ইন্দো-বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব শুরু আজ- সংস্কৃতি সংবাদ

ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ইন্দো-বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবের অংশ হিসেবে থাকছে ভারতের নন্দিত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারপ্রাপ্তি উপলক্ষে সৌমিত্র চ্যাটার্জি ফিল্ম রেট্রোসপেক্টিভ।


যৌথভাবে সপ্তাহব্যাপী এ চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন। উৎসব আয়োজনে সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশের তথ্য ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় এবং ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ছবি উৎসব বিভাগ। আজ সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ চলচ্চিত্র উৎসবের উ™ে^াধন করবেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন ভারতের খ্যাতিমান পরিচালক মোজাফফর আলী ও অভিনেতা ফারুক শেখ, তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সংস্কৃতি সচিব সুরাইয়া বেগম, ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক রাজিব কুমার জেইন। সভাপতিত্ব করবেন ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ শরণ। উৎসব উপলক্ষে ঢাকায় আসবেন ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা গিরিশ কুলকার্নি।
উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবে ইন্দিরা গান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্র সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে গতকাল ঢাকা ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পরিচালক ও প্রযোজক ক্যাথরিন মাসুদ, ভারতের বিখ্যাত উমরাও জান ছবির পরিচালক মোজাফফর আলী ও অভিনেতা ফারুক শেখ, ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি সুজিত ঘোষ প্রমুখ।
মোজাফফর আলী বলেন, চলচ্চিত্র বা শিল্পের কোন সীমানা নেই। সংস্কৃতি দুই দেশের সীমানাকে গৌণ করে দেয়। মানুষে মানুষে যোগসূত্র তৈরি করে। এই উৎসবও দুটি দেশের মানুসের মাঝে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলবে। একে অপরের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে জানতে পারবে এবং ভাবনার আদান-প্রদান হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ সব সময়ই শিল্পের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ।
ফারুক শেখ বলেন, বাংলাদেশে এটি আমার দ্বিতীয় সফর। এখানকার মানুষ খুব শিল্পপ্রেমী। এখানে এলে আমার সবসময় ভাল লাগে। বাংলাদেশ ও ভারতের সংস্কৃতির মধ্যে অনেক মিল আছে।। তাই এখানে এলে সেই সংস্কৃতির ধারার নতুন যে গতি তা দেখতে আমার ভাল লাগে। আমি অনুপ্রাণিত হই।
উৎসবে দুই দেশের মোট ২৩টি পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সাতটি ছবি। এগুলো হলোÑ -সূর্য দীঘল বাড়ি, আগুনের পরশমণি, অবুঝ মন, সীমানা পেরিয়ে, মাটির ময়না, চাকা ও লাঠিয়াল। বাংলা, হিন্দীসহ বিভিন্ন ভাষার ভারতের যেসব ছবি প্রদর্শিত হবে সেগুলো হচ্ছেÑ রাজা হরিশচন্দ্র, অপুর সংসার, উমরাও জান, অশনি সংকেত, ভালু, ঘটশ্রদ্ধা, জান ভি দো ইয়ারও, তিসরি কসম, কনি, হীরক রাজার দেশে, দেখা, সোনার কেল্লা, ঘরে বাইরে ও যোধা আকবর। আজ উ™ে^াধনী অনুষ্ঠানের পর দেখানো হবে ভারতীয় নির্বাক চলচ্চিত্র রাজা হরিশচন্দ্র। এর পর পরই দেখানো হবে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ১০৭ মিনিটের ছবি ‘অপুর সংসার।’ বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রদর্শিত হবে তারেক মাসুদ পরিচালিত ছবি ‘মাটির ময়না।’ সন্ধ্যা ছয়টায় দেখানো হবে মোজাফফর আলী পরিচালিত হিন্দী সিনেমা উমরাও জান। ইন্দো-বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য দিনের প্রবেশপত্র বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে ধানম-ি ও গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্র শাখায়।
নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা অনুষ্ঠান
জাতীয় কাজী নজরুল ইসলামের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল ইনস্টিটিউট। অনুষ্ঠানে ২০১১ সালে নজরুল পদকে ভূষিত করা হয় বেদারউদ্দিন আহমদ (নজরুল সঙ্গীতে-মরণোত্তর) ও অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর তারেককে (নজরুল গবেষণা-মরণোত্তর)।
