জুরাইনে আওয়ামী লীগ নেতা খুনে কেউ গ্রেফতার হয়নি

বিদায়ী বছরের থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর নিজ বাসার সামনে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে হত্যা করা হয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেনকে। পারিবারিক কিংবা ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটতে পারে।
হত্যাকা-ের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে সেভেন পয়েন্ট সিক্স বোরের ২টি বুলেটের খোসা উদ্ধার হয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের মেয়ে পাপিয়া সুলতানা পাপড়ি বাদী হয়ে রাজধানীর কদমতলী থানায় অজ্ঞাত ৪-৫ সন্ত্রাসীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। হত্যাকা-ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি নিহতের একমাত্র ছেলে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন পূর্ব জুরাইনের ২৭ নম্বর নিজ বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। ইসমাইল হোসেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক, বৌবাজার ব্যবসায়ী সমিতি এবং ৮৯ নম্বর ওয়ার্ড পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ছিলেন।
নিহতের মেয়ে পাপিয়া সুলতানা পাপড়ি জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনার সময় তার পিতা ইসমাইল হোসেন (৬৫) বাজার থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন রাত প্রায় সাড়ে ৯টা। বাড়ির মূল গেট থেকে মাত্র ৪-৫ ফুট দূরে একটি রাস্তার গলির মুখে পৌঁছামাত্র ৪-৫ জন তার পিতাকে অবরোধ করে ফেলে। সন্ত্রাসীরা তার পিতার মাথায় গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে দ্রুত বাড়ির বাইরে বের হলে তিনি ৪-৫ জনকে গলির রাস্তা ধরে দ্রুত হেঁটে যেতে দেখেন। দ্রুত পিতাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই রাত ১১টার দিকে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। নিহতের মাথায় একটি বড় গর্তের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, তাঁর পিতা তাঁদের ৬ বোন ও এক ভাইকে একটি করে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। তাঁকেও তাঁর পিতার পাশেই একটি ৫ তলা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। সেই বাড়িতেই সপরিবারে বসবাস করছেন।
রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে ইসমাইল হোসেনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই নিহতের পরিবারের সদস্যরা লাশ নিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি থানাধীন চানপাড়ার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে ইসমাইল হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহতের একমাত্র ছেলে নূর মোহাম্মদ জনকণ্ঠকে জানান, তাঁর ৬টি বোন আছে। তিনি ভাইবোনদের মধ্যে পঞ্চম। সামান্য লেখাপড়া করেই শেষ। বর্তমানে বিদেশ পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। কী কারণে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটেছে সে সম্পর্কে নূর মোহাম্মদ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। নূর মোহাম্মদ বলেন, গ্রামের বাড়িতে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকায় ফিরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাব। আপাতত এ ব্যাপারে কোন কথা বলব না। হত্যাকা-ের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঢাকা সিটি কর্পোরশেনের ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ও ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা মীর হোসেন মীরু জনকণ্ঠকে জানান, নিহত আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর প্রতিবেশী। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে সবাই মিলে ৮৯ নম্বর ওয়ার্ড পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বানানো হয়েছে। তিনি যে কারও আপদে-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কী কারণে এমন হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে সে বিষয়টি তাঁর অজানা।
রাজধানীর কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, নিহত ইসমাইল হোসেন রেলওয়ের জায়গার ওপর নির্মিত বৌবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন। বাজারটিতে কাঁচামালের ব্যবসা হতো। এ বাজারে নানা হাঙ্গামায় তিনি প্রায়ই সালিশ দরবার করতেন। স্থানীয় সালিশ দরবারে অনেক সময়ই চড়-থাপ্পড়ের ঘটনা ঘটেছে। নিহতের ঢাকায় ৬টি বাড়ি রয়েছে। সম্প্রতি তিনি রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়ি কিনেছেন। যদিও বাড়ি কেনার তথ্য ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন নিহতের মেয়ে এবং মামলার বাদী পাপিয়া সুলতানা পাপড়ি। হত্যাকা-ের ঘটনায় অজ্ঞাত ৪-৫ সন্ত্রাসীকে আসামি করে নিহতের মেয়ে পাপিয়া সুলতানা পাপড়ি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক সুজিত কুমার সাহা জনকণ্ঠকে জানান, কী কারণে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে ২টি বুলেটের খোসা উদ্ধার হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি। হত্যাকা-ের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক, পারিবারিক, ব্যবসায়িক বা ব্যক্তি বিরোধের মতো কোন বিষয়াদি আছে কি না, তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হত্যাকা-ের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেমরা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিনহাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, হত্যাকারীরা খুব কাছ থেকে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে ইসমাইল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করতে পারে। নিহতের মাথা থেকে একটি বুলেট উদ্ধার হয়েছে। প্রচ- আক্রোশ থেকে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আলামত হিসেবে জব্দকৃত বুলেটের খোসার ব্যালাস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। খুনীদের গ্রেফতারে সব ধরনের চেষ্টা এবং ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে।

No comments

Powered by Blogger.