পদ্মা সেতুর নাম হোক ‘স্বাধীনতা সেতু’ by মাহবুব-উল-আলম খান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাংক স্থাপিত হয়েছিল গরীব, স্বল্প্ন্নোত, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোকে অবকাঠামো উন্নয়নে আর্থিক, কারিগরি ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য। ক্রমে ক্রমে এটি রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। উন্নত দেশগুলো এ প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।


সময়ে সময়ে ন্যক্কারজনকভাবে গরীব দেশগুলোকে অপমান করছে। আমাদের পদ্মা সেতুর জন্য ঋণ প্রদানে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে অবশেষে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অর্থায়নে অপারগতা প্রকাশ করেছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। সম্ভাব্য দুর্নীতির আশংকায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে এ মর্মে ঋণ প্রদান বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার শেষ কার্যদিবসে এই চুক্তি বাতিল করে যায়।্ দুর্নীতি প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দুর্নীতিবাজ বলা অন্যায়। বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্য বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছে। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণে যেখানে অর্থই ছাড় হয়নি সেখানে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে-এই অভিযোগে কেন এমন নির্মম রসিকতা করা হলো বোধগোম্য নয়। বিশ্বব্যাংক মনোনীত কোম্পানিকে তাদের অযোগ্যতার জন্য যোগ্য বিবেচনা করা যায়নি। স্বনামধন্য প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বিশ্বব্যাংকের সুপারিশকৃত কোম্পানিকে যোগ্য বিবেচনা করতে পারেনি। আসলে বিশ্বব্যাংক তাদের স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে এখন ঋণ প্রদান বাতিল করল।
এই অপমান আমাদের টনক নাড়িয়ে দিয়েছে। নিজ পায়ে দাঁড়ানোর একটি সোনালী দ্বার উন্মোচন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নেই হবে। তাঁর এ আহ্বান দেশে বিদেশে সকল বাঙালরি মনে দারুণ উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। চারিদিক হতে দেশপ্রেমিক নাগরিকগণ, প্রতিষ্ঠান অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কষ্ট করেও এদেশের মানুষ এই সেতুর বাস্তবায়ন চায়।
বর্তমান সরকারের সামগ্রিক কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল ও সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্যাবোটেজ চলছে। বিরোধী দল নানা পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে একে সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে দেশ ও জাতি গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। সরকারকে জরুরি করণীয় ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। শেয়ার বাজার কেলেংকারীদের কঠোর সাজা দিন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হওয়া দরকার। পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করুন। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের সাথে পুনরায় বিষয়টি উত্থাপন করা যায়। কেননা সম্ভাব্য দুর্নীতির ধারণা একটা হাস্যকর ব্যার্পা, এটা বিরোধী শিবিরের রাজনীতি। সরকারের উচিৎ অভিযোগ উদঘাটন ও প্রকাশ করা। প্রশাসনকে গতিশীল করতে হবে; সৎ, নিষ্ঠাবান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাসীন করা দরকার। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে গড়ে তুলতে হবে একটি আধুনিক উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ। রূপকল্প ২০২১ এর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না হলে জনগণ বিমুখ হবেন। সংশ্লিষ্টদের এই চিন্তা ও চেতনায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণ এখনো হতাশ হয়নি। দেড় বছর সময় কাজে লাগাতে হবে মানুষের কল্যাণে, মানুষের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে। আরেকটি বিষয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সকল মহল থেকে ব্যাপক সাড়া পড়েছে, আমার বিশ্বাস নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু অসম্ভব নয়, এটা এদেশের মানুষের আকাঙ্খা। এদেশের মানুষের আকাঙ্খা কোন দিন বিফলে যায়নি। আর একট দাবি এই সেতুর নাম হোক “স্বাধীনতা সেতু”। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী সরকার ক্ষমতায় বলেই আমার এই দাবি।
লেখক : সাবেক সচিব

No comments

Powered by Blogger.