তিউনিসিয়া পরিস্থিতি কোন্ দিকে মোড় নেবে

তিউনিসিয়ার শাসক কোয়ালিশনের শরিকদের মধ্যেকার কোন্দল দেশকে আবার বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মাসে সিলিয়ানা প্রদেশে গোলযোগ হয়েছে। ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী হামাদ আল জাবালীর সরকার সেই গোলযোগ যেভাবে মোকাবিলা করেছে তাতে দারুণ উষ্মা প্রকাশ করেছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট মনসেফ মারজুকি।
দু’বছর আগে মধ্যাঞ্চলের সিদি বুজিদ শহরে বুয়াজিজি নামে এক যুবক আত্মাহুতি দেয়ার পর গোটা দেশ গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল জোয়ারে ভেসে চলেছিল। সেই জোয়ারে পতন ঘটে স্বৈরাচারী বেন আলী সরকারের। এক পর্যায়ে নির্বাচন হয় এবং ত্রিদলীয় কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু স্বৈরাচার উৎখাত হবার দু’বছর পর বেকারত্ব আজও গণঅভ্যুত্থানের সময়ের তুলনায় যথেষ্ট বেশি আছে। সিলিনিয়া শহরে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। দুর্নীতি আবার আগের চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। আরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে তিউনিসিয়ার প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হয়ে ১৩ ডিসেম্বর দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই ধর্মঘট আহ্বানের মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এক নতুন পথসন্ধিতে এসে পৌঁছাল যার মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে দেশ এক গভীরতর সঙ্কটে প্রবেশ করতে চলেছে।
এদিকে দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ার জনগণের মধ্যে ক্রমশ হতাশা দানা বাঁধছে। ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের চাপ ও অন্যান্য সঙ্কটের মুখে সিলিয়ানা শহরে সম্প্রতি বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
এ সম্পর্কে বিক্ষোভের আয়োজক এক নেতা বলেন, আমাদের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ এবং আইনসম্মত। আমরা চাকরি ও উন্নততর সেবা ব্যবস্থার দাবি করছিলাম। আমাদের এই প্রদেশটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনগ্রসর। আমরা এ অঞ্চলের জন্য অধিকতর সরকারী বিনিয়োগ ও অর্থ বরাদ্দের দাবি করছিলাম। তার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন অফিস থেকে গবর্নর হাউজ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু জবাবে আমাদের প্রতি রবার বুলেট ছোড়া হয়। সিলিয়ানা প্রদেশটি বরাবরই তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে উপেক্ষিত থেকেছে। এখনকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ আকার ধারণ করেছে। এদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বেন আলীর দামী দামী স্পোর্টস কার, অলঙ্কার, ঘড়িসহ হাজার হাজার বিলাসসামগ্রী নিলামে বিক্রির জন্য দেয়া হয়।
নিলামের উদ্বোধন করে সেদেশের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী তারেক ধাইয়ার । এই অর্থের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কাতার ও লিবিয়ার আর্থিক সাহায্যও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তারপরও তিউনিসিয়ার সময়টা এখন খুব কঠিন যাচ্ছে। দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে অসন্তোষ ও বিক্ষোভের খবর আসছে। এতে বিনিয়োগ হচ্ছে নিরুৎসাহিত। তার ওপর সেকুলার পন্থীদের সঙ্গে ইসলামপন্থী সালাফিদের বিরোধ বা দ্বন্দ্ব যেরূপ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তাতে তিউনিসিয়ার পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কি দাড়ায় বলা মুশকিল। চলমান ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.