বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি by সজীব মিয়া ও ওমর ফারুক

শুক্রবার সকাল। ঘন কুয়াশায় ঢাকা বরিশালের প্রকৃতি। শহরের তাপমাত্রা কমে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতে জবুথবু অবস্থা। এর মধ্যেই বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের নাসিমুজ্জামান মিলনায়তন চত্বর হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর।
বিভিন্ন জেলা থেকে চলে এসেছেন বন্ধুরা। কারণ, ওই দিন বরিশাল বন্ধু উৎসব।
উৎসবে অংশ নেয় ১৩টি বন্ধুসভা। এ ছাড়া শিক্ষানবিশ বন্ধুসভা হিসেবে অংশ নেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বন্ধু উৎসবের উদ্বোধন করা হয়, সঙ্গে তোলা হয় বন্ধুসভার পতাকাও। এরপর উৎসব-পতাকা তোলেন উৎসবে অংশ নেওয়া ১৩ বন্ধুসভার পক্ষে ১৩ জন নারীবন্ধু। তারপর এক বন্ধু আরেক বন্ধুর হাতে রাখি পরিয়ে দেশ গড়ার শপথ নেন। ঢাক-ঢোলের তালে তালে বন্ধুরা প্রবেশ করেন মিলনায়তনে। সমবেত কণ্ঠে বেজে ওঠে ‘গাই জীবনের জয় গান’। মাতৃভূমির গানের ওপর একটি কোরিওগ্রাফি দিয়ে সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু করেন বরিশাল বন্ধুসভার বন্ধুরা। কিন্তু তখনো অধিকাংশ বন্ধুসভা এসে পৌঁছেনি। কারণ, প্রকৃতি বাদ সেধেছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে। ঘন কুয়াশার জন্য ফেরি পার হতে পারেনি বন্ধুদের বহন করা গাড়ি। তাতে কি, উৎসব তো থেমে থাকতে পারে না। শুরু হয় বরিশালের বন্ধুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক পর্ব। একে একে তাঁরা পরিবেশন করেন সম্মেলনের গান, নৃত্য, আবৃত্তি। ইতিমধ্যে চলে আসে উৎসবে অংশ নেওয়া সব বন্ধুসভা।
উৎসব নিয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে শরীয়তপুরের সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমরা উৎসবের খবর জানতে পারি ১৫ ডিসেম্বর, তারপর থেকে প্রস্তুতি নিই। একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল সবার মধ্যে।’
আরেক বন্ধুৃ ফারজানা পপি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি, কিন্তু এমন উৎসবে কখনো অংশ নেওয়া হয়নি।’ পপি ঝালকাঠির বন্ধু।
হাসি-আনন্দে ভরে ওঠে মিলনায়তন। মাইক্রোফোন তখন বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামানের হাতে। না, এই কারণে হাসির রোল পড়েনি, কারণটা ভিন্ন। ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে প্রতিনিধি নৃত্য। এই তাল-মুদ্রাহীন নাচিয়েরা প্রথম আলোর প্রতিনিধি বা প্রতিবেদক।
শুরু হয় একে একে বিভিন্ন বন্ধুসভার পরিবেশনা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরাত জাহান ও অনুসূয়া কর্মকার পরিবেশন করেন নৃত্য। আবৃত্তি করেন ভোলা, বরগুনা বন্ধুসভার বন্ধুরা। হূদয়ে আমার বাংলাদেশ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন ঝালকাঠির বন্ধু বন্যা সাহা। কলাপাড়ার বন্ধুরা গম্ভীরা ও নাচ পরিবেশন করেন। একক অভিনয় করেন পিরোজপুরের বন্ধু সুচিত্রা মিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে লেখা কয়েকটি কবিতার অংশবিশেষ বরগুনার বন্ধু পূর্ণিমা রায় আবৃত্তি করেন।
কেউ হাঁ করে আছে, কেউ আবার নৃত্যের ঢঙে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে কেউ মিলনায়তনে ঢুকে গেলে ভিরমি খেয়ে যেত, মিলনায়তনসুদ্ধ মানুষ এই মূর্তির দিকে তাকিয়ে হা হা করে হাসছে কেন? তারা যে মূর্তি নয়, সেই ভুল ভাঙতেই একটু পর পর কলকাঠি নাড়ছেন সঞ্চালক রওশন ভাই। সঞ্চালক থামতে বলতেই নৃত্যাবস্থায় শরীরের যেকোনো ভঙ্গিতেই হোক, থামতে হবে। নড়লেই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ। এটা ছিল ভিন্নমাত্রার উপস্থাপনা। আর এ পর্বে প্রথম হন বরিশালের বন্ধু রাশেদ ইমাম।
বন্ধুরা যে সব কাজেই সমান পারঙ্গম, তা বোঝা গেল দুপুরের খাওয়ার সময়! অনুষ্ঠান চলছে, চলছে দুপুরের খাবারও। খাবার জন্য তো দুনিয়া থেমে থাকতে পারে না!
মঞ্চটা ক্ষণিকের জন্য হয়ে উঠল বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতির মাঠ। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল। প্রাণ নিয়ে ছুটে চলছে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। হত্যা করা হচ্ছে একজনকে। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এমন নাটিকা পরিবেশন করেন শরীয়তপুরের বন্ধুরা।
এদিকে মাদারীপুরের বন্ধুরাও কম যাননি। ‘কারার ঐ লৌহকপাট...’ গানের সঙ্গে নৃত্যের তালে মুগ্ধ করেন বন্ধুদের। গৌরনদীর বন্ধু শৈলি বিনতে ফিরোজ পরিবেশন করেন নৃত্য। এ ছাড়া তাঁরা বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় গান ও নাটিকা পরিবেশন করেন। বিভিন্ন পর্বে অংশ নেয় পটুয়াখালী, গলাচিপা, আমতলী ও কালকিনি বন্ধুসভা। উৎসবে সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনা করেন বরিশালের বন্ধু রুবাইয়াৎ কামাল। উৎসবে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিনিধি সাইফুর রহমান ও বন্ধুদের পক্ষে আপেল মাহমুদ।
বরিশাল বন্ধু উৎসবে পৃষ্ঠপোষকতা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

No comments

Powered by Blogger.