৪ বছর বন্দি থেকে খাঁচাতেই মারাই গেল ইমাম! by মো. আব্দুল বাতেন

খাঁচায় ৪ বছর বন্দি থেকে খাঁচাতেই মারা গেলেন ইমাম! মঙ্গলবার সকালে খাঁচায় আটক অবস্থাতেই তাকে মৃত পাওয়া যায়। অনেকদিন ধরে খাঁচার ভেতরে আটকা থাকার কারণে,
চিকিৎসায় অবহেলা এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভাবে তার এমন অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে তার প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন।

জানা যায়, গোদাগাড়ী পৌর এলাকার রামনগর গ্রামের আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিনের ছেলে ইমাম হোসেন (২৯)।

৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে ২য় ছেলে ইমামের চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের লোকজন পাবনা মানসিক হাসপাতাল, মানসিক চিকিৎসক ও কবিরাজের কাছে গিয়েও সুস্থ করে তুলতে পারেনি।

চিকিৎসক-কবিরাজের কাছে ঘুরতে ঘুরতে শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হন তারা। এমনকী আর্থিকভাবে তারা নিঃস্ব হয়ে যান।


শেষে মানসিক ভারসাম্যহীন ইমামকে ‘পাগল’ হিসেবে লোহার তৈরি খাঁচার ভেতরে পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখেন তার পরিবারের সদস্যরা।

গত ৪ বছর ধরে ইমাম খাঁচার ভেতরেই খাবার খেতেন, প্রস্রাব-পায়খানা করতেন এবং সেখানেই ঘুমাতেন।

ইমামের এমন করুণ মৃত্যুতে তার প্রতিবেশীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

প্রতিবেশী ফারুক বাংলানিউজকে জানান, ইমাম স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় তাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন এবং তার চলাফেরা ছিল বন্ধুসুলভ।

তিনি বলেন, “ইমাম ছিলেন বন্ধুসুলভ। তিনি প্রতিবেশীদের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসতেন।”

আরেক প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, তাকে দেখার জন্য কাছে গেলে ইমাম আকুতি করে বলতেন- ‘খাঁচার দরজা ও পায়ের শিকল খুলে দাও। আমি খুবই অসুস্থ। হাসপাতালে যাবো। খাসির মাংস দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। কতদিন বাইরে যেতে পারিনি। ঘুরে বেড়াতে চাই।’

ইমামের মা জানান, গোদাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একদিন সড়ক দুর্ঘটনার খবর শুনে লাশ দেখতে যায়। লাশ দেখার পর থেকেই ইমাম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু, ইমাম আর স্কুলে আর যেতে চায়নি।

তিনি বলেন, “ইমাম এক সময় ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। বিয়ে দিলে আবারও মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে। এতে তার স্ত্রী ছেড়ে চলে গেলে ইমাম আবার বিয়ে করে।

১ম ও ২য় স্ত্রীর কেউই ইমামের সঙ্গে ঘর সংসার না করায় ইমাম দিশেহারা হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ‘পাগলামির মাত্রা’ বেড়ে যায়।”

তিনি জানান, বাড়ির সামনে রাস্তায় ছেলে, মেয়ে যাকেই পেতো, তাকেই মারধর ও অশালীন ভাষায় গালাগালি করতো। এ নিয়ে লোকজনের কাছে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইমাম বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর ও সবাইকে মারধর করতো। একপর্যায়ে ইমাম হিংস্র আচরণ করতে থাকলে বাধ্য হয়ে একটি লোহার খাঁচা বানিয়ে পায়ে বেড়ি দিয়ে খাঁচায় আটকে রাখা হয়।

ইমামের বাবা বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার সকাল বেলা ইমামকে দেখার জন্য খাঁচার কাছে গেলে তাকে শুয়ে থাকতে দেখে ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি তার। এর পরই জানা যায়, ইমাম আর বেঁচে নেই।

তিনি গম্ভীর কণ্ঠে জানান, ইমাম হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় লোহার খাঁচা তৈরি করে তাতেই রাখা হতো তাকে। শেষপর্যন্ত খাঁচাতেই মরণ হলো তার!

এদিকে, প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছেন, অনেক বছর ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাঁচায় থাকার কারণে ইমাম আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.