আমাদের ভোট ও সরকার by আলোকা রানী দাস

বর্তমান মহাজোট সরকারের ৫ বছর মেয়াদ শেষার্ধে অবস্থান করছি আমরা। বছর ঘুরলেই নির্বাচনী কলরব শুরু হয়ে যাবে। রাজনৈতিক অঙ্গন যেমন সরগরম হয়ে উঠবে, তেমনি জনগণের মাঝে পরবর্তী নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করবে।
২০০৯-এর জানুয়ারীতে সরকার গঠনের পর দেশের স্বখ্যাত-বিখ্যাত, নামি- দামি বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ সরকারকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি এই বিশাল অর্জনের বিষয়টিকে ধরে রাখার জন্য সর্তক করেছিলেন, নির্বাচনী অঙ্গীারগুলোকে পালনের জোর তাগিদ দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী সরকার জাতির জনকের হত্যাকান্ডের রায় কার্যকর করেছে; যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে; দেশের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
আমাদের দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে। এখন এ অঙ্কটা একটু কম। কারণ শহরের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। তেমনি গ্রামের সার্বিক অবকাঠামোও উন্নত হচ্ছে। গ্রামের রাস্তাঘাট আগের তুলনায় অনেক উন্নত। মাটির রাস্তা এখন পিচঢালা চকচকে। আগে যেখানে রিকশা কিংবা ভ্যান চলাচল করত না সেখানে এখন ইঞ্জিনচালিত যান চলে। কত দ্রুত সময়ে গ্রামে পৌঁছা যায়। হাটে-বাজারে যাতায়াত এখন অনেক সহজ হয়েছে। ভাবতে সত্যিই মনটা পুলকিত হয়। আমরা স্কুলে যেতাম পায়ের চটি হাতে নিয়ে। স্কুলের টিউবওয়েলের পানিতে পা ধুয়ে সেই চটি পরতাম। এখন জুতা-মোজা পরে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। দুই মাইল দূরে গিয়ে শুক্রবার ব্যাটারিচালিত টেলিভিশনে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য ভিড় জমে যেত। এখন প্রায় ঘরে ঘরে টেলিভিশন, তাতে কেবল সংযোগের বদৌলতে দেশী অনেক চ্যানেলের সঙ্গে বিদেশী চ্যানেলও উপভোগ করছে। মানুষ বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। টেলিভিশন, ফ্রিজ, রং-বেরঙের বৈদ্যুতিক লাইট ঘরে জ্বলছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ প্রাত্যহিক জীবনকে কত সহজ করে দিয়েছে। গ্রামকে এখন আর গ্রামই মনে হয় না। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অনেকটাই পাওয়া যায় গ্রামে। এ রকম ডিজিটাল বাংলাদেশই তো চাই আমরা।
কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বসতবাড়ির প্রয়োজনীয়তা অনেক বাড়ছে। সে কারণে ফসলি জমি দখল হয়ে যাচ্ছে গৃহ নির্মাণের কাজে। তবে কৃষির উন্নতি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। তাইতো খাদ্যে কোন কোন বছর স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছি আমরা। কারণ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। যে জমিতে বছরে একবার মাত্র ধান ছাড়া অন্য কোন ফসল পাওয়া যেত না, সেখানে বছরে দু’বার ধান এবং সাথে সাথে মাছ চাষও হচ্ছে। কৃষিকাজে সার, কীটনাশকের পাশাপাশি বিদ্যুত সরবরাহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা সবক্ষেত্রে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতনতা গ্রামের মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মোটা ভাত মোটা কাপড়, একটু স্বাচ্ছন্দ্যÑএটাই বেশিরভাগে মানুষের চাহিদা। নুন আনতে পানতা ফুরোয়Ñএমন অবস্থা অনেকটাই কম বলে আমার ধারণা। যদিও সারা দেশের চিত্র আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয় বা সেই সুযোগও আমার নেই। তবে এটুকু বুঝতে পারি যে, জীবনধারণের জন্য সাধারণ ভোগ্যপণ্য সামগ্রী মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলে, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং না হলে সরকার ভালভাবে দেশ চালাচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রয় ক্ষমতার আক্ষরিক অর্থ কী।

লেখক : সহকারী রেজিস্ট্রার
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
ardasku@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.