আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করে না, ব্যবসাবান্ধব সরকার- বাণিজ্যমেলা উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

বর্তমান সরকারকে ‘ব্যবসাবান্ধব’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, আমরা দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করছি। বিশেষ করে, দেশী ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছি।
তাঁরা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করবেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এটাই আমাদের নীতি। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে শুল্কমুক্ত রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রচলিত পণ্য উৎপাদন ও বাংলাদেশী পণ্য রফতানির জন্য ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন দেশ খুঁজে বের করতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০১৩ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম আবুল কাশেম, মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান সুভাশীষ বোস। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং একটি সময়োপযোগী উদ্যোক্তাবান্ধব শিল্পনীতি প্রণয়ন করেছে। ২০টি খাতকে থার্স্ট সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করে এসব খাতে বিনিয়োগে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। বর্তমান সরকার সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে বিগত চার বছরে বাংলাদেশে ৩৮২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, সে সময় বিশ্বমন্দা চলার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তখনকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা মন্দা মোকাবেলায় দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছি। একটি যুগোপযোগী ও উদ্যোক্তাবান্ধব শিল্পনীতি করা হয়েছে। আধুনিকীকরণ ও অটোমেশনের ফলে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে কাজের গতিও বেড়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এ সময় তিনি অনুষ্ঠানে গত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ব্যবসা-বিনিয়োগে স্থবিরতার কথাও মনে করিয়ে দেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে এনেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, বিগত বিএনপি সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেয়ার চুক্তি করায় বাংলাদেশ পাটজাত পণ্যের রফতানি বাজার হারিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে বিএনপি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ জুট সেক্টর এ্যাডজাস্টমেন্ট ক্রেডিট চুক্তি করে। শর্ত ছিল পাটকলগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। বিনিময়ে ২৪৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে। পেয়েছে মাত্র ৫২ মিলিয়ন ডলার। এর ফলে পাটশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। সে সময়ের বিএনপি সরকার সেগুলো লুটপাট করে খেয়ে ফেলে। আদমজী জুটমিলসহ অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের সময়ে বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালু করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা পাটের জন্ম-রহস্য উন্মোচন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করছি। বিশেষ করে, দেশী ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছি। তারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করবেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বাংলাদেশী পণ্য রফতানির জন্য নতুন নতুন দেশ খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সিরামিকজাতীয় পণ্যের বিদেশে চাহিদা রয়েছে। আমরা সিরামিকপণ্য বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। তিনি বলেন, আমরা কৃষিজাত পণ্য রফতানি করে ৪০ কোটি ডলার আয় করেছি। আমরা এ পণ্য বাজারজাত করতে বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে রফতানি আয় বাড়াতে পারি। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে আরও নজর দিতে হবে। দেশে পণ্য পরিবহনে বর্তমান সরকার গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্য বাজারজাত করতে আমরা নদী খনন অব্যাহত রেখেছি। এ ছাড়া কমখরচে পণ্য বহনে রেলের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সড়ক পথে পণ্যবহন খরচসাপেক্ষ বলে নদীপথ এবং রেলপথকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য আমরা নদী খনন এবং রেল যোগাযোগকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়াতে দুটি নদীবন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে শুল্ক ও কোটামুক্ত রফতানি সুবিধা আদায় করি। তারা অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যেই শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করি। একই সঙ্গে উন্নত ও উন্নয়শীল বিশ্বে শুল্কমুক্ত রফতানির প্রতিশ্রুতি আদায় করি। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে বলেন, আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে পেরেছি। দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করতে পেরেছি বলে এটা সম্ভব হয়েছে। এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বলে অর্থনৈতিক প্রবৃিদ্ধ বৃদ্ধি হয়েছে। এ জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি শীর্ষ দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থান অর্জন করতে পেরেছি আমরা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন (১৩০০ কোটি) মার্কিন ডলার, যা আগের চেয়ে অনেক বেশি।
আওয়ামী লীগের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা থ্রিজি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করেছি। এরপর ফোর-জি চালু করব। ডিজিটাল দেশ গঠনে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখন আর ঢাকায় বসে ব্যবসা করার প্রয়োজন হয় না। এ জন্য অনলাইনেই বাজারদর জেনে ঢাকার বাইরে থেকেই অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন।
বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিদ্যুত উৎপাদন তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি করে ৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। ৪৯২৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ২৭টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণাধীন বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়া। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই। তলে তলে আলোচনা হলে তো আমি জানতাম। তাহলে আপনারা কার সঙ্গে আলোচনা করছেন? তলে তলে আলোচনা হয় না, ষড়যন্ত্র হয়। তাই আলোচনা করতে হলে প্রকাশ্যে করতে হবে তলে তলে নয়। আর আপনাদের কোন ফর্মুলায়ই কাজ হবে না। ফর্মুলা একটাই আর তা হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের প্রধান কে হবে। আমাদের কথা পরিষ্কার আপনাদের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। আগের মতো নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে ১ জন প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ জন উপদেষ্টা নিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া কাজ হবে না।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে ছাত্রদলের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল ৩টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে খালেদা জিয়া ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকাও উত্তোলন করেন। এর পর জাতীয় এবং দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সরকারকে সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করার অনুরোধ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের হাতে যেন গণতন্ত্র ধ্বংস না হয় সে অপবাদ থেকে বাঁচতে চাইলে অবিলম্বে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল বিল আনুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। দেশের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হতে দেয়া হবে না। যারা দেশ গড়তে চায়, তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ রক্ষা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আসতে চাইলে তাদের সঙ্গে নিয়ে দেশরক্ষার জন্য কাজ করতে আপত্তি নাই। আমরা চাই সবাই মিলে দেশ গড়ব।
খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে আমরা গোপনে আলোচনায় বিশ্বাস করি না। আমরা সব কিছু নিয়েই প্রকাশ্যে আলোচনা করি। এর আগেও আমাদের সময় নির্দলীয় সরকার নিয়ে অনেকবার প্রকাশ্যে সংলাপ হয়েছিল। স্যার স্টিফেন নিনিয়ানের মধ্যস্থতায়ও আলোচনা হয়েছিল। তখন আপনারা মানেননি। বরং জ্বালাও-পোড়াও করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনই কোন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হতে পারেনি, ভবিষ্যতেও হবে না। তাই আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচন নয়।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে মিথ্যে মামলায় বন্দী করেছে অথচ শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ফাঁসির আসামিদের ছেড়ে দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে মির্জা ফখরুলের মুক্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। আওয়ামী লীগের হাতে দেশ নিরাপদ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ কোন দল করত না অথচ তাকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিন তো অবৈধ সরকার। তাদের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করলে হবে না। আপনারাই তলে তলে তাদের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন। এর আগে স্বৈরাচারী এরশাদের সঙ্গেও আপনারা তলে তলে আঁতাত করেছিলেন। তিনি বলেন, যারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে তাদের সব সময়ই আওয়ামী লীগ সহযোগিতা করে।
খালেদা জিয়া ছাত্রদলের নেতাতর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। দেশের প্রতি তোমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সেøাগান ও মারপিটের রাজনীতি চাই না। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ছাত্ররাই সফল করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতির আগে তোমাদের প্রধান কাজ হলো লেখাপড়া করা। জিয়ার জাতীয়তাবাদের দর্শন দেশের মানুষের কাছে তোমাদের পৌঁছে দিতে হবে। প্রকৃত ছাত্রদের দিয়েই এই সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। আমরা চাই না অছাত্ররা ছাত্রদল করুক। আর তোমাদের কাজ লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনের সমস্যা নিয়ে রাজনীতি করা। ছাত্রলীগের কর্মকা-ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারী দলের ছাত্রসংগঠনকে ছাত্রদের সংগঠন বলা যায় না। তাদের হাতে বইখাতা নেই। আছে বন্দুক আর রামদা। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি করছে। অন্য সংগঠনকে সেখানে যেতে দেয় না। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তারা অস্ত্রাগারে পরিণত করেছে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রেখেছিল। সিলেটে এমসি কলেজের ১০০ বছরের হল ছাত্রলীগ পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের ছাত্র বলা যায় না। তারা সন্ত্রাসী। সরকারের কারণেই শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচন হয় না বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে সহাবস্থান করতে দেয় না সরকারী দল।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বৈরাচারী এরশাদের সময় নির্বাচনে যাওয়া উচিত বলে আমাকে বোঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তা করিনি। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা পরে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আন্দোলন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে পরে ক্ষমতায় গিয়েছিলাম। আর আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের সঙ্গে তলে তলে আঁতাত করে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করেছে তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।
আওয়ামী লীগের কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে গিয়ে থেকেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করলেও মুক্তিযোদ্ধা নয়। কারণ, রণাঙ্গনে যুদ্ধ না করলে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না। আমরা যুদ্ধ করেছি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। এই রক্ত বৃথা যেতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তি জয়ী হচ্ছে। দেশের জনগণ বুঝে গেছে. যারা রাষ্ট্র আর জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এ সরকার বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ করছে।
ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ঢাবি সভাপতি মহিদুল হাসান হিরু, মহানগর উত্তরের সভাপতি আবুল মনছুর খান দীপক দক্ষিণের ইসহাক সরকার। অনুষ্ঠানে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন রাজীব আহসান।
ছাত্র সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, শামসুজ্জামান দুদু, মোঃ আবদুল মান্নান, ডা. জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু, সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন, সংসদ সদস্য আসিফা আশরাফী পাপিয়া, নিলুফার চৌধুরী মনি শাম্মি আখতার। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে সন্ধ্যার পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.