অশান্ত হয়ে উঠছে সুদান

সুদানে সম্প্রতি কয়েক দফা ছাত্র বিক্ষোভ হয়ে গেছে। দারফুরে একটি খালের পাড়ে চার ছাত্রের লাশ খুঁজে পাওয়ার পর এই হত্যার প্রতিবাদ গত ১১ ডিসেম্বর রাজধানী খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।
এটা ছিল ছাত্রদের টানা চতুর্থ দিনের বিক্ষোভ। সরকারের ব্যয়সঙ্কোচ নীতির প্রতিবাদে গত জুনে উপর্যুপরি সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হবার পর এই প্রথম ছাত্রদের একটানা বিক্ষোভ হলো। সুদান এতদিন পর্যন্ত গণবিক্ষোভ এড়িয়ে আসতে পেরেছিল। তবে ছাত্র বিক্ষোভ যেভাবে দানা বেঁধেছে এবং তাতে যেভাবে গতি সঞ্চারিত হয়েছে তা থেকে মনে হয় প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশিরের সামনে দুঃস্বপ্নের দিন আসছে।
খার্তুমের দক্ষিণে কৃষি অঞ্চল দারফুরের গেজিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জলাশয়ে চার ছাত্রের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। টিউশন ফি থেকে অব্যাহতির দাবিতে বিক্ষোভরত ছাত্রদের সঙ্গে এই চারজনও ছিল। অভিযোগ আছে যে, শাসক দলের সমর্থকরা এদের ওপর হামলা চালিয়ে গুম করে ফেলেছিল। পরে তাদের লাশ ফেলে যায়। এই হত্যাকা-কে ঘিরে ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা চলে। তারপর শুরু হয় একের পর এক বিক্ষোভ। নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই হত্যাকা-ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে। চারজনের মৃত্যু কিভাবে ঘটেছে তা পরিষ্কার নয়। দু’জন ছাত্র এখনও নিখোঁজ। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে কর্তৃপক্ষ আইনজীবী ও বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দসহ কয়েক ডজন লোককে গ্রেফতার করেছে।
সুদানের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে দুই সুদানের মধ্যকার শান্তি প্রক্রিয়াও হোঁচট খেয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সম্প্রতি সুদান ও দক্ষিণ সুদান তাদের নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনার স্থান খার্তুম থেকে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় স্থানান্তর করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু খার্তুমের বিক্ষোভ পরিস্থিতি অপরিহার্যরূপে এ আলোচনার ওপর ছাপ ফেলার কথা। যুদ্ধবিক্ষত সীমান্ত প্রদেশ দক্ষিণ করদোফান ও ব্লুনাইলে সুদান গণমুক্তি বাহিনীর সৈন্যদের নিরস্ত্র করার প্রশ্নে মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ার ফলে ইতোমধ্যেই সুদান ও তার ১৭ মাসের পুরনো প্রতিবেশী দক্ষিণ সুদানের মধ্যকার সম্পর্ক বিষিয়ে উঠেছে।
সুদানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদুল রহিম মোহাম্মদ হাসান ও দক্ষিণ সুদানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন কুং নাইসুন খার্তুম ও জুবার মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করার লক্ষ্যে আফ্রিকান ইউনিয়ন বাস্তবায়ন প্যানেলে যোগদান করেন। এই প্যানেলের প্রধান হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি।
দক্ষিণ সুদানের প্রধান আলোচক পাগান আমুন আশা প্রকাশ করেছেন যে, সুদানী কর্তৃপক্ষ অর্থবহ আলোচনার প্রস্তাব দিলে শুধু তাহলেই আলোচনা ফলপ্রসূ প্রমাণিত হবে। আমুন বলেন, সুদানের শাসকদল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির ডেপুটি চেয়ারম্যান নাফি আলী নাফির সঙ্গে তার খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে। এবং তিনি তাকে জানিয়েছেন যে, দক্ষিণ কোরদোফান ও ব্লু নাইলে এসপিএলএম-এন যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। কারণ সেটা হবে আরেক দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নগ্ন হস্তক্ষেপের নামান্তর। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ সুদান প্রতিবেশী কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্য দিয়ে বিকল্প পাইপলাইন রুট নির্মাণ করতে চায়। কারণ শুধু সুদান হয়ে দক্ষিণ সুদানের তেল রফতানি করার একটিমাত্র রুটের ওপর নির্ভর করা যেতে পারে না। এই নির্ভরশীলতা ভাংতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুদানী ভূখ- দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল রফতানি নিয়ে খার্তুম ও জুবার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। দক্ষিণ সুদানের ভূখ- যে বিপুল তেল সম্পদে সমৃদ্ধ সে ব্যাপারে জোরালো আলামত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছেও এ ব্যাপারটা গোপন নয়। আমুন বলেন, ‘তেল আহরণের জন্য আমাদের চাই মূলধন ও কারিগরি বিশেযজ্ঞ জ্ঞান। কাজেই তেল রফতানির জন্য আমাদের বিভিন্ন পথ খোলা রাখার উদ্দেশ্যে আরও পাইপলাইন স্থাপন করা একান্তই প্রয়োজন।’
আমুনের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সালভা ফের জোর দিয়ে বলেন যে, দক্ষিণ করদোফান ও ব্লুনাইলের এসপিএলএম-এন জঙ্গীদের অস্ত্র সমর্পণ করতে বলা অসম্ভব।
এদিকে দেশের সমস্যাবলীকে আরও জটিল করে তুলে সুদানের নারী সমাজ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দিবস ঘোষণা করেছে। ছাত্র বিক্ষোভ ও নারীদের প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যে কোন যোগসূত্র না থাকলেও এই নারী আন্দোলন সেই সব সুদানীবিরোধী শক্তির কাছে সম্ভবত মধুর হয়ে বেজে উঠবে। এই বিরোধী শক্তি এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকলেও তারা সুদানী স্টাইলে আরব বসন্তের আগমন ঘটানোর এবং সুদান সরকারের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার জন্য বদ্ধপরিকর বলে মনে হয়।
চলমান ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.