ফারুক হত্যা ।। শেখ হাসিনা, ছাত্রলীগ ও নতুন প্রজন্মের সিদ্ধানত্ম নেবার এখনই সময়- স্বদেশ রায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সময়ে ছাত্রলীগের একজন মেধাবী ছাত্রকে শিবির হত্যা করল যখন সারাদেশে ছাত্রলীগ প্রশ্নবিদ্ধ। ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের প,ে তাদের সদস্যদের প েকথা বলতে যখন অনেকেই দ্বিধান্বিত এমন একটা পরিস্থিতিতে পরিকল্পিত এই নির্মম হত্যাকা- চালাল ছাত্রশিবির।
হত্যাকা-টি এতই পরিকল্পিত যে একই দিনে ঢাকার বাবুবাজারে খুন করা হয় এক চাল ব্যবসায়ীকে। ঢাকার ওপর ওই হত্যাকা- ঘটায় যাতে ইলেকট্রনিকস মিডিয়াতে বেশি প্রচার পায় ঢাকার হত্যাকা-। অনত্মত সব মিডিয়ায় না পেলেও জামায়াত ও ছদ্ম জামায়াত এবং বিএনপি মালিকানাধীন মিডিয়ায় বেশি করে যেন সেই প্রচার পায়। আর একথা তো সত্য, বর্তমানে বাংলাদেশে জামায়াত-ছদ্ম জামায়াত ও বিএনপির পরে মিডিয়া বেশি। কেন বেশি এটাও বুঝতে কারও কোন অসুবিধা হবার কথা নয়। কারণ বিএনপি তাদের দুই টার্মে শামসুল ইসলামের মতো শিতি লোককে তথ্যমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছে। তাই তারা খুবই সুচারম্নভাবে তাদের প েএ কাজটি করতে পেরেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য তারা '৭২ থেকে আজ অবধি যে ক'জন তথ্যমন্ত্রী পেয়েছে, তাদের সম্পর্কে কোন কিছু না বলাই ভাল। কারণ এদের কেউ পিকাসোকে বলেন পিসাকো আর ইবসেনকে বলেন ইবনেসিনা। এদের দ্বারা কী হবে সেটা সকলেই বুঝতে পারেন। তাই মিডিয়াকেও শিবির বা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি খুবই দতার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছে। কাজে লাগাচ্ছে চারদলীয় জোট।
জামায়াত-শিবিরসহ চারদলীয় জোট যে এভাবে খুব শীঘ্র একটি হত্যার রাজনীতিতে যাচ্ছে সেটা গত মাসখানেক ধরে তাদের আচরণে প্রকাশ পাচ্ছিল। যেমন রাজশাহীর এ হত্যাকা- ঘটেছে একটি বিশেষ দিনে। বেগম জিয়া সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলার একদিন পরেই। বেগম জিয়া, বিএনপি বা তাঁর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট গত এক বছরে যে রাজনীতি করেছে হিসেব করে দেখলে স্পষ্ট হয়, সম্পাদকদের সঙ্গে বেগম জিয়া যে কথা বলেছেন, ওই কথার সঙ্গে তার কোন মিল নেই। সম্পাদকদের সঙ্গে বেগম জিয়া বলেছেন, তিনি সরকারকে আরও সময় দিতে চান। তাঁর দল সংসদে যাবে। সংসদ নেত্রী ডাকলেই তিনি যাবেন। তাঁর জোট সংসদে থাকবে। অর্থাৎ সবকিছু মিলিয়ে তিনি যে কথা বলেছেন, তাতে তাঁর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটকে একটি গঠনমূলক জোটই মনে হবে। কিন্তু গত এক বছর তাঁর দল ও জোট যে কাজ করেছে তার কোন্টা প্রমাণ করে যে তারা গঠনমূলক বিরোধী দল হবে! শুধু এ নয় যে দলটি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির পরে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। মৌনতা পালন করে এক ধরনের শোক প্রকাশ করে খুনীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে_ এর পরেও তারা কি গণতান্ত্রিক শক্তি? বেগম জিয়া রাজনীতিতে আসা অবধি মিডিয়া সহায়তা পান বেশি। এটা তাঁর ভাগ্য না আমাদের মিডিয়ার চরিত্র সেটা ভবিষ্যত মিডিয়া ও রাজনৈতিক গবেষকরা বলবেন। তবে কোন সম্পাদক কিন্তু তাঁকে এ প্রশ্ন করেননি, সংসদের বিরোধী দলের নেত্রী হয়ে দেশের আইনের শাসনের এত বড় বিজয়কে স্বাগত জানালেন না কেন? যেখানে সারা পৃথিবী স্বাগত জানাল তিনি কেন নিশ্চুপ থাকলেন? তাই বিএনপির বা জোটের এক বছরের কাজ কিন্তু প্রমাণ করে না তারা গঠনমূলক বিরোধী জোট হবে। বরং খুনীদের