স্বাগতিক বাংলাদেশের সাফল্য

গত মঙ্গলবার শেষ হয়ে গেল ১৫০ কোটি মানুষের ক্রীড়াযজ্ঞ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস ২০১০-এর বারো দিনব্যাপী আনন্দুমুখর উৎসব অধ্যায়। বাংলাদেশ ছিল দৰিণ এশিয়ার ক্রীড়ামোদীদের একাদশতম আসরের সফল ও গর্বিত আয়োজক।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিসত্মান, নেপাল, ভূটান ও আফগানিসত্মানের দৰ ও কৃিত ক্রীড়াবিদরা মর্যাদাপূর্ণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ২৯ জানুয়ারি বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এই এসএ গেমসের উদ্বোধন করা হয়েছিল জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে বাঙালীর সাহসী ইতিহাস, অমলিন সংস্কৃতি ও শ্বাশত ঐতিহ্যের মিশ্রণে এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল ভিন্নতর শিল্পমাত্রার। আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে। সমাপনী অনুষ্ঠানেও ছিল আকর্ষণীয় এ্যাকুয়াটিক ওয়াটার শো। ছিল ফায়ার শোর মনমাতানো আলোর ঝলকানি। মনিপুরী, সাঁওতাল ও গারোদের নৃত্যে মুখর হয়ে উঠেছিল বিদায়ৰণটি। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে বিদায় জানানো হয় এসএ গেমসের মাসকটকে। মশাল হসত্মানত্মর করা হয় পরবতর্ী ক্রীড়াযজ্ঞের আযোজক ভারতের কাছে। ১৮টি স্বর্ণ জিতে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে অবস্থান করলেও ক্রীড়া নৈপুণ্যে শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রেখেছে_ এটি ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ, ক্রীড়ামোদী এবং ক্রীড়া বিশেস্নষকদের অভিমত। বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে ক্রীড়ায়ও দৰতা দেখাতে পারে।
বাংলাদেশে তৃতীয়বার অনুষ্ঠিত হলো এসএ গেমস। ২০০৬ সালের আগে এর নাম ছিল সাফ গেমস। সূচনা হয়েছিল নেপালে, ১৯৮৪তে। এবার ২৩টি ডিসিপিস্ননে ১৫৮টি স্বর্ণের জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে ১ হাজার ৭৯৩ জন ক্রীড়াবিদ। স্বাগতিক বাংলাদেশের ছিল ৩৩২ জন। এবারকার এসএ গেমসে প্রথমবারের মতো অনত্মভর্ুক্ত হয় মহিলা ফুটবল, ক্রিকেট ও হ্যান্ডবল। একাদশতম গেমসের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি ছিল এক বছর আগে থেকেই। এ্যাথলেটদের প্রশিৰণের জন্য কোন ত্রম্নটি ছিল না। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে কাঙ্ৰিত ফল বাংলাদেশের ঘরে উঠেছে। ফুটবল, ক্রিকেট, কারাতে, শূটিং, উশু, বক্সিং, তায়কান্দো ও গলফে শুরম্ন থেকেই কাঙ্ৰিত ফল প্রত্যাশিত ছিল সকলেরই নিকট। প্রত্যাশা পূরণও হয়েছে। পদক তালিকায় বাংলাদেশ সর্বদা ভারত, পাকিসত্মান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের পরেই থেকেছে। ১৯৮৫ সালের মতো এবারও বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে এসেছে। উলেস্নখ্য, একাদশতম এসএ গেমসের আসরে বাংলাদেশের লৰ্যমাত্রা ছিল ১০ থেকে ১৭টি স্বর্নপদক ও মোট ১০০টি পদক আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, প্রত্যাশার উর্ধে বাংলাদেশ স্থান করতে সৰম হয়েছে। তবে ব্রজেন দাশের দেশের সাঁতারম্নরা স্বর্ণপদক পেলে মঙ্গলঘট প্রায় পূরণ হতো বলা যেতে পারে। ফুটবলেও বাংলাদেশ এবার চমক দেখিয়ে স্বর্ণ জিতে নেয়। আফগানিসত্মানকে ৪-০ গোলে নাকানিচুবানি খাওয়ায় বাংলাদেশের দামাল তরম্নণরা। সারাদেশে বইয়ে যায় আনন্দের বন্যা।
প্রতিযোগিতায় জেতার জন্যই কেবল খেলাধুলা নয়, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে জাতি গঠনের জন্য খেলাধুলার চর্চা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ক্রীড়া যে অনন্য বিনোদন, তা আজ বিশ্বস্বীকৃত। শৈশব থেকে ক্রীড়া চর্চায় অভ্যসত্ম করতে পালে উদ্যমী জাতি গঠন করা কষ্টকর কিছু নয়। শিৰা গ্রহণের পাশাপাশি খেলাধুলার চর্চাও যে জরম্নরী এই চেতনা যদি সরকারী-বেসরকারী-সামাজিক-পারিবারিকভাবে জাগ্রত করা যায় তাহলে দ্বাদশতম এসএ গেমসে আমাদের পালস্না ভারি হবে তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.