পাছপয়লা সেতু ভেঙে হাজারো মানুষ দুর্ভোগে

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার পাছপয়লা সেতুটি কয়েক মাস আগে ভেঙে গেছে। এতে মেলান্দহ-মাহমুদপুর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিদিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। স্থবিরতা নেমে এসেছে জেলার অন্যতম বৃহত্তম হাট মাহমুদপুর বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ দুই বছর পাছপয়লা সেতুটি নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে সেতুটি ভেঙে যায়। এতে মাহমুদপুর বাজারের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই মাহমুদপুর বাজার জামালপুরের তিনটি উপজেলার সংযোগ স্থান। এখানে সার, বীজ, ধান, পাট, সরিষা ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের গুদামসহ ৬০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারটি ঘিরে আশপাশে আরও ১৫টি বাজার গড়ে উঠেছে। মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষক ও সাধারণ মানুষ এ বাজারের ওপর নির্ভরশীল। জামালপুর ও উত্তরবঙ্গের চরাঞ্চলের লোকজনও মেলান্দহ-মাহমুদপুর সড়ক দিয়ে জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। মাত্র আট কিলোমিটার দীর্ঘ মাহমুদপুর-মেলান্দহ সড়কের পাছপয়লা সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় চার মাস ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। মাহমুদ বাজার-মেলান্দহ-ঢাকা বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির এক পাশ থেকে ভেঙে গেছে। বালু-মাটির বস্তা দিয়ে সেতুর সঙ্গে রাস্তার সংযোগ ঘটানো হয়েছে। সেতুর দুই পাশে ভটভটি ও রিকশা-ভ্যানগাড়ি থেকে যাত্রীরা নেমে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। অনেকেই মালামাল গাড়ি থেকে নামিয়ে মাথায় নিয়ে সেতু পার হচ্ছেন। ওপারে গিয়ে আবার গাড়িতে তুলছেন।
পাছপয়লা গ্রামের মাছের খামারি মজিবর রহমান মেলান্দহ থেকে ১৪ বস্তা মাছের খাবার কিনেছেন। তিনি বললেন, ‘গাড়িভাড়া তো বেশি লাগলই। ছেলে আর আমি মাথায় করে বস্তাগুলো এই পারে নিয়া আইলাম। সেতু ভাঙায় সবারই যাতায়াতে খুবই কষ্ট হইতাছে।’
ব্যবসায়ী সহিদুর রহমান জানান, পাছপয়লা সেতুর কারণে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
মাহমুদপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুস ছালাম প্রথম আলোকে জানান, পাছপয়লা সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সর্বস্তরের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাজারে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক পাট, ধান ও অন্যান্য পণ্য ওঠানো-নামানো করত। বর্তমানে পণ্যবাহী কোনো মোটরযান এ বাজারে ঢুকতে পারছে না। পণ্য পরিবহনে আট কিলোমিটার সড়কের স্থলে বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এতে ট্রাকপ্রতি দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। স্থানীয় সাংসদ, এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেতুটি নির্মাণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে জানান, এ ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগে পাছপয়লা সেতুটি এখন প্রধান সমস্যা।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এলজিইডির মেলান্দহ উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন জানান, দেড় মাস আগে সেতুর স্থানে ৪৫ মিটার দীর্ঘ একটি নতুন সেতু অথবা সেতুর পরিবর্তে ওই স্থানে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নিচু পাকা রাস্তা নির্মাণের দুটি প্রকল্প এলজিইডির সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখনো প্রকল্প দুটির কোনোটি অনুমোদন পায়নি।
ইসলামপুরের সাংসদ ফরিদুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, পাছপয়লা সেতু প্রকল্পটি যাতে জরুরি ভিত্তিতে পাস হয়, সে জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.