দুদককে কাজ করতে হবে নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে- দুর্নীতিবাজদের বর্জন করুন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দুর্নীতিবাজদের ভোট না দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেই দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করা এবং শাস্তি দেওয়া।
সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির যে মহামারি চলছে, তা থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে হলে দুদক নামক প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ করতে হবে নির্ভয়ে ও পক্ষপাতহীনভাবে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গত সোমবার আয়োজিত সমাবেশে দুদক চেয়ারম্যান এ বক্তব্য দেন। গত ৯ ডিসেম্বর এই দিবস থাকলেও বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির কারণে পালিত হতে পারেনি। দেরিতে হলেও দুদক নড়েচড়ে বসেছে; এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র, হল-মার্ক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারিতে দুদকের তদন্তকাজকে মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছে।
কিন্তু এখনো অনেক কিছু বাকি। দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করাই যথেষ্ট নয়। সেই মামলার তদন্ত, অভিযোগ গঠন ও বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ায় কোথাও ঘাপলা থাকলে অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তা ছাড়া ক্ষমতার পালাবদলের পর মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার নজিরও কম নয়। সেদিক থেকে দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচারকাজ এক বছরের মধ্যে শেষ করার ওপর যে গুরুত্ব আরোপ করেছেন, তা সমর্থনযোগ্য।
দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিবাজদের ভোট না দেওয়ার পাশাপাশি এ ধরনের রাজনীতিকদের পরিত্যাগ ও প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। দুর্নীতিবাজদের উপযুক্ত জায়গা নাজিমউদ্দিন রোডের (কেন্দ্রীয় কারাগার) কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিবছর যদি ১০০ দুর্নীতিবাজ জেলে যান, তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।’ তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত। তবে কেবল রাজনীতিক নয়, সরকারি কর্মকর্তাসহ যাঁরাই দুর্নীতি করবেন, তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি মতৈক্য থাকা প্রয়োজন যে তারা কেউ দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নেবে না।
আর দুদককেও দায়িত্ব পালনে হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি উদ্যোগের ব্যাপারে দুদকের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল যথেষ্ট ইতিবাচক। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার অজুহাতে হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নিলেও দুর্নীতির মামলাগুলোর ওপর হাত দিতে পারেনি। দুদকের আইনে প্রতিষ্ঠানটির সুপারিশ ছাড়া দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করা যায় না। স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এটি দুদকের রক্ষাকবচও বটে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে পূর্বানুমতির বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। এখন শেষ হাতিয়ারটি কেড়ে নিয়ে দুদক সত্যিকার অর্থেই সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.