পুরনো ঢাকায় দিনভর ধর্মঘট, দফায় দফায় বিৰোভ- হাজী আহম্মদ ও আফিল মিয়া হত্যার প্রতিবাদ

বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আহম্মদ হোসেন (৪৫) ও কুষ্টিয়ার চাল ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন মিয়া (৩৫) হত্যাকা-কে ঘিরে বুধবার পুরনো ঢাকায় ছিল থমথমে অবস্থা।
এ দিন ব্যবসায়ী হত্যাকা-ে পুরনো ঢাকার বাবুবাজার, বাদামতলী, মিটফোর্ডের দেড় হাজার ব্যবসায়ী দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিনভর ধর্মঘট ও দফায় দফায় বিৰোভ মিছিল করেছে। অন্যদিকে নিহত ওয়ার্ড কমিশনার আহম্মদ হোসেনের হাজী ওসমান গনি রোডের বাসায় ছিল শোকের মাতম। এখানে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। অনেকে বলেছে, এখানে বিএনপির অভ্যনত্মরীণ কোন্দল, এলাকার আধিপত্য বিসত্মারকে কেন্দ্র করে প্রতিপৰরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
উলেস্নখ্য, মঙ্গলবার মাত্র ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পুরনো ঢাকার কোতোয়ালি ও বংশাল থানা ব্যবসায়ী কেন্দ্রে দু'খুনের ঘটনা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলেছেন, সামনে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য দেশের বৃহত ব্যবসায়ী কেন্দ্রে এ ধরনের হত্যাকা- ঘটিয়ে একটি বিশেষ মহল ফায়দা লুটছে। যাতে এখানে ব্যবসায়ী সমাজ ও সাধারণ মানুষের মাঝে অসনত্মোষ সৃষ্টি হয়। এদিকে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা পার হলেও দু'খুনের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
জানা গেছে, পুরনো ঢাকার কোতোয়ালি থানাধীন বাবুবাজারে চাল ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিন হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যনত্ম বাবুবাজার-বাদামতলী চালের আড়ত, কাঁচ (আয়না) দোকান ও মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেটসহ প্রায় দেড় হাজার ব্যবসায়ী দোকানপাট তালা ঝুলিয়ে ধর্মঘট পালন করে। সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা এসব স্থানে দফায় দফায় বিৰোভ মিছিল করেছে। পরে সন্ধ্যায় লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা বাবুবাজার-বাদামতলী ব্যবসায়ী সমিতি অফিসে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জরম্নরী বৈঠকে বসেন। তাঁরা অচিরেই খুনীদের গ্রেফতার ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। পরে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। এ ব্যাপারে বাদামতলী-বাবুবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী নিজামুদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, অচিরে ব্যবসায়ী আফিলউদ্দিনের হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার, আসামি গ্রেফতার, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তারা এ ব্যাপারে গাফিলতি করলে বৃহত্তর আন্দোলন।
সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশের পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্রকে ঘিরে একাধিক অপরাধী গ্রম্নপ সক্রিয়। ব্যবসায়ী কেন্দ্রকে ঘিরে অবৈধ বাস ও বিভিন্ন যানবাহন স্ট্যান্ড, রাসত্মা অবরম্নদ্ধভাবে ফুটপাতে শত শত টং দোকানে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিতে ব্যবসায়ীরা রীতিমতো জিম্মি। পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যৰ মদদে অপরাধীরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। এতে ব্যবসায়ীরা বাধা দিলে তাদের ওপর নেমে আসে সন্ত্রাসী হামলা। এমনকি প্রায়শই আধিপত্য বিসত্মারকে কেন্দ্র করে দু'গ্রম্নপের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
এ নিয়ে এখানে কয়েক ব্যবসায়ী খুনও হয়েছে। প্রতিবারই এসব ঘটনায় ব্যবসায়ী আন্দোলন করলেও প্রতিকার নেই। কোন ব্যবসায়ী খুনের আলোর মুখ দেখাতে পারেনি সংশিস্নষ্ট থানা পুলিশ। এজন্য ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেন।
এদিকে বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও নগর যুবদল নেতা হাজী আহম্মদ হোসেনের ময়নাতদনত্ম শেষে তার লাশ বংশাল থানাধীন আলু বাজার হাজী ওসমান গনি রোডের ১৪৪/১৪৭ নম্বর নিজস্ব বাড়িতে নিয়ে যাাওয়া হয়। পরিবার ও সহকমর্ীদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহতের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, রাজনৈতিক কারণে তার ভাই ওয়ার্ড কমিশনার আহামদ হোসেনকে খুন করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নিহত ওসমান গনির বাসা নিয়ে দীর্ঘ দিন বিরোধ চলছিল। নানা কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। পরে দুপুর ১২টায় তাঁর লাশ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নগর ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফা তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ জোহর তার নিজ বাসভবনের সামনে নাজিরা বাজার জামে মসজিদে তৃতীয় দফা নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে তার লাশ আজিমপুর পুরনো কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের পিতার নাম মৃত দেলোয়ার হোসেন। তিনি ১ মেয়ে ২ ছেলের জনক ছিলেন এবং ৭ ভাই ২ বোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন।
প্রত্যৰদর্শীরা জানান, বাসার সামনে আলুবাজার বড় মসজিদে ও মাদ্রাসার সংস্কারে তার অংশগ্রহণ ছিল। ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাত ৮টায় ওই মসজিদে এশার নামাজ শেষে বের হওয়ার পর পাশে রাসেল এন্টারপ্রাইজে বন্ধ দোকানের সামনে ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আহম্মদ হোসেন কিছুৰণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় ১৪/১৫ বছরের দুই তরম্নণ তাকে সালাম দিয়ে কাছে আসে। মুহূর্তের মধ্যে পেছন দিক দিয়ে আরও দুই তরম্নণ এসে দাঁড়ান। সামনে দুই তরম্নণ পিসত্মল বের কররে তিনি তা ধরে ফেলার চেষ্টা করেন। এ সময় পেছন থেকে ওই দুই কিলার তাঁকে লৰ্য করে গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে সামনের দুই কিশোরও তাকে গুলি করে। ওই অবস্থায় দৌড়ে পালানোর সময় কিছুদূর গিয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খুনীদের এলাকায় মাঝে মধ্যে দেখা গেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকমর্ী সঙ্গে।

No comments

Powered by Blogger.