মেধাবী মুখ- ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প by হাসান ইমাম

ছেলেটির একাডেমিক ফলাফল খুব ভালো ছিল না। এই সমীক্ষা মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার আগেও ছিল। আর ছেলেটিও তখন বেশ উদাসীন পড়ালেখায়। তার ভালো লাগে ক্রিকেট। যে কারণে উচ্চমাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষার হল থেকে পালিয়ে সোজা খেলার মাঠে।
ফলাফল, নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ। শিক্ষকেরাও চিন্তাগ্রস্ত। অবশেষে বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হলো। কিন্তু সেই ছেলেই করল এমন এক ফলাফল, যা দেখে শিক্ষকেরা আফসোসে মরেন! ‘ইশ্! আর কিছুদিন থেকে মনোযোগ দিলে এ প্লাস নিশ্চিত হতো। তার পরও ২০০৪ সালে এইচএসসিতে ৪.৩৩ তো বেশ ভালো ফলাফল,’ বলেছিলেন তার মা-বাবা।
মতিউর রহমান নামের সেই ছেলেটিই এবার শিক্ষকদের আশা পূরণ করেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম হয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। অথচ কীভাবে যে পার হয়ে গেল স্নাতকের এই সময়টা, টেরই নাকি পাননি তিনি। তাহলে কি লেখাপড়ায় ডুব দিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মতিউর হাসতে হাসতে বলেন, ‘আরে না। বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় পুরো সময়টা পার হয়েছে। শিক্ষকেরাও ভালোবাসতেন অনেক। সব মিলিয়ে কীভাবে যেন সময়টা গড়িয়ে গেল। তবে আমার এই ফলাফলে আমার তিন বন্ধুর অবদান অনেক বেশি।’ আবার প্রশ্ন করলাম, কীভাবে? তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু সোবহান, শারমিন আর সুমন সব সময় চাইত, আমি সারা দেশে প্রথম হই। শুধু চাইতই না, সেই সঙ্গে আমাকে সব ধরনের সাপোর্ট দিত। বই, নোট এমনকি আর্থিক সংকটে পাশে এসে দাঁড়াত তারা। তা ছাড়া আমার এত ভালো ফলাফল সম্ভব হতো না।’
মতিউরের শিক্ষক ফাতেমা নুরুন্নাহার এখন ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান। তিনি বলেন, ‘মতিউর লেখাপড়ায় অনেক বেশি মনোযোগী ছিল। ক্লাসের পড়া সব সময় বুঝে নিত মন দিয়ে, যার ফল মিলত প্রতিবছরের কলেজ পরীক্ষায় তার প্রথম হওয়া। চূড়ান্তভাবে সে সারা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে, এটা অনেক আনন্দের আমাদের জন্য!’ মতিউর এখন স্নাতকোত্তর পড়ছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে। তাঁর স্বপ্ন, প্রথমত একজন ভালো মানুষ হওয়া। আর দ্বিতীয়ত সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.