প নেয়াতে প্রমাণিত হয়, তারা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে আবিভর্ূত হবে। কোন ভয়ঙ্কর ব্যক্তি, বা গোষ্ঠি যখন সুন্দর কথা বলেন, তখন ধরেই নিতে হয় কোথাও না কোথাও মেঘ জমেছে। এটা ঝড়ের পূর্বাভাস। বেগম জিয়ার কথা শুনে সেটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু ঝড় যে একদিন পরেই সেটা হয়ত অনুমান করা যায়নি। একেবারে অনুমান না করা ভুল ছিল। কারণ, জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার মামুন অর রশিদ নিউজ করেন, তারা যে কোন মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লাশ চায়। মামুনের এই রিপোর্ট করার কয়েকদিন পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর নিহত হয়। কারা তাকে হত্যা করে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। কেউ বলছে, পুলিশের টিয়ার শেলে নিহত হয়েছে। কেউ বলছে দুই পরে ইটপাটকেল ছোড়ার সময় ভারি কিছু তার মাথায় লেগে নিহত হয়েছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সার্বণিক যোগ আছে এমন কেউ কেউ এবং আরও অনেক সংস্থা জানাচ্ছে, আবু বকর হত্যাটা রহস্যজনক। তাদের কাছে যথেষ্ট আলামত আছে, আবু বকরকে শিবির হত্যা করেছে। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের প েহত্যাকা- চালানো এখনও খুব সহজ বলে তারা মনে করে। কারণ চারদলীয় জোটের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে জামায়াত-বিএনপির লোক দ্বারা সাজানো হয়েছে বর্তমানে সেভাবেই আছে। বর্তমান প্রশাসন তা বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে জামায়াত-বিএনপি কতটা শক্তিশালী তার একটি ছোট্ট প্রমাণ জনকণ্ঠের প্রতি আচরণ দিয়েই বোঝা যায়। জামায়াত-বিএনপির পাঁচ বছর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনকণ্ঠকে কোন বিজ্ঞাপন দিত না। এখনও যে পত্রিকাগুলো সিলেক্ট করা হয়েছে সেখানে জনকণ্ঠের নাম নেই। জনকণ্ঠের অপরাধ কি সেটা এ দেশের মানুষের কাছে আর নতুন করে বলার কিছু নেই। সমপ্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সাাতকারে বলেছেন, 'জনকণ্ঠের দোষ হলো তারা দুবর্ৃত্তদের বিরম্নদ্ধে কথা বলে এবং তাদের দুর্নীতি, অপকীর্তি ফাঁস করে দেয়'। বর্তমান অর্থমন্ত্রীর শিা, রম্নচি, সততা নিয়ে দেশের কারও কোন প্রশ্ন নেই। বরং এটা গর্বের সঙ্গে বলা যায়, এমন মাপের ব্যক্তি আমাদের সমাজে কম। তাই তিনি যখন জনকণ্ঠ সম্পর্কে এ কথা বলেন তখন বোঝা যায়, জামায়াত-বিএনপির দুর্বৃত্তরা নিঃসন্দেহে জনকণ্ঠের বিরম্নদ্ধে থাকবে। আর যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে এখনও পূর্বের মতো জনকণ্ঠ বিরোধিরা আছে এর থেকে স্পষ্ট, প্রশাসন জামায়াত-বিএনপির নিয়ন্ত্রণে। তাই যাঁরা বলেছেন, আবু বকরকে কৌশলে জামায়াত-শিবির হতা করেছে, তাঁরা একেবারে অসত্য বলছেন এটা বলা ঠিক হবে না। কারণ এ হত্যাকা- ঘটানোর মতো প্রশাসনিক সহযোগিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে পাবার সুবিধা এখনও জামায়াতের আছে। এ কাজ করার জন্য তারা ছাত্রলীগের ভেতরে বসেও সুবিধা নিতে পেরেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিবির ঢুকে গেছে। সৈয়দ আশরাফ এক বছর পরে এ সত্যটা জাতির সামনে বললেন। হয়ত তাঁর মতো অবস্থানে থেকে এসব কথা বলতে এতটা সময় লাগে।
আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর পরই এ কলামে লেখা হয়েছিল, জামায়াত-বিএনপি জোটের দুবর্ৃত্তরা এখন আওয়ামী লীগে, ছাত্রলীগে, যুবলীগে ঢুকছে। তার কয়েকদিন পরেই শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিছেন। বলেছিলেন, আমাদের যথেষ্ট কর্মী ও সমর্থক আছে। আমাদের নব্য আওয়ামী লীগারদের ঢোকানোর দরকার নেই। কিন্তু শেখ হাসিনার এ কথা খুব কাজে আসেনি। কারণ জামায়াত- বিএনপির হাতে প্রচুর টাকা। এই টাকার কাছে অধিকাংশই পরাজিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ দুই গ্রম্নপে সংঘর্ষ বাধিয়ে বকর হত্যার যে পথ করে দিয়েছে এর পিছনে কাজ করেছে জামায়াত- বিএনপির টাকা। এবং এটা শুধু ছাত্রলীগের ভিতর সীমাবদ্ধ নেই। সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যেখান থেকে অর্থ আসবে সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক কিছু নিয়ন্ত্রই করছে তারা। জামায়াত-বিএনপির পাঁচ বছর ব্যাংকের যে এমডি জিয়া পরিষদ করতেন তিনি এখন বঙ্গবন্ধু পরিষদের হয়ে আবার এমডি থেকে যাচ্ছেন। এই সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেই তাদেরকে অর্থ সহযোগিতা করা হচ্ছে, যারা বাংলাদেশী টাকায় ৭০ লাখ টাকা মাসে ভাড়া দিয়ে দুবাইতে অফিস নিয়েছে। নামে সে অফিস তাদের ব্যবসায়িক অফিস হলেও বাসত্মবে সেটা তথাকথিত যুবরাজের অফিস। যুবরাজ দুবাইতে সেই অফিসে বসেই দেশের ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। যুবরাজকে যাঁরা দুবাইতে অফিস খুলে দিয়েছেন, তাঁদের প েসাফাই যিনি গাচ্ছেন, তিনি আবার মুক্তিযোদ্ধাকেও সহযোগিতা করছেন। জামায়াত-বিএনপির অর্থ এভাবেই ধীরে ধীরে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করছে।
সেই চেষ্টায় তারা যে পায়ের নিচের মাটি যথেষ্ট শক্ত করতে সমর্থ হয়েছে তার প্রমাণ তারা এখন দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে হত্যাকা- ঘটাচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে জামায়াত-বিএনপি এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই প্রথম হত্যাকা- ঘটাল। বর্তমান সরকার মতায় আসার পর পরই তারা সরকারকে উৎখাত করার জন্য পিলখানায় হত্যাকা- ঘটিয়েছিল। এবং কয়েকটি বিষয় ল্য করলে দেখা যাবে, এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে বেশ কিছু মিল আছে। যেমন রাজশাহীতে ফারম্নককে হত্যা করে তার মৃতদেহ ম্যানহোলের ভেতর রাখা হয়। এর আগে রাজশাহীতে যখন ড. তাহেরকে হত্যা করা হয়েছিল তখনও তাঁর মৃতদেহ ম্যানহোলের ভেতর রাখা হয়েছিল। ঠিক একই ঘটনা ঘটে পিলখানায় সেনা অফিসার হত্যাকা-ের সময়। সেখানেও লাশ ম্যানহোলে রাখা হয়। অর্থাৎ সকল হত্যাকা-ের হত্যাকারীরা যে একই জায়গা থেকে প্রশিণ পাচ্ছে সেটা তাদের আচরণে প্রমাণ রেখে যাচ্ছে। অর্থাৎ ড. তাহের, পিলখানার সেনা অফিসার ও সর্বশেষ মেধাবী ছাত্র ফারম্নককে যারা হত্যা করেছে তারা একই জায়গায় প্রশিণ নেয়া হত্যাকারী। হত্যাকা-ের চরিত্রের ভেতর দিয়ে সে ছাপ রেখে যাচ্ছে তারা। আবার এর প্রত্যেকটা হত্যা যে পূর্বপরিকল্পিত তারও কিছু কিছু ছাপ কিন্তু থেকে যাচ্ছে। যেমন বেগম জিয়া কোন অবস্থাতেই ক্যান্টনমেন্টে অবৈধভাবে দখলে রাখা বাড়িটি ছাড়তে চান না। কিন্তু বিডিআরের ঘটনার আগেই তিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে গুলশানের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি রাজশাহী ও ঢাকার বাবুবাজারে পরিকল্পিত হত্যাকা- ঘটানোর আগের দিন বেগম জিয়া সম্পাদকদের সঙ্গে এমন কথা বার্তা বলেছেন, যার সঙ্গে তাঁর গত এক বছরের রাজনীতির কোন মিল নেই। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোন ইসু্য ছাড়া সম্পাদকদের সঙ্গে বসে এই শানত্মির বাণী শোনানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। অর্থাৎ দেশের মানুষ যেন ধরে নেয়, বেগম জিয়া যে সময় সরকারকে সময় দিতে চাচ্ছেন, তিনি যে সময়ে সংসদে থাকতে চাচ্ছেন সে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এবং এটা ঘটতেই পারে। কারণ গত কয়েকদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যে চরিত্র দেখা গেছে তাতে তারাও কম দায়ী নয়। অর্থাৎ ছাত্রলীগের ভেতর শিবিরকে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের কনডেমড করা থেকে বেগম জিয়ার মতবিনিময় অবধি সবই এক দীর্ঘ পরিকল্পনা।
