাজনীতিতে আমরা আর কতকাল থাকব? আমরা কি বের হতে জানি না? আমরা জানি, কিন্তু ইচ্ছা জাগে না। আজ সেই ইচ্ছা জাগানোর সময়। চাই আমূল পরির্বতন।
ফারুক আলম: ওই দুই বছর অনেক শান্তিতে ছিলাম।

সবই যদি সেনাবাহিনী করে, জনপ্রশাসনের কী কাজ?
প্রথম আলোয় সাম্প্রতিক এক কলামে এ প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসিফ লিখেছেন: আমি এই লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। কয়েক দিন আগেও আমি বলেছিলাম যে হাতিরঝিল প্রকল্পে আমরা সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিচ্ছি ঠিক আছে। কিন্তু আসল সমস্যা, আমাদের জনপ্রশাসন যে দুর্নীতি আর দলীয়করণে একেবারে পচে যাচ্ছে, এটা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না কেন?
ফারিহা তাবাসসুম: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সব সময় জটিল রোগের দাওয়াই হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেনাবাহিনী দিয়ে অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করিয়ে নেওয়ার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। এতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও দেউলিয়াপনা প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার, এত সব কাজ সেনাবাহিনী নিঃস্বার্থভাবে সম্পন্ন করে দিলেও অনেকে কথায় কথায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না! সরকারই তাদের এসব কাজের দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তাহলে শুধু শুধু সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে কী লাভ?
এম এ জীবন খান: আমাদের দরকার কাজের। কে করল, সেটা দেখার দরকার নেই। আর সেনাবাহিনীর ওপর মানুষের যতটুকু আস্থা আছে, জনপ্রশাসনের ওপর তা নেই।

(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.