চট্টগ্রাম বন্দর এনসিটি অপারেটর নিয়োগ ইস্যুতে মহিউদ্দিন ও লতিফ মুখোমুখি

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে (এনসিটি) অপারেটর নিয়োগ ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ লতিফ। একদিকে বন্দর রক্ষা পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছেন মহিউদ্দিন।


অপরদিকে এমএ লতিফ বলছেনÑ স্বার্থান্বেষী একটি মহল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতিকে সামনে রেখে বন্দরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, অপারেটর নিয়োগের দরপত্রে অংশগ্রহণকারীরা যেখানে দরপত্রের শর্ত নিয়ে কোন আপত্তি তোলেনি, সেখানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর আপত্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি বন্দরের বর্তমান উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে এবং গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে যত দ্রুত সম্ভব এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগ দাবি করেন।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্দেশে এমপি লতিফ আরও বলেন, আমাদের সরকারের মেয়াদের এখন শেষ পর্যায়। দলের নেতা হয়ে এ সময়ে বন্দরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবেন না। স্বার্থান্বেষীরা আপনাকে ব্যবহার করছে। তারা আপনার ভাবমূর্তি এবং আমাদের দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ করছে। সুতরাং দেশের স্বার্থে আল্লাহরওয়াস্তে এমন আন্দোলন থেকে বিরত থাকুন।
শুক্রবার চিটাগাং পোর্ট ইউজার্স ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমএ লতিফ এমপি। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মানববন্ধন কর্মসূচীর ঠিক পরদিন একই ইস্যুতে ডাকা হয় এ জরুরী বৈঠক। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েসনসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। সভায় সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর এ অবস্থানকে আত্মঘাতী হিসেবে উল্লেখ করেন বক্তারা।
এমএ লতিফ এমপি বলেন, প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এনসিটি নির্মিত হওয়ার বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হলেও সেখানে অপারেটর নিয়োগ হয় না। বর্তমানে অপারেটর নিয়োগের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু দরপত্রের শর্ত শিথিল করে একটি বিশেষ কোম্পানিকে কাজ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। কিন্তু প্রশ্ন হলোÑ যারা এ দরপত্রে অংশগ্রহণ করছে তাদেরই কোন অভিযোগ নেই। ৫টি কোম্পানি দরপত্রের সিডিউল ক্রয় করে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই টেন্ডার জমা দিয়েছে। যদি তাদের মনে হতো যে, শর্তের কারণে নিশ্চিতভাবেই কাজটি পেয়ে যাচ্ছে একটি বিশেষ কোম্পানি তাহলে তারা দরপত্র জমা দিত না। এনসিটিতে যদি ঐ একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমাদান থেকে বিরত থাকত তাহলে আমিও মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলনে শরিক হতাম। যদি দরপত্রে অংশগ্রহণকারী বাকি চার কোম্পানির আপত্তি না থাকে তাহলে তৃতীয় কোন পক্ষের আপত্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রোডাকটিভিটি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এখন জবাবদিহিতামূলক একটি প্রশাসন রয়েছে। আমরা চাই উৎপাদনশীলতা ও গতিশীলতা বজায় থাকুক। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থেই চট্টগ্রাম বন্দর অস্থিতিশীল করা যাবে না। তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে যতদ্রুত সম্ভব এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগের অনুরোধ জানান। বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ শতাংশ হারে গ্রোথ হচ্ছে। আমরা গ্লোবাল পোর্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। সুতরাং এমন কোন কাজ আমরা সমর্থন করতে পারি না যাতে বন্দরের উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাইফ পাওয়ারটেক নামে মাফিয়া কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য টেন্ডারের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মাফিয়াদের সঙ্গে আঁতাত করে কাজ করছে। তাদের ছাড়া হবে না। পর্দার অন্তরালে যারা কাজ করছেন তাদের চিহ্নিত করেছি। সাবধান হয়ে যান। নয়ত অবাঞ্ছিত ঘোষিত হবেন। এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগ ইস্যুতে আজ শনিবার এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছেন। সেখান থেকে তিনি কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.