ছাপার কাজে জীবন চলে by জিয়াউর রহমান চৌধুরী

দিন যতই যাচ্ছে, মানুষের কাজের ক্ষেত্রও তত বাড়ছে। একসময় কাজের যে খাতটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, তা-ই কয়েক বছরের মধ্যে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। বদৌলতে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তেমনই একটি খাত হলো প্রিন্ট বা ছাপার ব্যবসা, যেটি এখন নতুন করে প্রসারিত হচ্ছে।
কারণ মানুষ তার ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য প্রয়োজনের তাগিদে প্রচার-প্রচারণার ওপর অধিকতর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় কাজটির চাহিদা বেড়েছে। তবে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট তথা ছাপার কাজের মধ্যে স্ক্রিনপ্রিন্টের ব্যবসাতে কম পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক লাভের সুযোগ আছে। সে জন্য এ কাজ বা ব্যবসার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে দক্ষ ও সৃজনশীল লোকজনের চাহিদা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

কাজটা কেমন
বরিশালের দুই বন্ধু মেহেদী হাসান ও জাহিদ হাসান বছর পাঁচেক আগে অ্যাসারটেইন মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরই মধ্যে তাঁদের প্রিন্টিং ব্যবসা বা ছাপার কাজ বরিশালের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। তাঁরা পটুয়াখালী ও রাজধানী ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির দুটি শাখা খুলেছেন।মেহেদী হাসান জানান, ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেও এখন কাজের আদেশ বাড়ায় প্রতিদিনই পণ্য সরবরাহ করতে হয়। আর এসবের মধ্যে বেশির ভাগ ছাপার কাজই থাকে প্রচার-প্রচারণা বা অনুষ্ঠান আয়োজনকেন্দ্রিক। এর মধ্যে স্ক্রিন প্রিন্টে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার-ফেস্টুন এবং নানা উৎসব-দিবস বা অনুষ্ঠান উপলক্ষে মগ, টি-শার্ট, কলম, ক্যাপ, ক্রেস্ট, ট্রফি ইত্যাদিতে ছাপার কাজ করে দিতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুলের ইউনিফর্ম, টাই, পকেট ও প্রতিষ্ঠানের লেবেল, কোটপিন ইত্যাদি তৈরির কাজও থাকে।
ঢাকার বঙ্গবাজারের প্রতিষ্ঠান ইমাজিনের স্বত্বাধিকারী মো. শাহীন ১৫ বছর ধরে গেঞ্জি, ব্যাগ ও সোয়েটার ইত্যাদি ছাপার কাজ করছেন। তাঁর মতে, স্ক্রিনপ্রিন্টের ছাপার কাজ বাড়ছে নানা কারণে। অনেকেই টি-শার্ট, ব্যাগ বা স্মারকে নিজেদের কাজের স্মৃতি ধরে রাখতে স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ করিয়ে নেন।

কী করতে হবে
সাধারণত টি-শার্ট বা কাপড়জাতীয় কোনো বস্তুতে বিভিন্ন ধরনের ছাপার কাজ করে ব্যবসা করা যায়। তবে স্থানীয়ভাবে কাজ করলে মূলধন ও ঝুঁকি কম থাকে বলে এখানে বিনিয়োগ করে যে কেউ সহজেই লাভবান হতে পারেন। স্ক্রিনপ্রিন্টের ব্যবসা করতে গেলে আগ্রহী ব্যক্তিকে গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখতে হবে বলে জানান স্ক্রিনপ্রিন্ট বা ছাপা ব্যবসায়ী মো. শাহীন। তিনি আরও বলেন, কয়েকজন লোকবল, সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি, ডাইস, কাঁচামাল যেমন রং, রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে ছোট্ট একটি দোকান বা অফিসেই স্ক্রিনপ্রিন্টের ব্যবসা শুরু করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেখানে ব্যবসা শুরু করবেন সেখানে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু; বা এ রকম কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কেমন? সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে স্থানভেদে এক থেকে দুই লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। মেহেদী হাসান জানান, এ ধরনের কাজে প্রথম দিকে কিছু স্যাম্পল বা নমুনা জোগাড় করে নিতে হয়। এসব স্যাম্পল দেখিয়েই কাজ পাওয়া যায়।

এগিয়ে যেতে হলে
স্ক্রিনপ্রিন্ট ব্যবসা বা ছাপার কাজে যত সৃজনশীলতা ও পেশাদারি দেখানো যাবে, তত তাড়াতাড়ি উন্নতি করা যাবে বলে মনে করেন মো. শাহীন। তিনি বলেন, ছাপা বিষয়ে কর্মীদের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না হয়ে উদ্যোক্তা নিজেই যদি বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে এ ব্যবসায় ঝুঁকি বা ক্ষতির আশঙ্কা কম। এ কারণে ছাপার রং, ফেব্রিকস, ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ছাপা ব্যবসায় ভালো করা প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান বলেন, প্রথম দিকে সহজে কাজ পাওয়া যায় না। পেলেও তা অল্প পরিমাণের হয়ে থাকে। এই অবস্থায় কম লাভে কাজ পেলেও কাজ করতে হবে। কাজের মানের বিষয়ে কোনো হেঁয়ালি করা যাবে না। অনেক সময় অধিক কাজ পেলে কাজের মান খারাপ হয়ে যায় এবং সব নকশা এক রকম হয়ে যায়। এসব দিকে খেয়াল রেখে ভালো মানের কাজ দিতে পারলে এগিয়ে যাওয়াটা সহজই হবে বৈকি।

No comments

Powered by Blogger.