অনুষ্ঠানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের পাঠ্যসূচিতে নজরুলের স্থান বিষয়ক আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি। আলোচক ছিলেন অধ্যাপক ড. বেগম জাহানারা ও অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি নাতনি খিলখিল কাজী। সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নজরুল গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক রশীদ হায়দার।
সাংস্কৃতিক পর্বে একক কণ্ঠে গান শোনান খালিদ হোসেন, শাহীন সামাদ, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ফেরদৌস আরা, খায়রুল আনাম শাকিল, নাশিদ কামাল, খিলখিল কাজীসহ অনেকে। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে নজরুল ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা। একক আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ, মাহিদুল ইসলাম, সীমা ইসলাম প্রমুখ।
সেলিম আল দীন উৎসবের সমাপ্তি
উয়ারী-বটেশ্বর : শিকড়ের সন্ধানে আমাদের যাত্রা সেøাগানে ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী সেলিম আল দীন উৎসব। শুক্রবার ছিল এ উৎসবের সমাপনী দিন। এদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যশালায় ভারতের তৃতীয় সূত্র (কলকাতা) পরিবেশন করে নাটক ‘বিসর্জন’, পরীক্ষণ থিয়েটার হলে সময় নাট্যদল মঞ্চায়ন করে শেষ সংলাপ। স্টুডিও থিয়েটারে ছিল আবৃত্তি পরিবেশনা। আমার রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাকশিল্পী হাসান আরিফ।
এর আগে একাডেমীর নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীনÑবজলুল করিম সম্মাননা ও ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক প্রদান করা হয়। মীর মকসুদ-উস-সালেহীনÑবজলুল করিম সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী নাজমা আনোয়ার (মরণোত্তর-২০১০) ও অভিনেতা মাসুদ আলী খান (২০১২)। পুরস্কার হিসেবে তাদের দেয়া হয় ২০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও উত্তরীয়। ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক পেয়েছেন বাবুল বিশ^াস (২০১০) ও ত্রপা মজুমদার (২০১২)। তাদের দেয়া হয় ১০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও উত্তরীয়। দুই বছর পর পর এই সম্মাননা ও পদক প্রদান করা হয়। পদক প্রদান অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন উৎসব আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
নজরুলের ঈদের গানের ৮০ বছর পূর্তি উদ্্যাপন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কালজয়ী গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ এই গানটির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল একাডেমী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তাঁর পরিচালনায় ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ গানটি গাওয়া হয় সমবেত কণ্ঠে। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি নাতনি খিলখিল কাজী ও ড. নাশিদ কামাল। সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর সভাপতি ড. আশরাফ সিদ্দিকী।
প্রামাণ্যচিত্র ফরটি ইয়ার্সের প্রদর্শনী
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর এ দেশে আটকে পড়ে অনেক পাকিস্তানী। নানা ধরনের নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিহারী বাংলাদেশী হিসেবে পরিচিত উর্দুভাষী এই জনগোষ্ঠী দেশের ১১৬টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে বাস করছে ২৫ হাজার। আর রিফিউজি নামে পরিচিত এই ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অসহনীয় জীবনযাপনসহ সুপেয় পানির অভাব, বিদ্যুতহীনতা, পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাসহ তাদের নানা নাগরিক সমস্যা নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ফোরটি ইয়ার্স। আর ২৩ মিনিটের এ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন ওই জনগোষ্ঠীর অধিবাসী খালিদ হোসেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্যচিত্রটি। প্রদর্শনী শেষে অনুষ্ঠিত হয় প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসা উদর্ুুভাষী বাংলাদেশী অধিবাসীদের জীবনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.