বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন-বিএনপির ভুলের কারণে পাটশিল্প ধ্বংস : প্রধানমন্ত্

বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাবেক জোট সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাজার হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১৯৯৪ সালে বিএনপি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ জুট সেক্টর অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্রেডিট চুক্তি করে। শর্ত ছিল পাটকলগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। বিনিময়ে ২৪৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে। পেয়েছে মাত্র ৫২ মিলিয়ন ডলার। এর ফলে পাটশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। ওই সময়ের বিএনপি সরকার সেগুলো লুটপাট করে খেয়ে ফেলে। আদমজী জুটমিলসহ অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে টাকা আনার চুক্তি করে দেশীয় শিল্পের ক্ষতি করা হয়েছে।'
বর্তমান সরকার বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালু করছে উল্লেখ করে পাটের জন্ম-রহস্য উন্মোচনের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান সরকারকে ব্যবসাবান্ধব সরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তাঁর সরকার ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় না বরং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সহযোগিতা করে।'
প্রধানমন্ত্রী সরকারের সৃষ্ট সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আরো বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল সাফল্যে আপনাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এ জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আরো বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।' দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বিশ্বে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য অর্জন করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনারা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে শুল্ক ও কর দিয়ে সরকার পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন।'
বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাশেম, মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান সুভাশীষ বোস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। রপ্তানি বাড়াতে পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনাদের নতুন পণ্য, নতুন বাজার ও নতুন দেশ খুঁজে বের করতে হবে এবং এ জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং একটি সময়োপযোগী উদ্যোক্তাবান্ধব শিল্পনীতি প্রণয়ন করেছে। ২০টি খাতকে থার্স্ট সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করে এসব খাতে বিনিয়োগে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। সরকার সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে বিগত চার বছরে বাংলাদেশে ৩৮২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টি হয়েছে। কানাডা, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মেক্সিকো, ব্রাজিলসহ অনেক দেশে রপ্তানি বেড়েছে। এর সঙ্গে চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানিতে ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চার বছরে এই প্রবৃদ্ধি ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রসারে সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের মাধ্যমেও অবকাঠামো গড়ে তোলাসহ গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
গত অর্থবছরে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ দেশ। পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি-ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈশ্বিক যোগাযোগ সামর্থ্য সূচকেও বাংলাদেশ ছয় ধাপ এগিয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১২ সালে রেকর্ড ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সরকারি খাতে পাঁচ লাখ ও বেসরকারি খাতে ৭৫ লাখসহ প্রায় ৮০ লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে মাথাপিছু আয় ৬৩০ থেকে ৮৫০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রাকে মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে।
বাণিজ্য মেলার সাফল্য কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বাণিজ্য মেলা এক সফল বাণিজ্য প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে এবং প্রতিবছর এর গুরুত্ব বাড়ছে। তিনি দেশবাসীকে আজ থেকে শুরু হওয়া ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন এবং এর বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে। এ বছর বিশ্বের ১২টি দেশের ৩০টি কোম্পানি মেলায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে নতুন দেশ হচ্ছে জাপান ও সিঙ্গাপুর। দেশি-বিদেশি পণ্যে মেলায় ৩৬২টি স্টল সজ্জিত রয়েছে। এতে রয়েছে ৯০টি প্যাভিলিয়ন ও ৪২টি মিনি প্যাভিলিয়ন। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রবেশ মূল্য- প্রাপ্ত বয়স্ক ২০ টাকা ও শিশু ১০ টাকা। সূত্র: বাসস, বিডিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.