তলে তলে আলোচনা হয় না তলে তলে ষড়যন্ত্র, সরকার সেটাই করছে- ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে খালেদা

 নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বর্তমান সরকার বিএনপির সঙ্গে তলে তলে আলোচনার কথা বলে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই। তলে তলে আলোচনা হলে তো আমি জানতাম। তাহলে আপনারা কার সঙ্গে আলোচনা করছেন? তলে তলে আলোচনা হয় না, ষড়যন্ত্র হয়। তাই আলোচনা করতে হলে প্রকাশ্যে করতে হবে তলে তলে নয়। আর আপনাদের কোন ফর্মুলায়ই কাজ হবে না। ফর্মুলা একটাই আর তা হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের প্রধান কে হবে। আমাদের কথা পরিষ্কার আপনাদের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। আগের মতো নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে ১ জন প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ জন উপদেষ্টা নিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া কাজ হবে না।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে ছাত্রদলের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল ৩টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে খালেদা জিয়া ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকাও উত্তোলন করেন। এর পর জাতীয় এবং দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সরকারকে সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করার অনুরোধ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের হাতে যেন গণতন্ত্র ধ্বংস না হয় সে অপবাদ থেকে বাঁচতে চাইলে অবিলম্বে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল বিল আনুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। দেশের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হতে দেয়া হবে না। যারা দেশ গড়তে চায়, তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ রক্ষা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আসতে চাইলে তাদের সঙ্গে নিয়ে দেশরক্ষার জন্য কাজ করতে আপত্তি নাই। আমরা চাই সবাই মিলে দেশ গড়ব।
খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে আমরা গোপনে আলোচনায় বিশ্বাস করি না। আমরা সব কিছু নিয়েই প্রকাশ্যে আলোচনা করি। এর আগেও আমাদের সময় নির্দলীয় সরকার নিয়ে অনেকবার প্রকাশ্যে সংলাপ হয়েছিল। স্যার স্টিফেন নিনিয়ানের মধ্যস্থতায়ও আলোচনা হয়েছিল। তখন আপনারা মানেননি। বরং জ্বালাও-পোড়াও করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনই কোন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হতে পারেনি, ভবিষ্যতেও হবে না। তাই আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচন নয়।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে মিথ্যে মামলায় বন্দী করেছে অথচ শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ফাঁসির আসামিদের ছেড়ে দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে মির্জা ফখরুলের মুক্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। আওয়ামী লীগের হাতে দেশ নিরাপদ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ কোন দল করত না অথচ তাকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিন তো অবৈধ সরকার। তাদের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করলে হবে না। আপনারাই তলে তলে তাদের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন। এর আগে স্বৈরাচারী এরশাদের সঙ্গেও আপনারা তলে তলে আঁতাত করেছিলেন। তিনি বলেন, যারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে তাদের সব সময়ই আওয়ামী লীগ সহযোগিতা করে।
খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নেতাতর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। দেশের প্রতি তোমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সেøাগান ও মারপিটের রাজনীতি চাই না। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ছাত্ররাই সফল করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতির আগে তোমাদের প্রধান কাজ হলো লেখাপড়া করা। জিয়ার জাতীয়তাবাদের দর্শন দেশের মানুষের কাছে তোমাদের পৌঁছে দিতে হবে। প্রকৃত ছাত্রদের দিয়েই এই সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। আমরা চাই না অছাত্ররা ছাত্রদল করুক। আর তোমাদের কাজ লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনের সমস্যা নিয়ে রাজনীতি করা। ছাত্রলীগের কর্মকা-ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারী দলের ছাত্রসংগঠনকে ছাত্রদের সংগঠন বলা যায় না। তাদের হাতে বইখাতা নেই। আছে বন্দুক আর রামদা। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি করছে। অন্য সংগঠনকে সেখানে যেতে দেয় না। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তারা অস্ত্রাগারে পরিণত করেছে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রেখেছিল। সিলেটে এমসি কলেজের ১০০ বছরের হল ছাত্রলীগ পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের ছাত্র বলা যায় না। তারা সন্ত্রাসী। সরকারের কারণেই শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচন হয় না বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে সহাবস্থান করতে দেয় না সরকারী দল।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বৈরাচারী এরশাদের সময় নির্বাচনে যাওয়া উচিত বলে আমাকে বোঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তা করিনি। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা পরে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আন্দোলন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে পরে ক্ষমতায় গিয়েছিলাম। আর আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের সঙ্গে তলে তলে আঁতাত করে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করেছে তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।
আওয়ামী লীগের কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে গিয়ে থেকেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করলেও মুক্তিযোদ্ধা নয়। কারণ, রণাঙ্গনে যুদ্ধ না করলে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না। আমরা যুদ্ধ করেছি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। এই রক্ত বৃথা যেতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তি জয়ী হচ্ছে। দেশের জনগণ বুঝে গেছে. যারা রাষ্ট্র আর জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এ সরকার বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ করছে।
ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ঢাবি সভাপতি মহিদুল হাসান হিরু, মহানগর উত্তরের সভাপতি আবুল মনছুর খান দীপক দক্ষিণের ইসহাক সরকার। অনুষ্ঠানে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন রাজীব আহসান।
ছাত্র সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, শামসুজ্জামান দুদু, মোঃ আবদুল মান্নান, ডা. জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু, সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন, সংসদ সদস্য আসিফা আশরাফী পাপিয়া, নিলুফার চৌধুরী মনি শাম্মি আখতার। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে সন্ধ্যার পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.