হুমায়ূনের শেষ ছবি ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ আসছে ৭ সেপ্টেম্বর by বিপুল হাসান ও কামরুজ্জামান মিলু


‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ ছবিটির শুভ মহরতে নন্দিত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, এটাই তার পরিচালিত শেষ ছবি। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকেই এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য তাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
জবাবে হুমায়ূন আহমেদে মৃদু হেসেছিলেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
হুমায়ূন আহমেদের শেষ ছবি ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ দর্শকদের সামনে আসছে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এ ছবিটি শুরুতে ঢাকার বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স ও বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডে মুক্তি পাচ্ছে। পরবর্তীতে সারাদেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পাবে।

হুমায়ূন আহমেদকে হারানোর গাঢ় বেদনার মধ্যেও স্বস্তি এটুকুই যে, ছবিটি তিনি দেখে যেতে পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসার চিকিৎসাধীন থাকাকালে কিছুদিনের জন্য তিনি দেশে ফিরেছিলেন। কাছের কিছু মানুষ আর সংবাদকর্মীদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ গত ২৯ মে উপভোগ করেন তার আন-রিলিজড ছবি ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’।

সেদিন অবশ্য অনেকেই আশা করেছিলেন যে, হুমায়ূন আহমেদ সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন। আবার তিনি বানাবেন চলচ্চিত্র। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক।

কঠিন বিষয়কে সহজভাবে তুলে ধরাই ছিল হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় গুণ। প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া সমাজের কঠিন সত্যগুলোকে তিনি নিপুন দক্ষাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তার রূপালী ক্যানভাসে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরী ‘আগুনের পরশমণি’ ছবি দিয়ে ১৯৯৫ সালে চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। এরপর একে একে নির্মাণ করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ও ‘আমার আছে জল’। তার পরিচালিত সর্বশেষ ছবি ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’।

ছবিটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মামুন। এছাড়াও অন্যসব চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, প্রাণ রায়, তমালিকা কর্মকার, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্রপাধ্যায়, জুয়েল রানা, পুতুল, কুদ্দুস বয়াতি, আগুন, আবদুল্লাহ রানা, মাসুদ আখন্দ, খুদে গানরাজ প্রতিযোগিতার শিল্পী প্রাপ্তি ও প্রান্তি এবং আরও অনেকে।

‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ ছবি মুক্তির তারিখ ঘোষণার পর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের পরিচালক ইবনে হাসান খানের সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ।

তিনি বলেন, ‘এ ছবিটি মুক্তি দেওয়া নিয়ে ছোট একটি ঘটনা মনে পড়ে। আমরা এবার ঈদে ছবিটি চ্যানেল আইতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের কথা ভেবেছিলাম। হুমায়ূন স্যার তখন জীবিত ছিলেন। অনুমতি নেওয়ার জন্য যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, তখন স্যার অনেক অসুস্থ। আমি স্যারের চিকিৎসাকালীন সফর সঙ্গী অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলামের মাধ্যমে স্যারের সম্মতি চাই। স্যার তখন জানান, তিনি চান ছবিটি আগে সিনেমা হলেই মুক্তি পাক। স্যারের সিদ্ধান্ত বলে আমার মেনে নেই।’

ইবনে হাসান খান আরও বলেন, ‘নিজের নতুন কোনো ছবি মুক্তির আগে হুমায়ূন স্যারের আনন্দ আমাদের চোখে ভাসে। যেমন ছবির পোস্টার ডিজাইন কেমন হবে, বিলবোর্ড কোথায় লাগাবো, লোকজন কী বলছে- সবকিছু মিলে অন্য রকম খুশি দেখতাম। এজন্য ভেবেছিলাম স্যার সুস্থ হয়ে ফিরলেই ছবিটি মুক্তি দেব। যেহেতু স্যার আজ নেই, তাই তার শেষ ইচ্ছেতেই ছবিটি সর্বপ্রথম হলে মুক্তি দিচ্ছি। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সৌভাগ্য যে, হুমায়ূন আহমেদের শেষ ছবিটি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের মাধ্যমে মুক্তি পাচ্ছে। ছবিটির মুক্তিতে আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে প্রাণ ঝালমুড়ি। আর এর প্রচারে কাজ করতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। কারণ এ ছবিটি ছাড়া আমাদের কাছে তার নতুন কোন সৃষ্টিকর্ম নেই।’

বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের এক সময়ের সমাজ বাস্তবতার বাস্তব গল্প নিয়েই ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’। আধুনিকতা বা শিক্ষার আলো যখন বর্ষায় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা ভাটি অঞ্চলের মানুষদের মাঝে পৌঁছেনি। সে সময় সেখানকার সচ্ছল ও সামর্থ্যবান পুরুষরা বিনোদন হিসেবে ‘ঘেঁটুর গান’ নিয়ে মেতে থাকতো। কমবয়সী যেসব ছেলে বিভিন্ন জায়গায় মেয়ে সেজে গান পরিবেশন করতো, তাদের একধরনের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হতে হতো। সৌখিন মানুষের স্ত্রীরা ঘেটুুঁপুত্রদের দেখতেন সতীন হিসেবে। এক সময়কার সমাজের এই অন্ধকার দিক আলোতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ এ ছবির মাধ্যমে।

‘বাজে বংশী রাজহংসী নাচে দুলিয়া দুলিয়া নাচে পেখমও মেলিয়া।’ এরকম বেশ কিছু লোকজ গান এ ছবিতে ব্যবহার করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের নিজের লেখা গানও আছে ছবিতে।  গানগুলোর সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু ও এসআই টুটুল।

No comments

Powered by Blogger.