ফরমালিন আমদানি নিষিদ্ধ হচ্ছে by মিজান চৌধুরী

অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ফরমালিন আমদানি নিষিদ্ধ হচ্ছে। বিধিনিষেধ আসছে ব্যবহার ও বেচাকেনার ওপর। নির্দিষ্ট সংস্থা বা ইনস্টিটিউট ছাড়া কেউ এ কেমিক্যাল গণব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। ফরমালিন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারকে বিধান করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।


বিষয়টি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে বিগত তিন বছরে কি পরিমাণ আমদানি হয়েছে, আমদানিকৃত ফরমালিন কাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে এর জবাব চেয়ে ২০ আমদানিকারককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ চিঠির জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোন আমদানিকারক জবাব না দিলে তার লাইসেন্স বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া ভোক্তা অধিকার অধিদফতরকে ফরমালিন বিক্রেতাদের শনাক্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তথ্য মতে, ভোক্তা অধিকার অধিদফতর এ বিষয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েক আমদানিকারকের সন্ধান পেয়েছে ভোক্তা অধিদফতর। খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মাছ, মাংস, ফলমূল, সবজি, বরফ, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যসহ হেন খাদ্যপণ্য নেই যাতে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে না। এসব ফরমালিন মাত্র ২০ আমদানিকারক আমদানি করছে। ওই আমদানিকারকরা দেশের ১৪ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই কেমিক্যাল অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারণে ফরমালিন আতঙ্কে ভুগছে সচেতন মানুষ। ফরমালিন মিশ্রিত খাদ্য খেয়ে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ফরমালিন ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপারে জনকণ্ঠকে বলেন, এতে পেটের পীড়া, গ্যাস্টিক, আলসার, ডায়রিয়া, বদ হজম ও মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায়। লিভার নষ্ট করে ফেলে, ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে। শিশু ও বয়স্কের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। গর্ভবর্তী মা ফরমালিন মিশ্রিত খাবার খেলে ভূমিষ্ঠ শিশু বিকলাঙ্গ, বুদ্ধি কম নিয়ে জন্মের আশঙ্কা থাকে। শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। অবশ্য যারা এসব বিক্রি ও ব্যবহার করছে তারাও এই ঝুঁকির বাইরে থাকছে না।
সূত্র মতে, গত অর্থবছরে এক লাখ ১৫ হাজার কেজি ফরমালিন আমদানি হয়েছে। এর আগের বছরে আমদানি হয় এক লাখ ১০ হাজার কেজি। ফরমালিন আমদানি বৃদ্ধি পেলেও ঘুমিয়ে আছে আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রক অধিদফতর।
জানা গেছে, সম্প্রতি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অতিমাত্রায় ফরমালিনের ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই বৈঠকে ফরমালিন ব্যবহার, আমদানি ও ক্রয়-বিক্রয় কমাতে বলা হয়। অবশ্য ওই বৈঠকে আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রক অধিদফতর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানির ওপর বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ফরমালিন ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট সংস্থা বা ইনস্টিটিউট থাকে। বিশেষ করে ল্যাবরেটরি, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, কৃষিজাত পণ্যের কর্পোরেট হাউসসহ আরও কয়েকটি সংস্থা রয়েছে। ওসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া ফরমালিন বিক্রি নিষিদ্ধ করা হবে। বিশেষ করে আমদানিকারক বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করে কাওরানবাজার, মৌলভীবাজারের কোন দোকানদার বা ট্রেডিং কোম্পানির কাছে বিক্রি করলে সেটি হবে অপরাধ। তিনি আরও বলেন, যারা ফরমালিন ব্যবহার করবে আগে থেকে কি পরিমাণ ব্যবহার করবে তার একটি ঘোষণা দেয়ার বিধান থাকছে।
জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে ফরমালিন আমদানিকারকের তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ভোক্তা অধিকার অধিদফতরকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার অধিদতরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরও ফরমালিন আমদানিকারকদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা বাজারে গিয়ে ফরমালিন মেশানে খাদ্যপণ্য শনাক্ত করছি। তাদের দেয়া তথ্য মতে, এর বিক্রেতা ও আমদানিকারকের রুট চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপর অবাধে ফরমালিন বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, খাদ্যপণ্য কেমিক্যাল মেশানো কিনা তা শনাক্ত করতে বিমান, নৌবন্দরে ছোট আকারে ল্যাব থাকলে ভাল হয়। এতে বিদেশ থেকে আসা খাদ্যপণ্য তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, ফরমালিন নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেক সচেতন মানুষ ফলমূল খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু মুনাফার লোভে ওই ২০ আমদানিকারক বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করে সাধারণ দোকানির হাতে তুলে দিচ্ছে এই মানুষ মারার বিষ। ফলে মাছ বিক্রেতাও ফরমালিন ব্যবহার করছে, কলা বিক্রেতাও বাদ পড়ছে না। এটি সহজলভ্য হওয়ায় ছোট থেকে বৃহৎ ব্যবসায়ী ফরমালিন ব্যবহারের ওপর মারাত্মক ঝুঁকে পড়েছে না। যা কিনা জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। অথচ মুক্তবাজার অর্থনীতির অজুহাত তুলে আমদানি রফতানিকারক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কোন দায়িত্ব পালনও করেনি। এমন অভিযোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার।

No comments

Powered by Blogger.