আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা- শেষ হলো বিশ্ব এজতেমা

 তুরাগ তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির কণ্ঠে আমিন, আল্লাহুমা আমিন উচ্চারণে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে টঙ্গীতে রবিবার শেষ হলো বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় শেষ পর্ব। মোনাজাতে বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মার ঐক্য সুখ-শান্তি, অগ্রগতি ও সুভ্রাতৃত্বের কামনা করা হয়েছে।
ইসলামের দাওয়াত সারা বিশ্বে পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহর তৌফিক কামনা করে দিল্লী মারকাজের বুজুর্গ তবলিগ জামাতের বর্তমান আমির মাওলানা জোবায়েরুল হাসান মোনাজাত পরিচালনা করেন। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য পরম দয়াময়ের কাছে অনুনয় বিনয় করে পানাহ ভিক্ষা করেন মুসল্লিরা। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে ৬৭ দেশের প্রায় ৮ হাজার বিদেশীসহ কয়েক লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো এ বছরের বিশ্ব এজতেমা।
দুপুর পৌনে ১টায় মোনাজাত শুরু হয়। প্রায় ২০ মিনিটের মোনাজাতে এজতেমা ময়দানে আসা মুসল্লি ছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সুবিধা নিয়ে একই সময়ে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিও যার যার অবস্থান থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। বাংলাদেশের কয়েকটি রেডিও ও টিভি চ্যানেল সরাসরি আখেরি মোনাজাত সম্প্রচার করে।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে গত শনিবার রাত থেকেই আশপাশের জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বাস, ট্রেন, ট্রাক ও ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এজতেমাস্থলে আসতে থাকেন। রবিবার মোনাজাতের আগ পর্যন্ত টঙ্গীমুখী ছিল মানুষের বাঁধভাঙ্গা স্রোত। রাতে এসব মুসল্লি রেল স্টেশন, হাসপাতাল ও বিভিন্ন বিপণি বিতানের বারান্দায়, নির্মাণাধীন ও বিভিন্ন ভবনে অবস্থান নেন। রবিবার ভোর থেকে নারায়ণগঞ্জ, রাজধানী ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের প্রত্যন্ত এলাকার মুসল্লিরা দলে দলে এজতেমা অভিমুখী রওনা হন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক, টঙ্গী-কালিগঞ্জ-নরসিংদী সড়কে যানজটের পরিবর্তে জনজটে রূপ নেয়। রবিবার ভোর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, দক্ষিণে কুড়িল বিশ্বরোড, টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কের পশ্চিমে আশুলিয়া বাজার বাসস্ট্যান্ট, মিরপুর বেড়ি বাঁধের দক্ষিণে শাহআলী মোড় এবং টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়কের পূর্বে মিরের বাজার পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে এজতেমা ময়দান যেন সব পথের মোহনায় পরিণত হয়। মোনাজাত শেষে এসব সড়কে যেন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো মুসল্লিদের স্রোত প্রবাহিত হয়। এ পর্বের মোনাজাতেও ভিআইপিদের অংশগ্রহণ ছিল।
বিশ্ব এজতেমার শেষ মোনাজাতে শরিক হন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, স্থানীয় এমপি আলহাজ জাহিদ আহসান রাসেল, টঙ্গী পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া এই আখেরি মোনাজাতে শরিক হয়েছেন পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দলমত বিভিন্ন পেশার সর্বস্তরের মানুষ।
রবিবার এজতেমায় আরও ১ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম হোসেন আলী (৭০) থানা কোতোয়ালি, ময়মনসিংহ। এ নিয়ে দুই পর্বের এজতেমা ময়দানে মোট ২৫ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.