তবে আজ শিবির ও তাদের মূল শক্তি জামায়াত-বিএনপি জোট এভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার শক্তি সঞ্চয় করেছে। তারা যে হত্যাকা- ঘটাতে পারছে_ এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা। তারা অতীত থেকে কোন শিা নেয়নি। বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে মতায় আসার পরেই তাদের প্রধান কাজ ছিল সংগঠনে যাতে সন্ত্রাসীরা ঢুকে না পড়ে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা। কারণ আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্ধেক নষ্ট করেছি সিক্সটিন বাহিনীর দ্বারা। ১৬ তারিখ বিকেলে যারা মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিল তারাই কিন্তু '৭২ থেকে '৭৫ অবধি আওয়ামী লীগকে তিগ্রসত্ম করার কাজে, বঙ্গবন্ধুর সুনাম নষ্টের কাজে সব থেকে বেশি কাজ করেছিল। এই সিক্সটিন বাহিনী ছাড়া '৭২ থেকে '৭৫ অবধি যারা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এমনকি জাসদ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন তাঁরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, ওই সময়ে সারাদেশে তাঁদের এত সদস্য হয় যে তাদেরকে তাঁরা আগে কখনও দেখেননি। এবং '৭৫-এর পনেরো আগস্টের পরে তাদের সকলের চরিত্র বদলে গেছে। এককভাবে বা বিপুল বিজয় নিয়ে বা কোন বিপস্নবের মাধ্যমে মতায় এলে এ ঘটনা ঘটে। পরাজিত খারাপ শক্তি বা প্রতিবিপস্নবীরা তখন এভাবেই তাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করে। তারপরে সুযোগ মতো তারা ভেতর থেকে আঘাত করে। এবারও বিপুল বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ মতায় এসেছে। তাই এ ঘটনা যে ঘটবে সেটা ছিল স্বাভাবিক। তাদেরকে হুঁশিয়ারও করেছিলেন অনেকে। শেখ হাসিনা নিজেও বলেছিলেন, আমাদের নব্য আওয়ামী লীগার দরকার নেই। কিন্তু তারপরেও সেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।
এবং এটাও সত্য শুধু ছাত্রলীগে নয়, জেলায় জেলায় এমনকি উপজেলায়, গ্রামে বিভিন্ন েেত্র ঢুকে গেছে এই সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগার হিসেবে। বেশি েেত্র জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিয়েছে। আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতা তাদের আশ্রয়ও দিচ্ছে। এই দেয়াটা স্বাভাবিক। কারণ '৭২ সালে আওয়ামী লীগে যেমন মোশতাক চক্র ছিল এবারও তেমনি সংস্কারবাদীরা আওয়ামী লীগে আছে। বিভিন্ন জেলায় তাদের লোক বিভিন্ন নেতৃত্বে আছে। নতুন করে গত এক বছরে নিম্ন পর্যায়ে কোন সাংগঠনিক পরিবর্তন আনা হয়নি। যার ফলে এই দুর্বৃত্তদের আশ্রয় নেয়া অতি সহজ হয়ে উঠছে। এরা আশ্রয় নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সুযোগ পেলেই দেখা যাবে তারা স্বমূর্তি ধারণ করেছে। এবং এখন ছাত্র লীগে যা ঘটছে তখন আওয়ামী লীগে এমন ঘটলে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।
