ভারতে নারী কমান্ডো by এনামুল হক

ভারতের পাঞ্জাব পুলিশের এলিট বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি গ্রুপে (এসএসজি) প্রথমবারের মতো মহিলাদের বিক্রুট করা হচ্ছে। এদের সন্ত্রাস দমন ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োগ করা হবে। ২০১০ সালে পাঞ্জাব পুলিশের তদানীন্তন ডিরেক্টর জেনারেল পরমদীপ সিংহ গিল এসএসজি গঠন করেন।
সংস্থাটির ব্যবহারের জন্য নানা ধরনের অস্ত্র সংগ্রহ করা হয় যার মধ্যে আছে সুইজারল্যান্ডের তৈরি এসজি-৫৫৩ এসল্ট রাইফেল ও এমপি-৯ ট্যাকটিক্যাল মেশিন পিস্তল, এসআইজি এসপি ২০২২ পিস্তল এবং একে -৪৭ কালাশনিকভ রাইফেল। নতুন রিক্রুট করা মহিলাদের এসব অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণে যত রকম কঠোর অনুশীলন আছে সবই চর্চা করছে এই মেয়েরা।
প্রথম মহিলা ট্রপার ব্যাচ হিসাবে বেছে নেয়া হয়েছে ২০ জন মেয়েকে। এদের সবার বয়স ২০-এর কোঠায়। সন্ত্রাস দমন তৎপরতা ছাড়াও তাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর বাদলের একেবারে ভেতরের নিরাপত্তা বলয়ে মোতায়েন করা হবে।
গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যালোকে কমব্যাট ফ্যাটিগ পরা এবং অস্ত্র হাতে চলছে তাদের প্রশিক্ষণ। সন্ত্রাস দমনের সশস্ত্র কলাকৌশলের পাশাপাশি লড়াইয়ের নিরস্ত্র কৌশলও তাদের রপ্ত করানো হয়। গাফিলতি বা অনিয়মের জন্য তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা আছে। হয়ত তার জন্য সেই সাত-সকালে উঠে দৌঁড়াতে হবে ছয় কিলোমিটার পথ। পথে অসংখ্য পুশ-আপ আছে, চিন-আপ আছে, আছে জটিল বাধাবিপত্তি। পাতিয়ালার বাইরে রাজ্য পুলিশ কমান্ডো ট্রেনিং সেন্টার পাঁচ শ’ বছরের পুরনো এক ঐতিহাসিক দুর্গে চলে এই প্রশিক্ষণ কিন্তু এই কঠোর ক্লেশকর ট্রেনিং সত্ত্বেও এমন পেশাকে সাগ্রহে বেছে নিতে এগিয়ে আসছে পাঞ্জাবী মেয়েরা। যারা এই সে দিনই এই নির্দিষ্ট পেশার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। শিক্ষিত্ত মধ্যবিত্ত মেয়েরা যেমন আসছে তেমনি আসছে সাধারণ কৃষকের কন্যাও। ২২ বছর বয়স্ক বলবিন্দর কাউর আর্কিটেকচার পড়ার সুযোগ বাদ দিয়ে কিংবা বিয়ে করে সংসার পেতে বসার অথবা বিদেশে পাড়ি জমানোর পথ না মাড়িয়ে পুলিশ কমান্ডো হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কাউরের ভাষায় এটা আমাকে ক্ষমতায়নের এক অবিশ্বাস্য বোধ এনে দিয়েছে। নবনীতা কাউর সান্ধু (২১) বছরের মেয়েও আর্টস গ্র্যাজুয়েট। স্প্রিন্টে সে দ্রুততম পুরুষকেও লজ্জা দিতে পারে। মাত্র এক সপ্তাহের কমান্ডো ট্রেনিংয়ের পর সে এখন পাকা যোদ্ধার মতো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করছে। পলিমার ফ্রেমের স্বয়ংক্রিয় পিস্তল আমেরিকান এসআইসি অবলীলায় নাড়াচাড়া করতে করতে সে বলে ‘এটি আমার প্রিয় অস্ত্র।’
এসএসজির ভা-ারে যেসব অস্ত্রশস্ত্র আছে তা সামরিক বাহিনীবহির্ভূত যে কোন বিশেষ বাহিনী যেমন ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড, স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ ও ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির সমতুল্য। এই প্রথম এই বাহিনীর মহিলা কমান্ডোদের দেশের যে কোন জায়গায় ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় নিয়োগ করা হবে। এ জাতীয় কাজে মহিলাদের নিয়োগের যৌক্তিকতা হিসাবে বলা হয়, মেয়েদের মনোসংযোগ বেশি। তাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অপেক্ষকৃত কম। নিরস্ত্র লড়াইয়ে মহিলা কমান্ডোরা পুরুষের চাইতে কোন অংশে কম নয়। আগামীতে এদেরকে ক্রাভ মাগা ট্রেনিং দেয়া হবে। এ হলো এক ধরনের ইসরাইলী মার্শাল আর্ট। অতিমাত্রায় কার্যকর। তবে অনেক সময় অতি নির্মমও বটে।

সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে

No comments

Powered by Blogger.