বিদেশী সাংবাদিক প্রবেশে ভিসা অন এ্যারাইভাল সঙ্কুচিত হচ্ছে by তপন বিশ্বাস

বিদেশী সাংবাদিকদের বাংলাদেশে প্রবেশে ‘ভিসা অন এ্যারাইভাল’ সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোন বিদেশী সংবাদিককে ‘ভিসা অন এ্যারাইভালের অধীনে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। বিভিন্ন সময়ে বিদেশী কোন কোন সাংবাদিক বাংলাদেশে এসে একাধিকবার পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।


এমনকি কোন কোন বিদেশী সাংবাদিক এভাবে বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি বিরোধী কাজেও লিপ্ত হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কিছু সাংবাদিককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ‘ভিসা অন এ্যারাইভাল’ সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে বিদেশী সংবাদিকদের বাংলাদেশে আগমন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বলা হয়, বিদেশী সাংবাদিকদের কেউ কেউ একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করতে এসে অন্য কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন। বৈঠকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কোন সাংবাদিক যে কাজে আসেন সে কাজ না করে অন্য কাজে লিপ্ত হলে প্রচলিত ভিসা নীতিমালা ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত আইন ও বিধি বিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশী সাংবাদিকদের কালোতালিকাভ’ক্ত করে থাকে। আবার অনেক সময় কালো তালিকাভুক্ত থেকে অব্যাহতিও প্রদান করা হয়ে থাকে। ভিসার জন্য আবেদনকারী কোন বিদেশী সাংবাদিক কালো তালিকভুক্ত থাকলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর মতামতের জন্য পাঠানোর প্রয়োজন নেই বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া বৈঠকে হালনাগাদ কালো তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। এতে বিদেশী সাংবাদিকদের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সহজতর হবে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই কালো তালিকাভুক্ত বিদেশী সাংবাদিকদের নাম পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিত অনুরোধ জানাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দেশী/বিদেশী মিডিয়া হাউসে যে সকল বিদেশী সাংবাদিক ‘ই’ ভিসা নিয়ে চাকরি করতে আসেন তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বৈঠকে জানানো হয়, ‘বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট’ (বিওআই) ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করে থাকলে সাংবাদিকরা ‘ই’ ভিসা নিয়ে এসেও কাজ করতে পারবেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিওআই কর্তৃক সাংবাদিকদের ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার আগে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয় ও বহির্প্রচার অণুবিভাগের মতামত গ্রহণ করতে হবে অথবা তাদের অবহিত করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রচলিত বিধি মোতাবেক কোন বিদেশী সাংবাদিক এক প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এসে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন না, পরিবর্তন করতে গেলে তাকে তার দেশে গিয়ে নতুন করে ভিসা নিয়ে আসতে হয়।
এ ছাড়া বৈঠকে ‘ভিসা অন এ্যারাইভাল’ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যে সকল দেশে আমাদের দূতাবাস নেই কেবল সে সকল দেশের ব্যক্তিরা ‘অন এ্যারাইভাল ভিসা পাবেন। অন্যদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বাতিল করা হবে। বৈঠকে জানানো হয়, একটি সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভিসা গ্রহণ না করে ‘ভিসা অন এ্যারাইভাল’ নিয়ে বাংলাদেশে এসে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকদের পেশাগত কারণে বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির ভিসা অনুৎসাহিত করা প্রয়োজন। বৈঠকে আরও বলা হয়, সম্প্রতি তুরস্কের এক কূটনীতিক ৩/৪ সাংবাদিক নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারাও পোর্ট এন্ট্রি ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। অন্যান্য দেশে আমাদের দেশের সাংবাদিকরা এই সুবিধা পান না। তবে যে সকল দেশ বাংলাদেশের সাংবাদিকদের এই সুবিধা প্রদান করে, তাদের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে মর্মে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য সাংবাদিকদের খুব কম সময় হাতে নিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে দেখা যায়। এতে তাদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা কঠিন হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২১ দিন সময় হাতে নিয়ে আবেদন করার বিষয়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে জানিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.