ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ

দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের মাধ্যমে ছাত্রীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে তারা হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র তৈরি করেছে। ওদিকে নতুন ইংরেজি বর্ষকে সারা বিশ্বের মানুষ যখন আনন্দ আয়োজনে কাটিয়েছে তখন ভারতের সচেতন সমাজ ছিল নীরব।
ওই ছাত্রীর মৃত্যুতে ভারত যেন এক শোকের দেশে পরিণত হয়েছিল। ধর্ষিতার বিচার দাবিতে মানুষ এ রাতে কেঁদেছেন। তাদের হৃদয়জুড়ে একরাশ কষ্ট। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড সহ তাদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কংগ্রেস সহ অনেক দল বর্ষবরণ বাতিল করেছিল। অমিতাভ বচ্চন পরিবার সহ সেলিব্রিটি পরিবারগুলো কোন অনুষ্ঠানে যোগ দেন নি। সেনাবাহিনী বাতিল করে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। নতুন বছরকে বরণ করে  নেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের এ এক নতুন দৃশ্য। এনডিটিভি’র খবরে বলা হয়, আগামীকাল পুলিশের অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে। বিডিনিউজ জানায়, বার্তা সংস্থা পিটিআই বলেছে- অভিযোগপত্রে মোট ৩০ জনকে সাক্ষী করা হচ্ছে। এর মধ্যে দিল্লি ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরাও থাকবেন। তবে প্রধান সাক্ষী হবেন সেই তরুণ, ঘটনার রাতে যিনি তরুণীর সঙ্গে ছিলেন এবং মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়ে ধর্ষকদের মারধরে গুরুতর আহত হন। গত ১৬ই ডিসেম্বর রাতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ এবং ব্যাপক মারধরের পর ২৩ বছরের ওই তরুণী ও তার সেই বন্ধুকে বাস থেকে ফেলে দেয় ছয় নরপিশাচ। ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৯শে ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যায় মেয়েটি। মেয়েটির প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের কেনাকাটা করে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পথে বাসে সেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই তরুণী ধর্ষিত হওয়ার পর থেকে ভারতজুড়ে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলন চলছে। দাবি উঠেছে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির। দিল্লি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দু’বার জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেই তরুণী। ধর্ষণের ওই ঘটনা এবং ধর্ষকদের বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়ে যান তিনি। ধর্ষকদের যে বিচার চান, তাও ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছিলেন ওই তরুণী। দিল্লির পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আইন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অভিযোগপত্রটির খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যে ছয় আসামির বিরুদ্ধে এতে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তাদের ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড চাইবে পুলিশ। তবে ওই ছয়জনের মধ্যে একজনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় কিশোর অপরাধ আদালতে তার বিচারের ব্যবস্থা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে সোমবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১৫ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। গোটা ভারতকে নাড়া দিয়ে যাওয়া এ ঘটনায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।

No comments

Powered by Blogger.