চাঁপাইতে সালমান হত্যার অকপট স্বীকারোক্তি- উত্তরায় আটক ৪ জঙ্গী

নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরা ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর জন্য সংগঠিত হচ্ছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন বহুল আলোচিত জেএমবির সদস্য রুহুল আমিন ওরফে সালমান হত্যা মামলার আসামি।


জেএমবি থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সালমানকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল বলে গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যদের মধ্যে এহসার সদস্য ও জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাথী সামসুল হুদা অকপটে স্বীকার করেছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় পবিত্র মাহে রমজানে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি জঙ্গীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতরের সহযোগিতায় বুধবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রাজধানীর উত্তরা মডেল থানাধীন ১০ ও ১১ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। অভিযানে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর রোডের নির্মাণাধীন একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় জেএমবির একজন এহসার সদস্য, ২ জন গায়েরে এহসার সদস্য ও ১ জন সক্রিয় কর্মীসহ ৪ জনকে। তাদের থেকে বিপুলসংখ্যক লিফলেট, বোমা তৈরির কলাকৌশল সংবলিত প্রকাশনা ও জঙ্গী প্রশিক্ষণের পুস্তকাদি উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়িটি জেএমবির নতুন আস্তানা বলে গ্রেফতারকৃতরা গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে এহসার সদস্য সামসুল হুদা (২৫)। পিতা-নুরুল ইসলাম। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুরের বোধালা গ্রামে। গায়েরে এহসার সদস্য ফটিক ওরফে বাদশা ওরফে আব্দুল্লাহ (৪০)। পিতা কসিম উদ্দিন (মৃত)। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থানাধীন নিজামপুর গ্রামে। গায়েরে এহসার সদস্য বদরুল ওরফে বাদরুল ওরফে বাদল (২৮)। পিতা মোহাম্মদ আলী। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থানাধীন নিজামপুরে। সদস্য আবু বক্কর (২৬)। পিতা নজরুল ইসলাম। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থানাধীন নিজামপুরের দীঘিরপাড় গ্রামে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এহসার সদস্য সামসুল হুদা চাঁপাইনবাবগঞ্জ টাউন আলিয়া মাদ্রাসার ১ম বর্ষের কামিল শ্রেণীর ছাত্র। সে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাথী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন বায়তুলমাল সম্পাদক। সে ২০০৬ সালে জেএমবিতে যোগদান করে। সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেএমবির গুরুত্ব¡পূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে।
গত ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থানায় জেএমবির অপর কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য ও আইটিপ্রধান (স্বঘোষিত আমির) রুহুল আমিন ওরফে সালমান হত্যা মামলার অন্যতম এজাহারভুক্ত আসামি। ওই সময় সামসুল হুদাসহ আরও ৬ জন রুহুল আমিন ওরফে সালমানকে নৃশংসভাবে জবাই করে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে অন্যত্র পুঁতে রাখে। পরবর্তীতে পুলিশী অভিযানে সালমানের মাথা উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারের পর সামসুল হুদা সালমান হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করেছে। স্থানীয় জেএমবি নেতাদের সঙ্গে কোন্দলের জের ধরেই রুহুল আমিনকে জবাই করে হত্যার সিদ্ধান্ত হয় বলে সামসুল হুদা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আরও ৩ আসামিকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
সামসুল হুদার সহযোগী হিসাবেই নিষিদ্ধঘোষিত এসব জেএমবি সদস্য উত্তরায় একত্রিত হয়েছিল। রাজমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রির সহযোগী, রিক্সা বা অটোরিক্সা চালক হিসাবে নিজেদের পরিচিত করে এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনা করছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির এসব সদস্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের কর্মপরিকল্পনা, নেতৃত্ব এবং ভবিষৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করছে গোয়েন্দারা। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ (সংশোধনী) ২০১২-এর ৮/১০/১২/১৩ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিটি বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান।

No comments

Powered by Blogger.