রাজশাহী বন্ধুসভার এক দিন by মনিরা রহমান

কুয়াশায় ঢাকা সকাল। ২৫ ডিসেম্বর। রাস্তায় লোক চলাচল শুরু হওয়ার আগেই রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধুরা যাত্রা করেছেন চর খিদিরপুরের উদ্দেশে। কারও মাথায়, কারও কাঁধে কম্বলের বোঝা। প্রথমে ছোট নদী নৌকায় পাড়ি দিয়ে, চরের পথে হাঁটা। বিস্তীর্ণ পদ্মার চর। দেড় ঘণ্টার পথ।
‘পা’ ছাড়া কোনো বাহন নেই। নদীর মধ্যবর্তী এ চরে নেই কোনো বসতি। বালুময় পথে পা ডুবে যায়। তবু হেঁটে চলেন বন্ধুরা।
ধু ধু চর পার হয়ে পদ্মার মূল ধারার কাছে পৌঁছানো গেল। সেখান থেকে খেয়া পার হয়ে ‘চর খিদিরপুর’। বন্ধুদের হাঁটা পথের এখানেই শেষ নয়। গন্তব্য চর খিদিরপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। সকাল ১০টায় বন্ধুরা যখন স্কুলে পৌঁছলেন তখনো সূর্যের দেখা নেই। দেখা নেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরও। সবাই বাবা-মার সঙ্গে বাড়ির কাজে ব্যস্ত। ওরা ভাবতেই পারেনি এমন ঠান্ডায় বন্ধুরা সময়মতো পৌঁছাতে পারবেন। ১১টার মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কারও কারও অভিভাবকও স্কুলে এসে উপস্থিত হলেন। স্কুলে তিন ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫২, শিক্ষক চারজন।
সবার জন্য রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধুরা কম্বল সংগ্রহ করেছেন। কম্বল দাতা আইএফআইসি ব্যাংকের রাজশাহী শাখা। হাতে হাতে কম্বল দেওয়ার পর সবার মুখের হাসির সঙ্গে সূর্যও হেসে উঠল একটু সময়ের জন্য। বন্ধুরাও তাঁদের কার্যক্রম শেষ করে দেড় ঘণ্টার ফিরতি পথ। ঠান্ডায় মৃত্যুর খবর আসে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। শীতের একটি কাপড়ের অভাবে মানুষের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারি না আমরা কোনোমতেই। জানি, অনেকেই শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু সেটি পৌঁছাচ্ছে শীতে মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর। গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় প্রতিটি অসহায় মানুষের কাছে শীতের কাপড় পৌঁছাতে ব্যবস্থা করতে হবে শীত শুরুর আগেই। পরিকল্পনা করতে হবে আরও আগে। তবেই দেশজুড়ে নতুন বছর আসবে আনন্দঘন হয়ে।
 সভাপতি, রাজশাহী বন্ধুসভা

No comments

Powered by Blogger.