তাই রাজশাহীর এ হত্যাকা- আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। এখান থেকে যদি তারা ঘুরে না দাঁড়ায় তাহলে তারা আরও বড় বিপদে পড়বে। ছাত্রলীগ ঘোষণা দিয়েছে তারা সারাদেশে শিবিরকে প্রতিহত করবে। ছাত্রলীগের এই ঘোষণা বাসত্মবায়নের ভেতর দিয়ে তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে তারা আসলে ছাত্রলীগ না টেন্ডার লীগ। তাদের সামনে ইতিহাস এ পরীা হাজির করেছে। এটা অনেকটা এভাবে বলা যায়, কা-ারী আজি দেখিব তব মাতৃমুক্তি পণ। এবং শিবির উচ্ছেদের এ কাজ সরকারকেও নিতে হবে। কারণ আনত্মর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি জঙ্গী সংগঠন কোন মতেই দেশের শিা প্রতিষ্ঠানে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করতে পারে না। আর এই ঘাঁটি স্থাপন করে তারা একাত্তরে যে কাজ করেছিল সেই কাজের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতে তারা একের পর হত্যা করে চলেছে বুদ্ধিজীবীদের, দেশের মেধাবী সনত্মানদের। যেদিন তারা ফারম্নককে হত্যা করেছে সেদিন শিবিরের হাতে নিহত প্রফেসর ইউনুসের স্ত্রীর লেখা একটি চিঠি আমি পাই। ব্যক্তিগত সে চিঠিতে তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, 'আমার স্বামীর কিছু লেখা ছিল। তিনি দেশের জন্য ভাবতেন। আমি রাজনীতি ভাল বাসতাম না । কারণ আমার স্বামী কাজের জন্য সময় দিতে পারতেন না। কিন্তু ভাগ্যের ফের খোদা তাঁকে জান্নাতে নিয়ে গেলেন। সেই রাসত্মা প্রতিদিন দেখতে হবে আমার সনত্মানদের। অন্যদিকে খুনীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি রাজশাহী ত্যাগ করেছি এ কারণে।' মিসেস ইউনুসের বেদনাভরা পুরো চিঠিটি পড়তে পড়তে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। পুরো চিঠিটি পড়ার পরে আমি আধ ঘণ্টারও বেশি নিজেকে কোন কাজ করার উপযোগী শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারিনি। জামায়াত-শিবিরের হাতে দেশের একজন সুযোগ্য সনত্মান নিহত হবার পরে গোটা পরিবারটি কীভাবে তছনছ হয়ে গেছে তা ভাবলে কোন মানুষ চোখের পানি আটকাতে পারবে না। প্রফেসর ইউনুসের সনত্মান শোভন আমার কাছে কয়েকবার এসেছে। একজন পিতা হয়ে তার অসহায় মুখের দিকে আমি তাকাতে পারি না। তার বেকার জীবন আমার নিজেকেও অভিশপ্ত করে তোলে। একজন উচ্চশিতি, দেশপ্রেমিক যোগ্য পিতার সনত্মানকে জামায়াত-শিবির আজ এভাবে অসহায় করেছে। তাই নিহত ফারম্নকের মায়ের বিলাপের ভাষা থেকে উপলব্ধি নিয়ে, শোভনের অসহায় চোখের কথা মনে করে, বর্তমান সরকার ও ছাত্রলীগকে সিদ্ধানত্ম নিতে হবে- বাংলাদেশে এই জঙ্গী সংগঠন শিবির থাকবে কী থাকবে না? মতিউর রহমান নিজামী বলেছে, জামায়াত- শিবির খড়কুটো নয় যে তারা উড়ে যাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নতুন প্রজন্মকেই যথা-উত্তর দিতে হবে যে, স্বাধীনতার সপ শক্তি খড়কুটো না ওই জঙ্গী হত্যাকারীরা খড়কুটো? কে বাংলাদেশ থেকে উড়ে যাবে তার বাসত্মবায়ন দ্রম্নতই করতে হবে। বাঙালী কি কেবল শহীদুলস্নাহ কায়সারের লাশ দেখবে? বাঙালী কি কেবল জাহিদ রেজা নূরের চোখের জল দেখবে? বাঙালী কি কেবল ম্যানহোলে ড. তাহেরের মৃতদেহ দেখবে? বাঙালী কি কেবল অসহায় শোভনের ভীত হরিণের মতো চোখ দেখবে? মিসেস ইউনুস থাকতে পারবেন না রাজশাহীতে? ছাত্রলীগ, শেখ হাসিনার প্রশাসনকে এর উত্তর বাঙালীর সামনে দ্রম্নতই দিতে হবে। এটা এখন সময়ের একমাত্র দাবি। নতুন প্রজন্মের সামনেও প্রশ্ন_ তারাও কি ফারম্নকের মায়ের মতো তাদের আরও মায়ের বিলাপ দেখতে চায়? দেখতে চায় তাদের ভাই শোভনের ভীত চোখ- না কিছু দুর্বৃত্তকে দেশ থেকে উপড়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবার মতো সাহস নিয়ে গর্জে উঠবে?
ংধিফবংযৎড়ু@মসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.