সাক্ষাৎকারে রাশেদ খান মেনন- মন্ত্রিসভা গঠনে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় হয়েছে by সেলিম জাহিদ

ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, মন্ত্রিসভা গঠনে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় হয়েছে। মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি নিয়মের ব্যত্যয়ের কথা বলেননি। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ব্যত্যয়ের কথাই বলেছেন।


গতকাল রোববার প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশেদ খান মেনন এই ব্যাখ্যা দেন। তবে এ নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিতর্কে জড়াতে চান না।
প্রথম আলো: আপনি বলেছেন, মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব যথাযথভাবে আসেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। অতীতেও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কোনটা সঠিক?
মেনন: মন্ত্রিপরিষদের সচিব শপথ নিতে ডাকবেন, এটা জানা বিষয়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিতর্কে যেতে চাই না। আমি কোনো নিয়মের ব্যত্যয়ের কথা বলিনি, বলেছি রাজনৈতিক ব্যত্যয়ের কথা। কারণ, সংসদীয় রীতিতে মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে দল বা যদি জোট থাকে, জোটের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এটা যদি মন্ত্রিসভা গঠনের প্রথম পর্যায়ে হতো, তা হলে কোনো কথা বলতাম না।
পরবর্তীকালে মন্ত্রিসভায় আমাদের কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এ নিয়েও কোনো দিন প্রশ্ন করিনি। ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমন্ত্রণ পেলে আমরা মন্ত্রিসভায় যোগ দেব। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বলেছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভায় ওয়ার্কার্স পার্টির অংশগ্রহণের কোনো অবকাশ নেই। এটা কিন্ত আমরা গোপন রাখিনি, আপনাদের পত্রিকাতেই বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। এরপর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম। যাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। আমি নিশ্চিত হয়েছি, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অবগত হয়েছিলেন। সুতরাং চার বছর পর এসে নতুন করে যখন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির বিষয় আসে, তখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিল; ১৪ দলে বিষয়টি আলোচনা করা। আমি বা আমার পার্টি, অথবা ১৪ দলের সঙ্গে কিন্তু কোনো আলোচনা হয়নি।
প্রথম আলো: মন্ত্রিসভার এই রদবদলকে কীভাবে দেখেন?
মেনন: মন্ত্রিদের দপ্তর রদবদল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে সংসদে এবং বাইরে তীব্র সমালোচনা ছিল। আশা করতে পারি, হয়তো এটা আরও দক্ষভাবে পরিচালিত হবে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। কার্যত, দুই-তিনটা মন্ত্রণালয় একজনের কাছে ছিল, সেগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন মন্ত্রীরা কী করেন, সেটা দেখার বিষয়। সংবিধান অনুযায়ী কার্যত সময় আছে আর মাত্র ১৩ মাস। এই সময়ে একেকজন মন্ত্রী নতুন করে খুব একটা কিছু করতে পারবেন বলে খুব আশা করছি না। তবে, আমি তাঁদের সাফল্য কামনা করি। তাঁরা বদলি খেলোয়াড় হয়ে গোল করার কথা বলেছেন। যদি গোল করতে পারেন, আমি আনন্দিত হব।
প্রথম আলো: সরকার বলছে, দেশে কোনো সংকট নেই। আপনি দেশের অবস্থা কী দেখেন?
মেনন: সরকারের ভেতরে যদি এ ধরনের উপলব্ধি হয়, তা সঠিক বলে মনে করি না। তবে, সরকারের পতনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিরোধী দলও আন্দোলন করে কিছু একটা ঘটাতে পারবে, এমনও মনে করি না। তবে পদ্মা সেতুর মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি থেমে যাওয়াটা নিশ্চয় বড় ধরনের সংকট। ব্যাংকিং খাতে হলমার্কের কেলেঙ্কারির পর অন্য ব্যাংকগুলোতেও কেলেঙ্কারির ঘটনা বেরিয়ে আসছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ব্যাংকিং-ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। অর্থমন্ত্রী যদি এটাকে সংকট বলেন, আমি কেন বলব না? আর, পুঁজিবাজার মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে কেবল কিছু লোকের জন্য, এটা কি সংকট নয়?
প্রথম আলো: আগামী নির্বাচন নিয়ে অনেকে অনিশ্চয়তার কথা বলেন। আপনি কী মনে করেন?
মেনন: এটা ঠিক, নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের একটা অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। যদি এমন হতো, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী নির্বাচন নির্বিঘ্নে হয়ে যাচ্ছে, তা হলে আমি সবচেয়ে খুশি হতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন প্রস্তাব করেন, অন্তর্বর্তী সরকারে বিরোধী দল থেকেও লোক দেওয়া যেতে পারে। তখন বলা যায়, এটা নিয়ে বিবাদ-বিসম্বাদ রয়ে গেছে। হয়তো নির্বাচন হয়ে যাবে, কিন্তু সেটা কতখানি বিশ্বাসযোগ্য হবে সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ বিষয়গুলোর প্রশ্নে বাংলাদেশ এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। তা ছাড়া, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু এটা করলে অনেক সংকটের জন্ম দেবে।
প্রথম আলো: মহাজোটে থাকছেন তো?
মেনন: এই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির যে চেষ্টা, তার বিপরীতে ১৪ দলের ঐক্য একটা বড় ধরনের ঢাল বলে মনে করি। এটাকে কেবল বজায় রাখাই নয়, কার্যকর করা এখন রাজনৈতিক কর্তব্যের একটা অংশ। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীকে আবারও ১৪ দলের সভা ডাকার আহ্বান জানাচ্ছি। মহাজোট কেবল আমাদের ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে জাতীয় পার্টির ওপর। আমি আশা করি, জাতীয় পার্টিও মহাজোটে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.