খাঁচায় বন্দি ইমাম হোসেনের মুক্ত হওয়ার আকুতি

পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় টানা চার বছর ধরে খাঁচায় বন্দি রয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ইমাম হোসেন (২৯)। কয়েক বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। এর পর থেকেই তার এ বন্দিদশা।
বন্দি থাকার কারণে ইমাম এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে দিন দিন তিনি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন।


এদিকে, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ছেলেকে খাঁচা থেকে ছেড়ে দিতে পারছে না ইমামের পরিবার। কারণ তাকে মুক্ত করে দিলেই রাস্তায় বের হয়ে মানুষের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তিনি।

কিন্তু ইমামের এখন যে অবস্থা তাকে দেখে মনে হয়নি তিনি কোনো মানুষকে আক্রমণ করতে পারবেন।

গোদাগাড়ী পৌর এলাকার রামনগর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ইমাম হোসেন (২৯)। মানসিক প্রতিবন্ধী বলে তাকে বিশেষভাবে তৈরি লোহার খাঁচার ভেতরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার।

গত চার বছর ধরে তার খাওয়া-দাওয়া, মল-মূত্র ত্যাগ, ঘুম সবই চলে খাঁচার ভেতরে।

২০১১ সালে ইমামের খাঁচায় বন্দিদশার খবর স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থা তাকে খাঁচা থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিলেও তার পরিবারের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ইমামের মা জামিলা বেগম বাংলানিউজকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ইমাম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

তাকে চিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেন। একমাস সুস্থ থাকার পর ইমাম হোসেনের অবস্থা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে।

সে সময় তিনি হাঁসুয়া (এক ধরনের দেশি অস্ত্র) নিয়ে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষকে তাড়া করতেন এবং সুযোগ পেলেই তাদের মারধর করতেন।

তখন গ্রাম্য কবিরাজের পরামর্শ অনুযায়ী ইমামকে বিয়ে দিলে তিনি এক বছর ভালভাবে সংসার করেন। এরপর আবারও তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন।

দিনদিন ইমামের পাগলামি বৃদ্ধি পেতে থাকলে বাধ্য হয়ে তার পায়ে শিকল বেঁধে তাকে বিশেষভাবে তৈরি ওই খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে।

ইমামের সংসার জীবনে যুবরাজ নামের সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সে তার মায়ের কাছে থাকলেও মাঝে মধ্যে বাবাকে দেখতে আসে। কিন্তু নিজের ছেলেকে ইমাম হোসেন চিনতে পারেন না।

তবে ইমামকে যেই দেখতে যাক না কেন তার কাছেই তিনি আকুতি জানান, তাকে যেন খাঁচার ভেতর থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আর তার মা যখন খাবার নিয়ে তার কাছে যান তখন ইমাম হোসেন অকথ্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে খাঁচায় বন্দি থাকার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছে যে, তিনি দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে পারেন না। সবসময় মাটিতে শুয়ে ঘুমাতে থাকেন তিনি।

কেউ খাঁচার কাছে গেলে শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে রড ধরে বসে পড়েন।

তার ব্যাপারে এক মনোরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইমাম হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে খাঁচা থেকে বের করে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.